পবিত্র কোরআনের আলো-ইমানের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা প্রলুব্ধকরণ গ্রহণযোগ্য নয়

৯৮। ফালাওলা-কা-নাত ক্বারইয়াতুন আ-মানাত ফানাফাআ'হা- ঈমা-নুহা- ইল্লা- ক্বাওমা ইঊনুছ্; লাম্মা- আ-মানূ কাশাফ্না- আ'নহুম আ'যা-বাল খিয্য়ী ফিল হাইয়া-তিদ্ দুনইয়া- ওয়ামাত্তা'না-হুম ইলা- হ্বীন। ৯৯। ওয়ালাও শা-আ রাব্বুকা লাআ-মানা মান ফিল আরদ্বি কুল্লুহুম জামীআ'-; আফাআন্তা তুক্রিহু ন্না-ছা হাত্তা- ইয়াকূনূ মু'মিনীন।


১০০। ওয়ামা- কা-না লিনাফ্ছিন আন তু'মিনা ইল্লা- বিইযনি ল্লা-হি; ওয়াইয়াজআ'লুর্ রিজছা আ'লা ল্লাযীনা লা-ইয়া'কি্বলূন। [সুরা : সূরা ইউনূস, আয়াত : ৯৮-১০০]

অনুবাদ
৯৮. তবে কোনো জনপদ এমন কেন হলো না যে, তারা এমন একসময় ইমান আনত যখন ইমান তাদের (জাগতিক জীবনে) উপকার করতে পারত? হ্যাঁ, ইউনূসের কওম এ রকম ছিল। তারা যখন ইমান আনল, তখন তাদের ওপর থেকে লাঞ্ছনাকর শাস্তি্ত আমি তুলে নিলাম এবং পার্থিব জীবনে তাদের কিছুকাল সুখে-শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দিলাম।
৯৯. আল্লাহ যদি চান, তবে এমন হতে পারে যে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ ইমানের ছায়াতলে সমবেত হতে পারে। তা হলে আপনি কি মানুষকে জবরদস্তি করবেন ইমান আনার জন্য?
১০০. এটা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়, আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতিরেকে মুমিন হয়ে যাবে। (যৌক্তিক কারণটা এই যে) যারা তাদের বুদ্ধি কাজে লাগায় না আল্লাহ তাদের ওপর জরাজীর্ণতা চাপিয়ে দেন। অর্থাৎ বেকুবরা নিজেরাই তাদের দুর্ভাগ্য সৃষ্টি করে।

ব্যাখ্যা
৯৮ নম্বর আয়াতে কিছুটা আফসোসের সুরে বলা হয়েছে যে, মানুষ সাধারণত সময়মতো সত্যকে গ্রহণ করে না এবং আল্লাহর ওপর ইমান আনে না, যখন ইমান আনলে জাগতিক জীবনে তাদের জন্য কল্যাণ আসতে পারত। এ দুনিয়ার প্রায় সব জাতির মানুষেরই স্বভাব, সত্যকে যথাসময়ে গ্রহণ করতে না পারা। ইমান আনার সময়সীমার ব্যাপারে আগের আয়াতে ফেরাউনের প্রসঙ্গ ধরে বলা আছে মুমূর্ষু অবস্থায় বা শুধরানোর সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পর ইমান আনার কোনো মূল্য নেই। এ প্রসঙ্গে ইউনূস (আ.)-এর কওমের কাহিনী এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনূস (আ.)-এর কওম ছিল ব্যতিক্রম। তারা তাদের অবাধ্যতার কারণে আল্লাহর গজবে নিপতিত হওয়ার আগেই নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করে ইমান এনেছিল। ফলে তারা আল্লাহর গজব থেকে মুক্তি পায়, কল্যাণের পথ লাভ করে। ইউনূস (আ.)-এর কওমের ঘটনাটি ছিল এ রকম : নানা রকম অপকর্ম ও অবাধ্যতার কারণে তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহর শক্তির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তাঁর কওম তাৎক্ষণিক সে কথা শুনেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি তাঁর জনপদ ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি চলে যাওয়ায় তাঁর কওমের লোকেদের বোধোদয় হলো। তারা সত্যটা বুঝতে চেষ্টা করল এবং ইমান আনল। তারা ইউনূস (আ.)-কে খোঁজাখুঁজি করেও পেল না। কিন্তু নিজেরা সত্যের পথে চলে এলো। ইউনূস (আ.)-এর কাহিনী সুরা সাফফাতে অনেকটা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে, সামনে তা আলোচিত হবে।
৯৯ নম্বর আয়াতে ইমানের ব্যাপারে যে জোর-জবরদস্তির সুযোগ নেই, এ বিষয়টি বেশ জোরালো উপস্থাপন করা হয়েছে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে দুনিয়ার সব মানুষকে ইমানদার বানাতে পারতেন। কিন্তু সে ইমানের তেমন কোনো মূল্য হতো না। মূল্য আছে সেই ইমানের, যা মানুষ স্বেচ্ছায় স্বাধীনভাবে গ্রহণ করে। কাউকে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ইমান আনতে বাধ্য করা বা প্রলোভন দেখিয়ে উদ্বুদ্ধ করা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটা ইসলামের নীতি নয়।
১০০ নম্বর আয়াতে একটা খুব তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলা হয়েছে। যারা বুদ্ধি কাজে লাগায় না তাদের ওপর আল্লাহ জরাজীর্ণতা চাপিয়ে দেন। অর্থাৎ ইমান আনা, সত্যের অনুসন্ধান করা এবং কল্যাণের পথ তৈরি করা সবই বুদ্ধি কাজে লাগানোর ওপর নির্ভর করে। যে জাতি বুদ্ধি করে কাজে লাগাতে পারে না তারা জরাজীর্ণতা ও কলুষ-কালিমায় নিমজ্জিত হয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.