গ্রাম পরিকল্পনা কর্মসূচি by আকরাম খান

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতিপাদ্য যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা, তেমনি ভূমি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রাম পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দিতে হবে। অশিক্ষা-কুশিক্ষা ও গোঁড়ামির কারণে আইনের দ্বারা জন্মনিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন করা কঠিন হলেও আইন করে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে ভূমি নিয়ন্ত্রণ করা মোটেই সম্ভব নয়।


দ্রুত বাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রাম পরিকল্পনা আইন পাস করে যথাযথ প্রয়োগ করা না গেলে স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়াবে দেশের মোট ভূখণ্ডের মাত্র ২০ শতাংশ। হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম হলে ভূমি অনাবাদি হওয়ার হারও কম হবে। তবে সেটি হারাহারি মতে আনুপাতিক পরিমাণ রক্ষা করতে সক্ষম হবে না। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি ১১ সেকেন্ডে একটি শিশু জন্ম নেওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২৬ শতাংশ। যোগাযোগ অবকাঠামো, শিল্পায়ন, নগরায়ন ও আবাসিক খাতে প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে আবাদি জমির ঘাটতি হচ্ছে। তবে এ কথা সত্য যে, তবুও ১০০ বছর পর আবাদি জমির পরিমাণ শূন্য হবে না। তার আগেই প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে দ্বিধা করবে না। সেদিনের অপেক্ষা না করে পরিকল্পিত পরিবেশ ও জীবনধারণের জন্য মৃত্তিকা সম্পদ রক্ষা করা অত্যাবশ্যক। আধুনিক জীবনধারায় শিল্পজাতসামগ্রী অনিবার্য বিধায় প্রধানত শিল্প খাতে দ্বিতীয়ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও প্রসারে অধিক মাত্রায় আবাদি জমি হ্রাস পাবে। একটু সাবধানী হলে সেগুলোকে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর ও কম উৎপাদনশীল অফসলি জমিতে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মূলত গ্রাম এলাকায় আবাদি জমি হ্রাসের চিত্র ভয়াবহ। সঠিকভাবে জরিপ করলে আবাদি ভূমি হ্রাসের পরিমাণ সেখানে দ্বিগুণ। প্রতিনিয়ত যথেচ্ছাভাবে যেখানে-সেখানে বাড়ি নির্মাণ করায় গ্রামের পরিধি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। কোথাও কোথাও নতুন নতুন গ্রাম সৃষ্টি করে বসবাসের জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৪ গুণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত অথবা পতিত ভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে।
অপরিকল্পিতভাবে খেয়ালখুশিমতো তার প্রসার এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূমির অপব্যয় বা ক্ষতিগ্রস্ত করা থেকে বিরত রাখতে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা খুব কঠিন নয়। সর্বপ্রথম বিদ্যমান গ্রামগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা দরকার। গ্রামের বাড়িগুলোর অবস্থান অনুযায়ী জনচলাচল ও ফসল পরিবহনের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে সবার জন্য সুবিধাজনক নকশা তৈরি করে মাঠ পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হবে। কিন্তু গ্রামের নির্ধারিত পেরিফেরির বাইরে কাউকে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যাবে না। গ্রাম থেকে গ্রাম, পাড়া থেকে পাড়ায় যেসব কাঁচা-পাকা সংযোগ সড়ক বিদ্যমান তার পাশের ফাঁকা স্থানগুলো নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করে দিতে হবে। পারিবারিক বিভাজনের কারণে ভূমি বাটোয়ারার বিষয়টি সম্মানজনকভাবে নিষ্পত্তি করে অধিকসংখ্যক পরিবারের বসবাসের সুযোগ করে দিতে হবে। এভাবে পরিকল্পিত গ্রামগুলোতে আধুনিক জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা যেমন_ বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, বন্যা প্রতিরোধ, পানি নিষ্কাশন সুবিধা ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। নিয়ন্ত্রিত গ্রামগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, অডিটোরিয়াম ও অন্যান্য সমষ্টিগত চাহিদার পরিকল্পনা গ্রহণ করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রামের সারিবদ্ধ বাড়িগুলোর সামনে সরকারি অথবা সঙ্গতি অনুসারে ব্যক্তিবিশেষকে দিয়ে পুকুর খনন এবং প্রত্যেক বাড়ির পেছনে পর্যাপ্ত গাছপালা ও ঝোপজঙ্গল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
আমরা মনে করি, বাড়ি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি জন্মনিয়ন্ত্রণের সম্পূরক শক্তিতে পরিণত হবে। গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অশিক্ষা ও ধর্মান্ধতা কারও মনে বাসা বেঁধে থাকার দীর্ঘ সময় থেকে বাধ্য হয়ে বিতাড়িত হবে। এসবের সঙ্গে অর্থনৈতিক সক্ষমতার সঙ্গতির বিষয়টিকে উল্লেখ না করলেই নয়।
শুধু শহরে নয়, গ্রামেও বসবাসের প্রয়োজনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যতই কম হোক না কেন, বহুতল বাড়ি নির্মাণের বিকল্প থাকবে না। সুতরাং নির্মাণসামগ্রীর মূল্য গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় থাকতে হবে। কম খরচে গ্রামাঞ্চলে বহুতল বাড়ি নির্মাণ এবং অল্প জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবারের অধিক পরিমাণ সদস্যদের স্থান সংকুলানের কারিগরি সহায়তা প্রদান করতে হবে।
মধুখালী, ফরিদপুর
akramkhan.mdk@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.