ইউনূস প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী-অবাঞ্ছিত মন্তব্য নয়

গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর প্রতিষ্ঠাতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে যে অভিযোগ করেছিলেন, তা মাত্রায় ছিল গুরুতর। তাৎক্ষণিকভাবে অনেকের কাছে মনে হয়েছিল এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই অনভিপ্রেত।


অর্থমন্ত্রীর অভিযোগে বলা হয়, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ যে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেই, তার মূলে অধ্যাপক ইউনূসের বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অনেক ভালো ভালো কাজ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের কোথাও তা গুরুত্ব পায় না। এর দায়ও চাপানো হয় নোবেল বিজয়ীর ওপর। তিনি আরও বলেন, এটা তাকে বলেছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আরেক অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশের পরম সুহৃদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্বসহকারে প্রকাশ ও প্রচার পায়। একদিন যেতে না যেতেই অর্থমন্ত্রী নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসেন। ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ জানিয়ে দেন, অর্থমন্ত্রীর অভিমত একান্তই ব্যক্তিগত এবং এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নেই। এদিকে অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেন, আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে ব্যাংককে তার সাম্প্রতিক সাক্ষাতের সময় ইউনূস সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। এর পর অর্থমন্ত্রীও তার আগের বক্তব্য থেকে ইউটার্ন করে বলেন, অধ্যাপক ইউনূসকে নিয়ে তার মন্তব্য ব্যক্তিগত এবং কোনোভাবেই অমর্ত্য সেনের নয়। শনিবার অর্থমন্ত্রী এক বিবৃতিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে বন্ধু ও শ্রদ্ধেয় মানুষ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে নিবেদিত বলে অভিহিত করেন। তাকে 'নয়নের মণি' বলতেও তিনি দ্বিধা করেননি। অধ্যাপক ইউনূস হয়তো সমালোচনার ঊধর্ে্ব নন। দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বেশির ভাগের অভিমত এই, তিনি অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। তাকে নিয়ে বাংলাদেশ অবশ্যই গর্ব করতে পারে। অর্থমন্ত্রী সর্বশেষ বিবৃতিতে সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন। এ উপলব্ধি স্থায়ী হবে তো? মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নোবেল বিজয়ী এই সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষটির ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন মহল যেভাবে অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য অস্বস্তিকর অবস্থার জন্য ইউনূসকে দায়ী করা যেন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য কোনো প্রমাণের দরকার নেই, দেশ-বিদেশে কারও কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে কি-না, সেটা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই। আরও দুর্ভাগ্যজনক, এতে যে দেশের মঙ্গল নেই এবং দলের জন্যও তা ক্ষতির কারণ_ সেটা ঠাণ্ডা মাথায় কেউ ভেবে দেখেন না। এই গুণী মানুষটির যথাযথ মূল্যায়ন এবং বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব ও যোগাযোগকে দেশ ও দশের কল্যাণে কাজে লাগাতে আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া হবে_ সে প্রত্যাশা দেশবাসীর। গ্রামীণ ব্যাংকের মতো যে আদর্শ প্রতিষ্ঠানটি তিনি গড়ে তুলেছেন, তা কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে তার পরামর্শ গ্রহণে কেন দ্বিধা, তা বোধগম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.