দেশের স্বার্থে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি প্রত্যাহার করুন-বিরোধী দলের হরতাল

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এক সপ্তাহের মাথায় আবারও হরতাল। গত রোববারের হরতাল ছিল ১২ ঘণ্টার, এবারেরটি ৩৬ ঘণ্টার—রোববার সকাল থেকে শুরু হয়ে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। সরকারে বা বিরোধী দলে যাঁরা আছেন, এই হরতালে তাঁদের লাভ বা ক্ষতি কী, সেটা স্পষ্ট না হলেও দেশের ক্ষতি আর জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি স্পষ্ট।

হরতালের আগেই গতকাল একাধিক যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
নিয়ম অনুযায়ী, আগামী নির্বাচন হতে আরও আড়াই বছর বাকি। সেই নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করা কিংবা উপর্যুপরি হরতাল ডাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন, আবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী দুটি নির্বাচনে এই পদ্ধতি বহাল রাখা যেতে পারে বলেও মত দিয়েছেন। বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার এবং আমাদের রাজনৈতিক নেতারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করবেন, সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের রাজনীতিতে এখন এই আলাপ-আলোচনার সংস্কৃতি বলে কিছু নেই। একদিকে সরকারের তরফ থেকে কোনো বিচার-বিবেচনা ছাড়াই আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হলো; অন্যদিকে বিরোধী দল এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার পরিবর্তে দেশের বারোটা বাজানোর পুরোনো পথ হরতালের রাজনীতির আশ্রয় নিল। সরকার ও বিরোধী দলের এই আচরণ ও অবস্থানে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে দেশ বা জনগণের স্বার্থের বিষয়টি তাদের বিবেচনাতেই নেই।
গত বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার পর দেশের সামনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ধারণা পাওয়া গেছে। তাতে স্পষ্ট যে সব মিলিয়ে একটি কঠিন সময় পার করতে হবে বাংলাদেশকে। শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, এবারের বাজেট হচ্ছে চাপ সামলানোর বাজেট। হরতালের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি চাপে থাকা অর্থনীতিকে আরও চাপের মুখে ফেলবে।
আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যেকোনো বিরোধ মেটানোর পথ হচ্ছে আলাপ-আলোচনা। আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা থাকবে কি থাকবে না, বা কোন ধরনের ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে, তা রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত্তিতেই ঠিক করতে হবে। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে রাজপথে ফয়সালার পথ পরিহার করতে হবে। আর সরকারি দলকেও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে খোলা মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্য কোনো ইস্যুতেই আমরা দেশের অর্থনীতি-বিনাশী হরতাল দেখতে চাই না। বিএনপিসহ দেশের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি যদি দেশ ও জনগণের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়, তবে এ ধরনের হরতাল প্রত্যাহার করার কোনো বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.