প্রদীপের ভেতর থেকে দৈত্য বের করার বাংলাদেশি উপায়

কী ভেবেছেন? প্রদীপে ঘষা দিলেই দৈত্য চলে আসবে? জি না। ২০১২ সালে বাংলাদেশে ওইটা সম্ভব নয়। ঘষাঘষির দিন অনেক আগেই গত হয়ে গেছে। এখন প্রদীপ থেকে দৈত্য বের করতে চাই নতুন কৌশল। কী সেগুলো? জানাচ্ছেন আলিম আল রাজি

আন্দোলন-পদ্ধতি
চলো চলো কোহকাফ চলো—এই স্লোগানে দিগ্বিদিক প্রকম্পিত করে দলবল নিয়ে ছুটে যেতে হবে দৈত্যদের রাজধানী কোহকাফ নগরে। করতে হবে মহাসমাবেশ। মিটিং-মিছিলে কাঁপিয়ে দিতে হবে সবকিছু। এই প্রদীপ কারও দয়ার দান নয়। তাই তিলকওয়ালা দৈত্যকে আমরা একমুহূর্তও আর প্রদীপের মধ্যে দেখতে চাই না—এ রকম জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে দৈত্যের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে হবে। সবশেষে দিতে হবে আলটিমেটাম। ব্যাটা দৈত্য এমনিতেই সুড়সুড় করে প্রদীপ থেকে বেরিয়ে আসবে।

কোপাকুপি পদ্ধতি
নিন্দুকেরা এই পদ্ধতিকে ছাত্রলীগ-পদ্ধতিও বলে থাকেন। এই পদ্ধতি অনুসারে লাঠিসোঁটাসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে প্রদীপের ওপর। লাঠি ও ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলতে হবে প্রদীপকে। লাথি-গুঁতা দিয়ে বলতে হবে, ব্যাটা দৈত্যের বাচ্চা, বের হ। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভালো দর্শকের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। ভয়ের চোটে দৈত্য মিয়া সঙ্গে সঙ্গে প্রদীপ থেকে বেরিয়ে এসে বলবে, ‘হুকুম করুন, মালিক!’

দৌড়ঝাঁপ উপায়
দৈত্য মন্ত্রণালয়ের সামনের লম্বা লাইনের সামনে দাঁড়াতে হবে। দৈত্যমন্ত্রীর শালা, ভাগনে কিংবা ভাতিজার সঙ্গে খাতির থাকলে ভালো হয়। দীর্ঘদিন দৌড়ঝাঁপ করার পর অবশেষে আপনি দেখা পাবেন মাননীয় দৈত্যমন্ত্রীর। ওনাকে বলতে হবে, ‘মন্ত্রী মশাই, দৈত্য ব্যাটা তো প্রদীপ থেকে বের হয় না! আপনি যদি একটু দেখে দিতেন। আপনি মহান লোক। বললে হয়তো কাজ হতো! প্লিজ, একটু দেখেন না।’
বলার সময় গলায় থাকতে হবে তেল। হাত দিয়ে করতে হবে কচলাকচলি। অতঃপর...অন্তহীন অপেক্ষা। মন্ত্রীর মনে দয়া হলে হয়তো তিনি কুপির দিকে দৃষ্টি দেবেন। তারপর কোনো এক শুভদিনে বের হয়ে আসবে দৈত্য মশাই।

টেবিলের নিচ-পদ্ধতি
আপনার হাজার হাজার ইচ্ছার ফাইল স্তূপ করে রেখেছে দৈত্য? কিন্তু ব্যাটা ইচ্ছা পূরণ তো দূরের কথা, প্রদীপ থেকেই বের হচ্ছে না? এক কাজ করুন। টেবিলের নিচ দিয়ে কিছু পয়সাপাতি ধরিয়ে দিন দৈত্য সাহেবকে। দৈত্য বলে কি মানুষ নয়? সারা দিন কেবল মালিকের ইচ্ছা পূরণ করে বেড়াবে—এমন তো হতে পারে না। তারও দরকার টাকা-পয়সার। তাই টাকা পাওয়ামাত্রই দেখবেন কুপি থেকে
বের হয়ে আপনার সামনে হাজির হয়ে গেছে দৈত্য।

র‌্যাব-পদ্ধতি
প্রদীপসহ দৈত্যকে র‌্যাবের গাড়িতে তুলে অন্য প্রদীপ ও দৈত্যের সন্ধানে নিয়ে যেতে হবে। পথিমধ্যে কোহকাফ নগরের অন্য দৈত্যরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়বে। জবাবে র‌্যাবও পাল্টা গোলাগুলি শুরু করবে। উভয় পক্ষের গোলাগুলির সময় পালানোর জন্য দৈত্য প্রদীপ থেকে বেরিয়ে আসবে। না বের হলে ক্রসফায়ারে পড়বে কীভাবে? বোঝেন না? যখনই পালানোর জন্য দৈত্য ব্যাটা বের হবে, তখনই খপ করে ধরে ফেলতে হবে তাকে। সহজ উপায়।

No comments

Powered by Blogger.