কুয়াকাটায় জমি জালিয়াতি-স্বপ্নের আবাসনে দুঃস্বপ্নের হাতছানি

কুয়াকাটার বেলাভূমিতে স্বপ্নের আবাসন গড়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যত তা হচ্ছে দুঃস্বপ্নের হাতছানি। বুধবার সমকালে 'কুয়াকাটায় জমি নিয়ে জালিয়াতি' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক শ্রেণীর ভূমিদস্যু সরকারি খাসজমির পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিও জবরদখল করে নিচ্ছে।


এই অবৈধ ব্যবসার কারণে দখল-পাল্টা দখলের ঘটনা ঘটছে এবং সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের শহর হয়ে উঠছে অশান্ত। আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কাও করা হচ্ছে। প্রতিবেদনের প্রভাবশালীদের দাপটে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশের সরকারের হাত কত লম্বা এবং যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তা কত সক্ষম হতে পারে তার অনেক নজির রয়েছে। কুয়াকাটা সৈকত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত। কুয়াকাটার গঙ্গামতি-কাউয়ার চর এলাকা নিয়ে সরকারের এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ভূমিদস্যুরা যেন খাসজমি এবং প্রকল্পের সম্ভাব্য আওতায় আসতে পারে এমন জমি জবরদখল করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করার প্রধান দায় উপজেলা প্রশাসনের ওপরই বর্তায়। জেলা প্রশাসন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সক্রিয়তাও প্রত্যাশিত। সংবাদপত্র ও বেতার-টেলিভিশনে স্বপ্নের আবাসনের হাতছানি দিয়ে নিয়মিত বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এতে বিনিয়োগ করা হলে কী বিপুল অঙ্কের লাভ ঘরে উঠে আসবে, সে হিসাবও দেওয়া হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন কেন তা উপেক্ষা করে চলছে? প্রকৃতির অকৃপণদানে ধন্য কুয়াকাটায় অর্ধশতাধিক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ভূমি গ্রাসে মত্ত হয়ে উঠেছে, সে খবর তাদের অজানা থাকার কথা নয়। এ ধরনের স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা দেশের সর্বত্রই ঘটে, কুয়াকাটাও ব্যতিক্রম নয়। রিয়েল এস্টেট কোম্পানি তাদের সহজেই ম্যানেজ করতে পারছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন ও ভূমি মন্ত্রণালয় কঠোর মনোভাব গ্রহণ করলে এ ধরনের যোগসাজশ ভেঙে ফেলা সম্ভব। কুয়াকাটায় ভূমিদস্যুদের রুখে দাঁড়াতে এর প্রয়োজন রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত এবং আবাসন সুবিধা গড়ে উঠলে দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুরা কুয়াকাটাকে বছরজুড়েই মুখরিত করে রাখবেন। ভূমিদস্যুদের কঠোরহস্তে দমনের পাশাপাশি সরকারকে এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। এজন্য বেসরকারি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত এবং সেজন্য সরকারের তরফে নানা সুবিধা প্রদান করতে হবে। এর অর্থ কোনোভাবেই ভূমিদস্যুতাকে উৎসাহ প্রদান করা নয়। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন আবাসন ব্যবসায়ীদের অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করা হচ্ছে না। এরপর নতুন নির্দেশ গিয়েছে : জমির অনাপত্তি নেওয়া অংশেই কেবল আবাসন প্রকল্পের কাজ চালানো যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শিথিলতা কাম্য নয়। বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রেও এমন নির্দেশ যেতে পারে, যার ফলে গণমাধ্যমকে অবশ্যই প্রকল্প এলাকার বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি দেখাতে হবে। স্থানীয় ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মীদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। বেড়ায় ক্ষেতের ফসল খেলে সর্বনাশের কিছু বাকি থাকে না। বাংলাদেশে সীমিত পর্যটনের এলাকার অন্যতম কুয়াকাটা। কিছু লোকের অন্যায়-অনিয়ম-লোভের পরিণামে তা যেন অভিশাপ হয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য আসুন সবাই যত্নবান হই।
 

No comments

Powered by Blogger.