পাঠকের মন্তব্য-‘আমরা আসলেই টেনিস বল ছাড়া আর কিছু না’

দাবিটা ছিল পাঠকেরই। প্রথম আলোর অনলাইনে (prothom-alo.com) প্রকাশিত তাঁদের মন্তব্য যেন প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। পাঠকই প্রথম আলোর প্রাণ। দেশ-বিদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, খেলা, প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় তাঁরা সারাক্ষণ প্রাণবন্ত রাখেন, চিন্তার খোরাক জোগান সবাইকে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিষয়ে পাঠকদের কিছু মন্তব্য ঈষৎ সংক্ষেপিত আকারে ছাপা হলো।

বাংলাদেশের অসাধারণ জয়
ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রূপকথার জয় এসেছে ১৬ মার্চ পত্রিকা ছাপাখানায় যাওয়ার কিছু সময় আগে। দুই দিনে এ বিষয়ে মন্তব্য এসেছে পাঁচ শতাধিক।
ফয়সাল আহমেদ: দুঃখ একটু হলেও আছে...একই টুর্নামেন্টে ভারত, পাকিস্তান দুই দলকেই হারানোর সুবর্ণ সুযোগ ছিল...আশা করি বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে যাবে, ফাইনালে আমরা পাকিস্তানকে হারাব। শেবাগকে জবাব দিলাম...ইউনিসকে দেওয়া এখনো বাকি।
আবদুল করিম: ব্যক্তিগত ৪৯ রানের মাথায় থার্ড আম্পায়ারের কিছুটা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে সাকিব আউট হলেও এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের অসাধারণ এক জয় দীর্ঘদিন মনে থাকবে। ...আমরা ক্রিকেটপাগল জাতি, আজকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারব।
সৈয়দ মাহমুদ রেজা: কী লিখব বুঝতে পারছি না... ১০ হাজার মাইল দূর থেকে সাকিব, তামিম, মুশফিক, নাসিরসহ বাংলাদেশের সবাইকে ১০ হাজার কোটি আদর, দোয়া আর সালাম... সারা জীবন মনে রাখার মতো একটি দিন উপহার দেওয়ার জন্য।

বাংলায় প্রথম কোরআন শরিফ
আখতার হুসেন ১৬ মার্চ শুক্রবার অন্য আলোয় ‘বাংলায় প্রথম কোরআন শরিফ’ নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। অনলাইনে প্রবন্ধটি ব্যাপক পঠিত হয় এবং মতামতও আসে।
কাওসার লিখেছেন: এমন মহাপুরুষদের জন্ম মহান আল্লাহ সঠিক সময়েই দিয়েছিলেন, বাঙালি মুসলমানদের প্রতি তাঁদের আন্তরিকতা আর ইসলাম/পবিত্র কোরআন শরিফের কী পরিমাণ ভক্তি আর সম্মান তাঁদের অন্তরে নিহিত ছিল, তার সুবাস পাওয়া যায় তাঁরই কর্মে। ধন্যবাদ, আখতার হুসেন ।
আহসান: ভাই গিরিশচন্দ্রের জন্য অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সম্পূর্ণ কোরআনের সর্বপ্রথম অনুবাদ হয় আলোয়ারে (বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে) ৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। হিন্দু রাজা মেহরুকের অনুরোধে আবদুল্লাহ বিন উমার বিন আবদুল আজিজ এই অনুবাদের নির্দেশ দেন। এ পর্যন্ত বাংলা ভাষায় প্রায় নয়টি অনুবাদ বের হয়েছে: ১। গিরিশচন্দ্র সেন, ২। রফিকুর রহমান চৌধুরী, ২০১১ (বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী অনূদিত কোরআনের ইংরেজি অনুবাদের বাংলা অনুবাদ), ৩। মাওলানা মুহিউদ্দিন খান, ৪। আব্বাস আলী (পশ্চিমবঙ্গ), ৫। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৬। মুস্তাফিজুর রহমান, ৭। বিচারপতি হাবিবুর রহমান, ৮। কুদরাত-ই-খুদা ও ৯। জহুরুল হক।
মাহবুবুর রহমান: ভালো লাগল। তবে একটা তথ্য ভুল। বলা হয়েছে, গিরিশচন্দ্রের জন্ম তখনকার ঢাকা জেলা, বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার মহেশ্বরদি পরগনার পাঁচদোনা গ্রামে। আসলে তাঁর জন্ম নারায়ণগঞ্জে নয় নরসিংদীতে।

