পবিত্র কোরআনের আলো-বিচার মীমাংসায় ও সাক্ষ্য প্রদানে সত্য ও ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার নির্দেশ

১৩৩. ইন ইয়্যাশা' ইউয্হিব্কুম আইয়্যুহান্ না-ছু ওয়া ইয়া'তি বিআখারীনা; ওয়া কানাল্লাহু আ'লা যালিকা ক্বাদীরা।
১৩৪. মান্ কানা ইউরীদু ছাওয়া-বাদ্ দুনইয়া ফাই'নদাল্লাহি ছাওয়া-বুদ্ দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি; ওয়া কানাল্লাহু ছামীআ'ম্ বাছীরা।
১৩৫. ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ কূনূ ক্বাওয়্যামীনা বিলকি্বছতি্ব শুহাদা-আ লিল্লাহি ওয়া লাও আ'লা আনফুছিকুম আওয়িল ওয়ালিদাইনি, ওয়াল আক্বরাবীনা; ইন ইয়্যাকুন গানিয়্যান আও ফাক্বীরান ফাল্লাহু আওলা- বিহিমা; ফালা তাত্তাবিউ'ল হাওয়া- আন্ তা'দিলূ; ওয়া ইন তালঊ আও তু'রিদ্বূ ফাইন্নাল্লাহা কানা বিমা তা'মালূনা খাবীরা।
[সুরা : আন নিসা, আয়াত : ১৩৩-১৩৫]
অনুবাদ : ১৩৩. আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় তোমাদের ধ্বংস করে দিয়ে হে মানব জাতি, তোমাদের পরিবর্তে অন্য কোনো জাতিকে এই পৃথিবীর কর্তৃত্বে নিয়ে আসতে পারেন। আল্লাহ তায়ালা এ কাজে সক্ষম।
১৩৪. তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো ব্যক্তি এ দুনিয়ার সুফলটুকু পেতে চায় অথচ আল্লাহর কাছে ইহকাল ও পরকাল সবটারই সুফল রয়েছে; আল্লাহ সব কিছুই শোনেন এবং সব কিছুই দেখেন।
১৩৫. হে ইমানদাররা! তোমরা ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং আল্লাহর জন্য সত্যের পক্ষে সাক্ষী হিসেবে নিজেকে পেশ করো। যদি এ কাজটি তোমার নিজের অথবা তোমাদের মা-বাবার কিংবা তোমাদের আত্মীয়স্বজনের ওপরও আসে। (অর্থাৎ তাদের বিপক্ষেও হয়) সে ব্যক্তি ধনী হোক বা গরিব_সেটাও কোনো বিষয় নয়, তাদের চেয়ে আল্লাহর অধিকার অনেক বেশি। অতএব তুমি কখনো ন্যায়বিচার করতে নিজের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না। যদি তোমরা কৌশলে কথা বলো বা সাক্ষ্যদান থেকে বিরত থাকো তাহলে জেনে রাখবে, তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ এর সব খবর রাখেন।
ব্যাখ্যা : ১৩৩ নম্বর আয়াতে অবাধ্য মানুষদের প্রতি চরম সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, 'মানবজাতি যদি অবাধ্য হয়ে ওঠে, তবে তাদের ধ্বংস করে দিয়ে অন্য কোনো জাতিকে এই পৃথিবীর কর্তৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহর আছে, তিনি তা যেকোনো সময় করতে পারেন। সুতরাং মানবজাতির উচিত হবে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে আল্লাহর প্রতি অবাধ্য না হয়ে আল্লাহর আনুগত্য করা। ১৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, যারা ধর্মের কাজ বা সৎ কাজ করে তাৎক্ষণিকভাবে বা ইহকালেই এর সুফল পেতে চায় তারা ভুল করে। বরং আল্লাহর কাছে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ সবই আছে। সুতরাং মানুষের উচিত হবে শুধু ইহকালবাদী না হয়ে পরকাল ও ইহকালের কল্যাণ অন্বেষণ করা।
১৩৫ নম্বর আয়াতে ইমানদারদের আহ্বান করে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, ইমানদাররা যেন যেকোনো আদান-প্রদান বা বিচার-মীমাংসার ক্ষেত্রে সত্য ও ন্যায়ের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে; এবং সাক্ষ্য প্রদানের বেলায় সত্য সাক্ষ্য দেয়। হতে পারে, সেই সত্য সাক্ষ্য তার নিজের অথবা মা-বাবার বা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে যায়, তবু কোনো অবস্থাতেই সত্য থেকে বিচ্যুত না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো বিচার-মীমাংসা বা সাক্ষ্য প্রদানের বেলায় নিজের স্বার্থ দেখা বা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়া অত্যন্ত ঘৃণ্য পাপের কাজ। এ কাজ কখনো না করার জন্য মুসলমানদের সতর্ক করা হচ্ছে। বিচার-মীমাংসা বা সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে ধনী-গরিব বিবেচনায় নিয়ে বিত্তবানের পক্ষ নেওয়া অথবা গরিব বলে কাউকে করুণা করে সত্য গোপন করাও অনুরূপ অপরাধ। এ ক্ষেত্রে কোনো কিছুর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে আল্লাহর আনুগত্য তথা সত্য ও ন্যায়ের অনুশীলন করা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। এ ছাড়াও ন্যায়বিচারের প্রশ্নে কখনো নিজের প্রবৃত্তি বা খেয়ালখুশির অনুগত হয়ে ন্যায়বিচারকে যেন ব্যাহত না করা হয় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। সাক্ষ্যদানের বেলায় কৌশলে সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া বা সাক্ষ্যদান থেকে বিরত থাকাও অনুরূপ অপরাধ। কোনো ইমানদার ব্যক্তি কখনো এ কাজ করতে পারে না। যারা এ ধরনের কাজ করবে তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ অন্তর্যামী, তিনি সব সময় সবার মনের খবর রাখেন। সুতরাং মুমিনরা যেন কখনোই সত্যকে গোপন করার চেষ্টা না করে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.