ডেসটিনির অবৈধ লেনদেন বন্ধের সুপারিশ by নিখিল ভদ্র

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ডেসটিনিসহ বিভিন্ন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কম্পানির অবৈধ ব্যাংকিং এবং লেনদেন বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া এমএলএম কম্পানি আইন দ্রুত জাতীয় সংসদে উত্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


আসন্ন রমজানের প্রস্তুতির জন্য সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। কমিটির বৈঠকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান এবং এর পেছনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাশেম। কমিটির সদস্য তহুরা আলী, মো. আবুল কাশেম, রুমানা মাহমুদ ও শেখ আফিল উদ্দিন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে রমজান সামনে রেখে ১৬টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কমিটির পক্ষ থেকে এখন থেকেই মন্ত্রণালয়কে কড়া নজরদারির সুপারিশ করা হয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন, পাম অয়েল, চিনি, চাল, ডাল, গম, ডিম, ছোলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, লবণ ও গুঁড়ো দুধ। কমিটির পক্ষ থেকে এসব পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ নিয়ে কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে, সে জন্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, বিশেষ করে ভোজ্য তেলের দাম না কমার এবং ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণ উদ্ঘাটনে মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাশেম বলেন, '১৭টি এমএলএম কম্পানি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করছে। তারা অবৈধ ব্যাংকিংয়ের সঙ্গেও যুক্ত। তিনি জানান, এমএলএম কম্পানি আইনটি কেন এখনো সংসদে উত্থাপন করা হয়নি তা মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
আবুল কাশেম আরো জানান, ইন্টারনেটের মাধ্যমেও বেশকিছু এমএলএম কম্পানি সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বললে ব্যবস্থা : অর্থমন্ত্রী
ডেসটিনি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বললে ব্যবস্থা নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক প্যাসক্যাল লামির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ব্যাংকিংয়ের অভিযোগ সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, 'আমি কিছু জানি না। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কম্পানির বিষয় দেখছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু বললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

ডেসটিনি গ্রুপে প্রভাবশালীরা যুক্ত বলে সরকার ব্যবস্থা নিতে অনীহা প্রকাশ করছে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'একজন জেনারেল সেখানে আছেন বলে আমি জানি।' ডেসটিনি গ্রুপের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম যুক্ত রয়েছেন কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমি জানি না।'

ডেসটিনি কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন
বরিশাল থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে তিনটি জাতীয় দৈনিকের একাধিক সংখ্যায় অগ্নিসংযোগের পর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ধারাবাহিকভাবে ডেসটিনির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ডেসটিনির বিনিয়োগকারীরা শহরের প্যারারা রোডের নিজস্ব কার্যালয়ের সামনে পত্রিকা তিনটির কপিতে অগ্নিসংযোগ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শহরের প্যারারা রোডের ডেসটিনির কার্যালয়ের সামনে রবিবার বিকেল আনুমানিক সোয়া ৪টার দিকে ৮-১০ জন যুবক প্রথম আলো, সমকাল ও যুগান্তরের বেশ কয়েকটি কপিতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা ডেসটিনির পক্ষে স্লোগান দিয়ে কার্যালয়ে ঢোকে। এ ঘটনার কিছু সময় পরে কোতোয়ালি থানার একটি টহলদল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এর আগেই কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কর্মীরা দ্রুত সটকে পড়েন।
প্রায় ১৮-২০ জনের একটি পুলিশ দল ডেসটিনির কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেয়। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬টা) তারা কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছিল। ওই সময়ে সাংবাদিক আর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ছাড়া কাউকে ওই কার্যালয়ে ঢুকতে কিংবা বের হতে দেওয়া হয়নি। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যায়। তবে উপপরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নর্িেদশে ঘটনাস্থলে এসেছেন তাঁরা।
ডেসটিনি বরিশাল বিভাগের সমন্বয়কারী মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে তুহিন সাংবাদিকদের বলেন, বিকেলে কে বা কারা কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি পত্রিকায় আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন কার্যালয়ের ভেতরে থাকা কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে নেন। এ ঘটনার কিছু সময় পর কোতোয়ালি থানা পুলিশের অন্তত ২০ সদস্যের একটি দল কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান নেয়। কী কারণে তারা অবস্থান নিয়েছে তাও বলছে না। কার্যালয়ে পুলিশের উপস্থিতির কারণে কর্মীরা বাইরে অবস্থান করছেন।

No comments

Powered by Blogger.