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী সংবাদ প্রকাশ বিষয়ে র‌্যাব
‘ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী সংবাদ প্রকাশে বিরত থাকার অনুরোধ র‌্যাবের’ শিরোনামে সংবাদটি প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত হয় ১৪ মার্চ বুধবার। এতে ৫৪টি মন্তব্য এসেছে। পরের দিন ১৫ মার্চ বৃহস্পতিবার পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হলে মন্তব্য আসে ১১২টি। এর কয়েকটি:
সামিউর রহমান: সত্য সংবাদ লিখলে যে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী সংবাদ হয়, সেটি আজ র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখা থেকে জানা গেল।
সোহেল আহমেদ: ডাকাতি করলে সুশৃঙ্খল বাহিনীর মনোবল ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না, সংবাদ প্রকাশ হলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়!
পলাশ: সাধারণ মানুষ কোনো ঘটনা ঘটালে সেটা উদ্ধার করার পর র‌্যাব সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে ফলাও করে প্রেস কনফারেন্স করে। এখন নিজেদের সদস্যদের অপরাধের কথা ঢাকতে সাংবাদিকদেরকে কেন সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।

এমনি সব গাধা...
১৩ মার্চ মঙ্গলবার আনিসুল হক তাঁর অরণ্যে রোদন কলাম লেখেন ‘এমনি সব গাধা’ নিবন্ধটি। এতে ১৩২টি মন্তব্য এসেছে। এর মধ্যে কুয়েত থেকে ওসমান গনি লিখেছেন: লেখাটি খুবই ভালো লাগল। হাসতেও হলো। সরকারের কানে কি যাবে মূল্যবান এ লেখাটি?
এছলাম সরকার: ‘আমারও ছিল মনে, কেমনে পেরেছে ব্যাটা জানতে’—লেখাটি পড়ে ভাবলাম, আমিও কিছু যোগ করি, নাহলে তো বলা হবে যে পাঠকেরা চতুষ্পদ প্রাণী! তবে অভিনন্দন, আনিসুল হক। কেন? ওই যে বললেন, দেড় কোটি লোকের শহরে জনসভার লোকের অভাব হবে—এই আবিষ্কারের জন্য। খামাখা কতগুলো মানুষ হেঁটে জয়পুরহাট থেকে ঢাকা এল কেন? ঢাকাতেই তো দেখা যাচ্ছে এত্ত লোক আছে। তার মানে, যা লোক এসেছে, সব ঢাকার অর্থাৎ খালেদা জিয়া আবার ফেল!!

সমুদ্রজয়ের আত্মবিশ্বাস
১৪ মার্চ বুধবার খবরের শিরোনাম ছিল মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ মামলার রায়: ‘উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল বাংলাদেশের’। এতে মন্তব্য আসে ১৫১টি। এর মধ্যে মো. জিয়াউদ্দিন লিখেছেন: এত অশুভ খবরের মধ্যে বুকটা ভরে গেছে। আপনা-আপনি অশ্রু ঝরল। খুব ভালো লাগছে, যা বোঝাতে পারব না।
সোহেল: এত দিন অনেক/সব ব্যর্থতার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করেছি। আজ তাঁর প্রশংসা করতে কার্পণ্য করব না। তাঁর কী ভূমিকা বা কোন সরকারের আমলে মামলা করা হয়েছে—এসব কোনো বিতর্ক নয়। আজ একটাই কথা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই ব্যাপারে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ১০০ ভাগ সফল। অসংখ্য ধন্যবাদ—সেই সঙ্গে তাঁদেরও ধন্যবাদ, যাঁরা এই ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সহযোগিতা করেছেন।
মো. জানে আলম: আজকে এই রিপোর্টের মন্তব্যগুলো থেকে সবাই একটা বিষয় বুঝতে পারছি, সরকার খারাপ করলে যেমন মানুষ সমালোচনা করে, তেমনি ভালো করলে প্রশংসা করতেও কার্পণ্য করে না।
মোহাম্মদ সোলায়মান: পাঠকেরা, আপনারা কমোডর (অব.) খুরশেদকে অভিনন্দন জানাতে ভুলে গেছেন। তিনি পর্দার অন্তরালের মানুষ এবং দীর্ঘদিন ধরে এই অর্জনের জন্য পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি একজন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক।

