সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি-স্মৃতি সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে

কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বসতবাড়িতে জামায়াতে ইসলামী ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। ১৯৫১ সালে সুচিত্রা সেনের পরিবারের সব সদস্য ভারতে চলে যান।


তাঁদের বাড়িটি তখন থেকে সরকারের হেফাজতে থাকে। পাবনার জেলা প্রশাসন বাড়িটি অধিগ্রহণ করে এবং এটি ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯৮৭ সালে এরশাদ সরকারের আমলে স্থানীয় কিছু জামায়াত নেতা সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়িটি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে অর্পিত সম্পত্তি দেখিয়ে একসনা লিজ নেন। এটা অনুমেয়, ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতে অবশ্যই ভূমি অফিসের সহায়তা নিতে হয়েছে। এরপর গোপনে লিজ নিতে উৎকোচ দিতে হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমেই জামায়াত নেতারা বাড়িটি লিজ নিতে পেরেছেন। অন্য কোনো প্রভাবশালী দলের নেতারাও সুযোগ পেলে যে একই কাজ করতেন তা হলফ করে বলা যায়।
বাড়িটি সুচিত্রা সেনের পৈতৃক সম্পত্তি- অন্তত এটুকু বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনের এ বাড়িটি রক্ষায় সতর্ক ভূমিকা থাকা উচিত ছিল। এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীর পৈতৃক বাড়ি নিয়ে দখলবাজির ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জাকর। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দুর্নীতির মাধ্যমে সুবিধা গ্রহণকারী দুই পক্ষের কাছেই দেশ ও জাতির মর্যাদা গুরুত্বহীন। তাই সচেতন নাগরিকদের ভূমিকা জরুরি হয়ে পড়ে এসব ক্ষেত্রে; যেটা ঘটেছে সুচিত্রা সেনের বাড়ি নিয়েও। অনেক দেরিতে হলেও এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২২ জুন পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ইমাম গাযযালী ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের ইজারা বাতিল করেন এবং ৮ জুলাই ২০০৯-এর মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির দখল ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেন। নোটিশ পেয়ে গাযযালী ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা লিজ বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট করলে সেটি খারিজ হয়। অতঃপর তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় বাড়িটি জামায়াত নেতাদের দখলেই রয়ে গেছে এখনো। তাঁরা সেখানে যে নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছেন, সে নামের উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে পাশেই। তাঁরা মূল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই এটি যুক্ত না করে শুধু বাড়িটি দখলের মতলবে ওই নামে আরেকটি কিন্ডারগার্টেন স্থাপন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি করতে গিয়ে মূল বাড়ির অনেক গাছপালা উজাড়সহ অবকাঠামোগত পরিবর্তন করেছেন।
এ ছাড়া একই এলাকায় 'সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ' নামে একটি সংগঠন রয়েছে। যদি সুচিত্রা সেন বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকে, যদি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের উৎসাহ-উদ্যোগ থাকে তাহলে মামলা নিষ্পত্তির পর এ সংগঠনের অগ্রাধিকার থাকা উচিত এই সম্পত্তি সংরক্ষণের স্বার্থে। সুচিত্রা সেনের পারিবারিক স্মৃতি সংরক্ষণে প্রশাসনিক পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

No comments

Powered by Blogger.