ব্যক্তিত্ব-ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা

ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা প্রথম জাপানি লেখক, যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন (১৯৬৮)। তাঁর জন্ম জাপানের ওসাকার একটি বিখ্যাত ডাক্তার পরিবারে। অথচ কাওয়াবাতা ছিলেন আজীবন রুগ্ণ চেহারার মানুষ।
জন্মের পাঁচ বছর পূর্তির আগেই পরিবারে মৃত্যুর বিভীষিকা তাঁকে ধীরে ধীরে নিঃসঙ্গ করে ফেলে। চার বছর বয়সেই তিনি অনাথ হয়ে পড়েন। দাদা-দাদির কাছে থেকে বেড়ে ওঠার পথে ১৫ বছর বয়সে হারান তাঁদেরও। এক বড় বোন ছিলেন। তাঁকে নিয়ে যান তাঁর এক খালা। তিনিও বাঁচেননি বেশি দিন, মাত্র ১০ বছর বয়সে মারা যান বোনটি। পিতৃপক্ষের সবাইকে হারিয়ে তাঁর আশ্রয় হয় মাতৃকূলের স্বজনদের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় তাঁর সাহিত্য চিন্তা ও সাহিত্যশিল্পের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ পায়। তাঁর থিসিসের শিরোনাম ছিল 'জাপানি উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস'। গ্র্যাজুয়েশন পূর্ণ করে কিছু নতুন সাহিত্যিক বন্ধুকে নিয়ে একটি নতুন সাহিত্য ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন 'দ্য আর্টিস্টিক এজ'। ম্যাগাজিনটি জাপানি সাহিত্যে নতুন বার্তা নিয়ে আসে। বিরাট ধাক্কা লাগে অগ্রজদের স্থবির সাহিত্য বৃত্তে। সে সময়ের জাপানি সাহিত্য ছিল ইউরোপিয়ান কিউবিজম, ইম্প্রেশনিজম ও দাদাইজম প্রভৃতি সাহিত্য-আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত; যা 'শিল্পের জন্য শিল্প' হিসেবে প্রতিপন্ন হয়েছিল।
কাওয়াবাতা পরিচিত হতে শুরু করেন তাঁর কিছু ছোটগল্পের মাধ্যমে। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'স্নো কান্ট্রি' লিখতে শুরু করেন ১৯৩৪ সালে এবং তা অংশবিশেষ করে ছাপা হতে থাকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। উপন্যাসের থিম প্রেম, শহুরে ও গ্রামীণ প্রেমিক-প্রেমিকা। উপন্যাসটি বয়ে নিয়ে আসে তাঁর জন্য খ্যাতি। পাশাপাশি সেটি ক্ল্যাসিক সৃষ্টির মর্যাদা লাভ করে।
১৯৭২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে। মনে করা হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার পেছনে ছিল একাধিক কারণে নৈরাশ্য। আজীবন রুগ্ণ শরীর, ব্যর্থ প্রেম ও স্বজন হারানোর পাশাপাশি গভীর মৃত্যুচিন্তা।
লুৎফর রহমান রনো

No comments

Powered by Blogger.