যে কথা যায় না বলা-পরিচয়ের সংকটে নারী

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমি অনেক সৌভাগ্যবতী এক মেয়ে। আর তা এ কারণে যে, আমার জন্মসংবাদ আমার মা-বাবার কাছে দুঃসংবাদ হয়ে আসেনি। তাঁদের কখনোই মনে হয়নি যে সংসারে একটা মেয়ের আগমন মানে বাড়তি যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নয়। পারিবারিক জীবনে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিকভাবে তীব্র বৈষম্যের ঘটনা আমার কাছে


রূপকথার গল্পের মতোই অবিশ্বাস্য আর হূদয়বিদারক মনে হয়। যেখানে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ (কিংবা আরও বেশি) নিজেদের মেয়ে হয়ে জন্মানোকে অভিশাপ বলে মনে করে, সেখানে মেয়ে হওয়ার কারণে আমার কোনো আফসোসই ছিল না। কিন্তু ইদানীং আমার বিশ্বাসে চিড় ধরেছে। ধীরে ধীরে আমি অনুভব করা শুরু করলাম, পারিবারিকভাবে না হলেও সামাজিকভাবে আমিও বৈষম্যের শিকার। সমাজ আমাকে নিজের পরিচয়ে পরিচয় হতে দেয় না। সমাজের মানুষের কাছে আমি হয়তো কারও মেয়ে কিংবা কারও স্ত্রী—এ হিসেবেই পরিচিত। বাবা কিংবা স্বামী সম্মানজনক পেশায় জড়িত বলে তাঁদের যোগ্যতায় আমি সম্মানিত হই। কিন্তু যখনই মনে পড়ে, এই সম্মান তো আমার যোগ্যতার জন্য পাইনি, তখনই মিইয়ে যাই। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ, সব সময় যেন তাঁদের কাছে ঋণী থাকি। সমাজের প্রচলিত ধারণা অনুসারে বাবার বাড়ির কোনো কিছুকে নিজের বলে দাবি করতে পারি না, আবার স্বামীর বাড়ির সমৃদ্ধি-সাফল্য ইত্যাদিতে নিজের অবদান নেই বলে ওসব নিজের মনে হয় না। আর যা-ও বা নিজের বলে ভাবা শুরু করি, তখন মনে করিয়ে দেওয়া হয় কিছু অর্জন, তাতে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। কবে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ঘটবে আমার বা আমার মতো নারীদের?
ইফ্ফাত জাহান

No comments

Powered by Blogger.