চিকিৎসা নিতে ‘অমানুষ’দের কাছেই যাবে
১১ মার্চ রোববার প্রথম আলোর খোলা কলমে “মানুষ চিকিৎসা নিতে ‘অমানুষ’দের কাছেই যাবে” শীর্ষক নিবন্ধ লিখেছেন মশিউল আলম। এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কক্সবাজার সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ডাক্তাররা অমানুষ, গরিবের রক্তচোষা’। এর প্রতিক্রিয়ায় ৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ লেখেন, ‘ডাক্তাররা অমানুষ! গরিবের রক্তচোষা!’ পরে মিজানুর রহমান আরেক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘আমার মন্তব্য দেশের সব চিকিৎসক সম্পর্কে নয়’। পুরো বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে পাঠকদের অনেক প্রতিক্রিয়া প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে মশিউল আলমের লেখায় পাঠকদের কয়েকটি অভিমত এখানে তুলে ধরা হলো:
প্রবীর পাল: খুবই সময়োচিত ও গঠনমূলক সমীক্ষা। আশা করি, দেশের বিপথগামী চিকিৎসকেরা তাঁদের ভুল বুঝতে পেরে সত্যিকারের চিকিৎসক হিসেবেই নতুন করে আত্মপ্রকাশ করবেন। আমাদের আর তাঁরা বাধ্য করবেন না বাজে বিশেষণ ব্যবহার করে তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে।
মো. সোহেল রানা: জনাব সাংবাদিক, আপনারা হচ্ছেন সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ, কারণ আপনাদের পত্রিকা আছে, যেখানে যা খুশি লিখতে পারেন, মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করতে আপনাদের জুড়ি নেই। চিকিৎসা-পেশার সঙ্গে অন্য পেশার যে পার্থক্য, সেটা কি আপনি নিজে বোঝেন? সেই বিষয়ে কি আপনার কলম দিয়ে কোনো দিন কোনো লেখা বেরিয়েছে?
ডা. আরিফ বাচ্চু: মশিউল আলম সাহেবের লেখা পড়ে মনে হলো দেশে আর কোনো অমানুষ নেই, চিকিৎসকেরা ছাড়া। এভাবে একটি পেশাকে সাধারণ মানুষের কাছে নষ্ট করার দায়ভার কাদের? এই পেশাটি নষ্ট পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? চিকিৎসকেরা নাকি রোগীরা? সারা দেশে যখন অস্থিরতা, তখন এই মানবাধিকার কর্তার কোনো মনোবিকার নেই...শেয়ার কেলেঙ্কারি, রাষ্ট্রে খুন, সীমান্তে খুন, রাজনৈতিক ভণ্ডামি, খুনিদের ওপর ওহি নাজিলের ফলে মুক্ত মনে সমাজে বিচরণ, সামাজিক অস্থিরতা, দুর্নীতির মহোৎসব...সবকিছু দেখে না দেখার ভান।

(পাঠকের মতামত বিস্তারিত পড়তে এবং প্রথম আলোয় প্রকাশিত যেকোনো বিষয়ে আপনার মতামত জানাতে ভিজিট করুন prothom-alo.com)

No comments

Powered by Blogger.