বাংলাদেশের উচিত আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো-ভারতের নদীসংযোগ প্রকল্প

২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত নদীসংযোগ প্রকল্প ‘বাস্তবায়নের’ জন্য তাগাদামূলক এক রায় দিয়েছেন। ভারতের নদী-পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, প্রতিবাদী নাগরিকসহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা এই রায়ে বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া অধিকতর উদ্বেগজনক।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের প্রধান দুটি নদীব্যবস্থা ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার পানি উজানেই টেনে নেওয়া হবে; ফলে আমাদের নদী-পানি-পরিবেশ এবং কৃষি ও অর্থনীতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। এই প্রকল্পে গঙ্গা থেকে পানি সরানোসহ ব্রহ্মপুত্র নদকে বাংলাদেশের বাইরে দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই দুটি নদীব্যবস্থা থেকেই বাংলাদেশের বেশির ভাগ নদীপ্রবাহের জন্ম, যার পানি ও পলিতেই বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে ও শস্যশ্যামল থেকেছে। এ ধরনের আন্তর্জাতিক নদীর গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া কিংবা তাতে একতরফাভাবে স্থাপনা নির্মাণের অধিকার ভারতের থাকতে পারে না। বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রীও বলেছেন, ভারতের নদীসংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনবে। অর্থাৎ এটি হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এ অবস্থায় বাংলাদেশের উচিত অবিলম্বে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো। বাংলাদেশের নদী বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারতের কি ধারণা, ওই নদীগুলো ভারত সীমান্তেই শেষ হয়েছে এবং এই প্রাকৃতিক সম্পদের উৎসে কোনো পরিবর্তন করা হলে ভাটির দেশ বাংলাদেশে কোনো প্রভাবই পড়বে না?’
প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ারসহ ভারতীয় অনেক আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞও ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে বলেছেন, নদীসংযোগ প্রকল্প মারাত্মক সমস্যাজনক। এ প্রকল্প ভুটান ও নেপালের সহযোগিতা ছাড়া যেমন সম্ভব নয়, তেমনি কেরালাসহ ভারতের একাধিক রাজ্য এর সমালোচনায় মুখর। নেপাল ও ভুটানে জলাধার তৈরি করে উজানেই পানি টেনে নেওয়ার ইচ্ছা ভারতের। অথচ ওই দুই দেশের প্রতিনিধিরা বিবিসিকে বলেছেন, বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি এবং তাঁরা এই নদীগুলোকে আন্তর্জাতিক নদী হিসেবেই দেখে থাকেন।
ধারণা করি, সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণার বশে ভারত নদীসংযোগ প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে। ভারতের পানি-উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে ঘাটতি এলাকায় পানি পাঠানোই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। কিন্তু সে দেশের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, উদ্বৃত্ত পানি-অঞ্চল বলে কিছু নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে এই কথা আরও সত্য। নদীগুলো শক্তিমান রাষ্ট্র বা দক্ষ প্রকৌশলীদের ইচ্ছা বা হুকমের পরোয়া করে না। আধুনিক প্রযুক্তির জোরাজুরির প্রতিক্রিয়ায় অনেক সময় নদীগুলো ইচ্ছামতো ভাঙন চালিয়ে ও বন্যা বাধিয়ে তার শোধ নিয়ে থাকে। যেখানে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ শঙ্কিত, সেখানে নদীসংযোগ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করা ভারতের জন্যও বিবেচকের কাজ হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.