পাটকলের শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি-পাট খাতে সর্বোচ্চ নজর দেওয়া প্রয়োজন

বাংলাদেশের পাট খাত সম্ভাবনাময় অভিধায় সীমাবদ্ধ রয়ে গেল। এ খাতের সুফল দেশ ভোগ করতে পারল না। কবে পারবে তা এবারের বাজেটও নিশ্চিত করতে পারেনি। এমন নয় যে বিশ্বে পাটের চাহিদা মিটে গেছে। বরং পাটের যে আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি হয়েছে, তা ধরতে পারলে দেশ একটি লাভজনক আয়ের মুখ দেখতে পারত।


দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ পাটের উন্নত মানের উৎস হওয়া সত্ত্বেও এ বাজার ভারত ও চীনের হাতে চলে গেছে। এর প্রধান কারণ হলো, এ খাতকে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া এবং গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অসংগতি। আর এ অসংগতি এবারের বাজেটেও প্রতিফলিত হয়েছে বলে পাট ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। অভিযোগ উঠেছে, বাজেট প্রস্তাবে পাট খাতে যেসব সুবিধা দেওয়ার কথা হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। খোদ বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের বা বিজেএমসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করপোরেশন থেকে আদমজী জুট মিলকে আবার চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও বাজেটে তা মূল্যায়িত হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অনেক পাটকলকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও সেগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এগুলো আবার বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণে আনার প্রস্তাব করপোরেশনের থাকলেও সে ব্যাপারে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি-বেসরকারি পাটকলের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতাগুলো একই রকম হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারি পাটকলগুলোকে যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সে সুবিধা বেসরকারি পাটকলের বেলায় দেওয়া হয়নি। অবশ্য পাট খাতে প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সে প্রণোদনা সঠিক সময়ে পাওয়া যাবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। কারণ বিগত দিনেও সঠিক সময়ে প্রণোদনা পাওয়া যায়নি।
পাটকল তথা পাট খাতের সমস্যাগুলো মোকাবিলায় আরেকটু পেছনে যাওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের সরকারি খাতের পাটকলের যন্ত্রপাতি এবং পাট খাতের প্রশাসন আধুনিক ও যুগোপযোগী নয়। সাম্প্রতিককালে পাটের জেনোম আবিষ্কার, বন্ধ পাটকলগুলো একে একে খুলতে থাকা ও লাভজনক হয়ে ওঠা_এসব সুখবর আশায় মুখে এখন হঠাৎ পাট খাতের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশাসনের সমস্যার কথাগুলো উঠে এসেছে। এতে বাস্তবে পাট খাতের সম্ভাবনা থমকে দাঁড়াচ্ছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রয়েছে অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খলা। পাট খাতের এসব সমস্যা দূর করা প্রয়োজন সর্বাগ্রে। সেই সঙ্গে বিজেএমসিকে ঢেলে সাজিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তৎপর করে তোলা এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। প্রয়োজন পাটশিল্পের ওপর গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা। পাটের উন্নত ফলনের ব্যাপারে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া, পাটের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করা এবং পাট বিষয়ে সরকারকে সুপারিশমালা দেওয়ার মতো স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। আর এসব করতে হলে পাট খাতে যে বরাদ্দ থাকা দরকার ছিল সেটা বাজেটে যে নেই, তা অস্বীকার করা যাবে না। দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে, সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বছরের পর বছর বিবেচিত না হয়ে পাট অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত হয়ে উঠুক। বাস্তবতা হলো, পাটকে প্রধান রপ্তানি খাত করে তুলতে হলে বাজেটে তার বড় ধরনের প্রতিফলন থাকা উচিত ছিল। সেটা সত্যিই হয়নি। আমরা অর্থমন্ত্রী তথা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করি, পাট সংরক্ষণ, রপ্তানি, পাটচাষে যত্ন ও কৃষককে পাটচাষে উৎসাহী করতে যা যা করা প্রয়োজন তাই যেন করা হয়। সরকারকে মনে রাখতে হবে, এখনই পাটসম্পদকে কাজে লাগানো না গেলে এ খাত দুর্বল হয়ে দেশ থেকে উৎখাত হয়ে যাবে। যে খাতকে পাট উৎপাদনকারী অন্যান্য দেশ লাভজনক খাতে পরিণত করেছে, তা আমাদের দেশ থেকে যদি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে দেশ দাঁড়াবে কিসের ওপর ভিত্তি করে? তাই পাটের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা পাটকলের যন্ত্রপাতি আমদানিতে যে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি জানিয়েছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.