পবিত্র কোরআনের আলো-ছলনাকারীরা আত্মদহনে জ্বলবে আর সত্য ও ন্যায়ের ধারকদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ

১১০. লা-ইয়াযা-লু বুনইয়া-নুহুমু ল্লাযী বানাও রীবাতান ফী ক্বুলূবিহিম ইল্লা- আন তাক্বাত্ত্বাআ' ক্বুলূবুহুম; ওয়াল্লা-হু আ'লীমুন হাকীম। ১১১. ইন্না ল্লা-হা শ্তারা- মিনাল মু'মিনীনা আনফুছাহুম ওয়াআমওয়া-লাহুম বিআন্না লাহুমুল জান্নাহ্; ইউক্বা-তিলূনা ফী ছাবীলি ল্লা-হি ফাইয়াক্বতুলূনা ওয়াইউক্বতালূনা ওয়া'দান আ'লাইহি হাক্কান ফিত্ তাওরা-তি ওয়ালইনজীলি


ওয়ালক্বুরআ-ন; ওয়ামান আওফা- বিআ'হ্দিহী মিনা ল্লা-হি ফাছ্তাব্শিরূ বিবাইয়ি'কুমু ল্লাযী বা-ইয়া'তুম্ বিহী; ওয়াযা-লিকা হুওয়াল ফাওযুল আ'যীম।
১১২. আত্তা-য়িবূনাল আ'-বিদূনাল হা-মিদূনা চ্ছা-য়িহূনার্ রা-কিঊ'না চ্ছা-জিদূনাল আ-মিরূনা বিলমা'রূফি ওয়ান্না-হূনা আ'নিল মুনকারি ওয়ালহা-ফিযূনা লিহুদূদি ল্লা-হ্; ওয়াবাশ্শিরিল মু'মিনীন। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ১১০-১১২]

অনুবাদ
১১০. তারা যে স্থাপনা তৈরি করেছিল, তা তাদের অন্তরে নিরন্তর সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাদের অন্তর ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।
১১১. নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের কাছ থেকে তাঁদের জীবন ও সম্পদ ক্রয় করে নিয়েছেন এই শর্তে যে তাঁদের জন্য জান্নাত রয়েছে। তাঁরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে (সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য)। তাঁরা যুদ্ধে প্রাণ সংহার করে এবং প্রাণ দান করে। এটা তাওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে ঘোষিত আল্লাহর সত্যিকার প্রতিশ্রুতি, যা তিনি পালন করবেন। প্রতিশ্রুতি পালনের ক্ষেত্রে আল্লাহর চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য আর কে হতে পারে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর সঙ্গে যে সওদা করেছ, সেই সওদার জন্য আনন্দিত থাকো, আর এটাই তো সেই মহাসাফল্য।
১১২. (যারা এই সফল সওদা করেছে, এরা কারা?) তারা তওবাকারী, আল্লাহর ইবাদতকারী, তাঁর প্রশংসাকারী, সওম পালনকারী, রুকু ও সিজদাকারী, সৎ কাজের আদেশদাতা ও অন্যায় কাজে বাধাদানকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা সংরক্ষণকারী। (হে নবী) আপনি এরূপ মুমিনদের সুসংবাদ দিন।

ব্যাখ্যা
১১০ নম্বর আয়াতে তথাকথিত মসজিদে যারারের প্রসঙ্গই আবার উত্থাপন করা হয়েছে। ১০৭ নম্বর আয়াতে এটিকে মসজিদে যারার বা বিতর্কিত মসজিদ বলেই উল্লেখ করা হয়েছিল। এটি মসজিদ তো অবশ্যই ছিল না, তবে 'মসজিদ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল এ জন্য যে তারা এটাকে মসজিদ বলে দাবি করছিল। কিন্তু সেটির স্বরূপ উন্মোচিত হওয়ার পর বর্তমান আয়াতে এটিকে 'স্থাপনা' বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। ওই স্থাপনাটির প্রতিষ্ঠাতারা ছিল মূলত কাফির এবং এটি প্রতিষ্ঠাও করা হয়েছিল ইসলামের ক্ষতি করার জন্য। এ কারণে সেটি জ্বালিয়েও দেওয়া হয়েছিল। মুসলমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কোনো মসজিদ জ্বালানো জায়েজ নয়।
এ আয়াতে বলা হয়েছে, 'বিতর্কিত স্থাপনা নির্মাণের ঘটনাটি তাদের অন্তরে নিরন্তর সন্দেহ সৃষ্টি করতে থাকবে।' এর অর্থ এটি ভস্মীভূত করার ফলে মুনাফিকদের কাছেও এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি মুসলমানদের কাছে ফাঁস হয়ে গেছে। সুতরাং পরাজয় ও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা সংশয় ও আশঙ্কা নিয়ে বেঁচে থাকবে।
১১২ নম্বর আয়াতের শেষে 'আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা'র ভেতরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশটি কোরআন মজিদের আরো বহু জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। বিষয়টি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহর সীমারেখার ভেতরে থাকার মানে 'ভারসাম্য' রক্ষা করা_একপেশে হয়ে না যাওয়া। কোনো সৎ কাজ বা ইবাদতের বাড়াবাড়ি বা সীমা অতিক্রম করা হলেও ভীষণ অন্যায় কাজ হয়ে যেতে পারে। অনেক অনেক বিষয়েই এর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন_কোনো ব্যক্তি যদি নিজের ওপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব বা কাজকর্ম ফেলে সারা দিন বা মাত্রাতিরিক্ত দীর্ঘ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকে, তবে তা সওয়াবের চেয়ে দায়িত্বহীনতাই বেশি হবে।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.