বেসরকারি আবাসন শিল্প-এ খাতের সংকট দূর করুন

১৬ থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত আবাসন মেলায় অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, মানুষ নিরাপদ বাসস্থানের লক্ষ্যে কতটা উদগ্রীব। আবাসন খাতের সংশ্লিষ্টরা নানা সংকট আর প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার পূরণে মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। বাসস্থান মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা এবং অধিকার।


দেশের বেসরকারি আবাসন খাত এত কিছুর পরও অন্তত কিছুসংখ্যক মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে মহল বা গোষ্ঠীবিশেষের অপপ্রচার, নানামুখী চক্রান্ত এবং অব্যাহত ষড়যন্ত্রের কারণে এ খাতে কালো ছায়া প্রলম্বিত হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষ ও দেশের অর্থনীতির জন্য অশুভ বার্তা। সরকারের তরফে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং গতবারের আবাসন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, মানুষের চোখের পানি ফেলতে হয় এমন কিছু করবেন না। কিন্তু বাস্তবতা এর বিপরীত, যা অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও উদ্বেগজনক। বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় মানুষের চোখের পানি ফেলতে হয়, এমন কিছুই হচ্ছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের অভিযোগ কেন আমলে নেওয়া হচ্ছে না, কেন দেশের অর্থনীতির জোগানদানকারীদের উপেক্ষার দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে, কেন সরকারকে মহল বা গোষ্ঠীবিশেষ ভুল বোঝাতে মরিয়া_এ সব কিছুর উৎস সন্ধান দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থেই জরুরি।
ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বার্থ দেখা সরকারের অবশ্যই উচিত। কারণ দেশের বেশির ভাগ মানুষের যেখানে রয়েছে আবাসন সংকট, সেখানে বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীরা মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। দেশ, মানুষ, উন্নয়ন আর পরিকল্পিত মহানগর, নগর গড়ে তোলার কাজটি তাঁরা করে যাচ্ছেন সীমাবদ্ধতা আর প্রতিকূলতার প্রাচীর ডিঙিয়ে। এরই মধ্যে বেসরকারি আবাসন খাত কতসংখ্যক বাসস্থানের চাহিদা মিটিয়েছে, নিন্দুকরা তা কি আমলে নিতে পেরেছেন? আবাসনের বিষয়টি যেখানে জাতীয় পর্যায়ে স্থান পাওয়ার কথা, যেখানে গৃহীত ও বাস্তবায়িত হওয়ার কথা সব শুভ উদ্যোগ, যার মাধ্যমে বাসস্থানপ্রত্যাশীরা সহজে নিজের একটি ঠিকানা খুঁজে পাবে, সেখানে সেসব নিশ্চিত না করে পুরো শিল্পটিকে পথে বসানোর নানা রকম পাঁয়তারার অভিযোগ নিঃসন্দেহে চরম উদ্বেগজনক।
আবাসন শিল্পের কর্ণধার কিংবা সংশ্লিষ্টদের উপেক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়ণের কল্পনা অলীক মাত্র। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বেসরকারি আবাসন খাতে ইতিমধ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ ৭০ হাজার কোটি টাকা। লাখ লাখ মানুষ প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরও এ খাত রয়েছে হুমকির মুখে। রাজউকের সিদ্ধান্তহীনতা, কর্তৃপক্ষের অদূরদর্শিতা এবং সরকারের সংশ্লিষ্টদের তুঘলকি কর্মকাণ্ড সংকট আরো প্রকট করে তুলেছে। জনকল্যাণের জন্য হুমকি ড্যাপ পরিকল্পনা বেসরকারি আবাসন খাতকে আরো পঙ্গু করে দিচ্ছে। বেসরকারি আবাসন খাতে বুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্তরা যুক্ত হচ্ছেন, তাঁদের মেধা বিনিয়োগ করছেন। এ খাতে এখন শ্রমিকসহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের সংখ্যা ২৫ লাখ। কর্মহীন মানুষের সংখ্যা যে দেশে এত বিপুল, সেখানে কর্মযুক্ত এই সংখ্যার বিকাশেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন বেসরকারি আবাসন ব্যবসায়ীরা। এই ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ২৬৯টি উপখাতে বিনিয়োগ রয়েছে এবং এর সঙ্গেও জড়িতদের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। খুব সহজেই অনুমেয়, জাতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে এ খাতের অবদান কতটা উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ। এত সব বিষয় বিবেচনায় কিংবা আমলে না নিয়ে এই শিল্প খাতটিকে ধসিয়ে দেওয়ার পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য কাজ করছে, তা খতিয়ে দেখতে সরকার তৎপর হবে এবং বিদ্যমান সংকট নিরসনে সরকার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে_এ প্রত্যাশা খুবই সংগত। বেসরকারি আবাসন শিল্প খাতের পরিধি ক্রমেই যাঁদের কল্যাণে বিস্তৃত হয়ে সার্বিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, তাঁদের সম্পর্কে মহল বা গোষ্ঠীবিশেষের নেতিবাচক মনোভাব এবং সরকারের সুদৃষ্টি না মেলা_দুই-ই আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড বলে বিবেচিত হতে পারে। আশু এর অবসান জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.