আরব বসন্তোত্তর রাজনৈতিক মডেল by মুহাম্মদ রুহুল আমীন

এ লেখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো আরব বসন্তোত্তরকালে আফ্রো-এশীয়-আরব রাষ্ট্রগুলোয় বাস্তবায়নযোগ্য উন্নয়ন মডেল নির্ধারণ। ব্যাপক গণজাগরণের মুখে তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন, মরক্কোসহ বেশির ভাগ আরব দেশে আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস শুরু হয়েছে।


এমন একটি যুগসন্ধিক্ষণে কার্যকর রাজনৈতিক মডেল তৈরি এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কৌশল প্রণয়নে ব্যর্থ হলে অত্রাঞ্চলের সাধারণ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ঈপ্সিত সংস্কারকর্ম স্থবির হয়ে পড়বে অনিশ্চিত সময়ের জন্য।
ইতিমধ্যে সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরাসহ জনপ্রিয় বিশ্ব মিডিয়ায় আরব বিশ্বে বাস্তবায়নযোগ্য মডেল উপস্থাপনায় নানা আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ বলছেন, পার্শ্ববর্তী তুরস্কের গণতান্ত্রিক মডেল দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। আবার অনেকে ফরাসি মডেল, কেউ বা সুইডেনের মডেল প্রয়োগের কথা ভাবছেন। এ বিতর্কের মূল কেন্দ্রে দুটি ধারা লক্ষণীয় : এক. পাশ্চাত্য উদারতাভিত্তিক নৈতিকতা এবং আরবের স্বীয় আরব-ইসলাম- এ দুয়ের সমন্বয়ে এক অভিন্ন আরব গণতন্ত্র আফ্রো-এশীয় জাতিগুলোর উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম; দুই. নরওয়ে-সুইডেন তথা ফ্রান্সের সেক্যুলার মডেলে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের সমন্বয়ে উপস্থাপিত পাশ্চাত্য গণতন্ত্র এ দেশগুলোয় প্রয়োগযোগ্য হতে পারে।
প্রথমে একটু ধারণা থাকা দরকার এ দুটি মডেল সম্পর্কে। সুইডেন ও ফ্রান্স এ দুটি ইউরোপীয় দেশে প্রচলিত মডেল কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত : (১) দুটি মডেলই সেক্যুলার নীতির অবয়বে তৈরি; (২) সুইডেনের সেক্যুলার নীতি বিভিন্ন ধর্মের উপস্থিতি নাগরিক জীবনে অন্তর্ভুক্ত বা অনুসৃত হতে কোনো বাধা দেয় না, কিন্তু ফ্রান্সের সেক্যুলার নীতি ধর্মের অনুসরণ, বিশেষত ধর্মীয় আচার-আচরণের বাহ্যিক বা উপস্থাপনাগত প্রদর্শন সীমাবদ্ধ করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন মুসলিম নারী 'হিজাব' পরতে পারেন না, কারণ তা বাহ্যিকতা বা উপস্থাপনা বা জনসমক্ষে বিকশিত হয়; (৩) সুইডেনের সেক্যুলার নীতিকে অনেকে কোমল ধর্মনিরপেক্ষতা (soft secularism) এবং ফ্রান্সের সেক্যুলার নীতিকে কঠোর ধর্মনিরপেক্ষতা (Hard secularism) বলে অভিহিত করে থাকেন; (৪) সরকারব্যবস্থায় সুইডেন ও ফ্রান্সের দুটি ভিন্ন ধরনের মডেল লক্ষ করা যায়।
সুইডেনের ফেডারেল কাউন্সিল সে দেশের ফেডারেল সরকার ও ফেডারেল শাসনব্যবস্থা গঠন করে থাকে। ফেডারেল পার্লামেন্ট দ্বারা নির্বাচিত সাত সদস্যের সমন্বয়ে ফেডারেল কাউন্সিল গঠিত হয় এবং এ সাতজনের প্রত্যেকে পালাক্রমে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এখানে অনেক রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকলেও ১৯৫৯ সাল থেকে অর্ধ শতাব্দী ধরে কেবল চারটি প্রধান দল সরকারব্যবস্থায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে, যা ম্যাজিক ফর্মুলা (magic formula) হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পরিচিতি লাভ করেছে। এভাবে সুইডেনের মতো প্রাচীন গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের জটিল অথচ নজিরবিহীন চর্চা সম্ভব হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে ১৯৫৮ সাল থেকে ফ্রান্সে কার্যকর পঞ্চম প্রজাতন্ত্র (Fifth Republic) নামক যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রচলিত হয়ে আসছে, তা দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার নিখুঁত ভারসাম্য হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দুজনই নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন বলে ফরাসি ব্যবস্থাটি 'এককেন্দ্রিক আধা-প্রেসিডেন্ট শাসিত প্রজাতন্ত্র' (unitary semi president republic) হিসেবে সমধিক পরিচিত। এখানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট বিদ্যমান, যা প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার ক্ষমতা রাখে এবং গত পাঁচ বছরে অনূর্ধ্ব দুই-তিনবার এমন ঘটেছে। অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রধান (Commander in chief) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
যাঁরা সুইডেনের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থা বা ফ্রান্সের এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা আরব বিশ্বের জন্য অনুসরণযোগ্য বিবেচনা করছেন, তাঁদের মূল যুক্তি হলো : (১) সুইডেনের যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারব্যবস্থার জাদুকরী অবদানের ন্যায় আরব দেশে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের চর্চা সম্ভবপর হবে; (২) সুইডেনের গণহিতৈষী নীতি আরব জনগণের কল্যাণে অনুসৃত হবে; (৩) সুইডেনের কোমল ধর্মনিরপেক্ষতা আফ্রো-এশীয় মুসলিমদের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য হবে; (৪) সুইডেনের মডেল অনুসরণের পর আরব রাষ্ট্রগুলো সুইডেনের মতো শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। অন্যদিকে ফরাসি মডেলের প্রবক্তাদের যুক্তি হলো : (১) ফরাসি ব্যবস্থার মতো ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে সুষ্ঠু গণতন্ত্রায়ন ত্বরান্বিত করা; (২) ফ্রান্সের মতো নির্বাহী বা আইন বিভাগের কোনো সংস্থাকেই বলগাহীন ক্ষমতাচর্চার পথ বন্ধ করে সমন্বয়ের গণতন্ত্র চালু করা; (৩) কঠোর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠা করে ধর্মান্ধ বা ধর্মের প্রতি প্রগাঢ় গণ-আবেগ প্রশমিত, হ্রাসকরণ বা সীমিতকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করে আরবজাহানকে ধর্মের চৌহদ্দি থেকে বের করে আনা; (৪) দ্রুত পাশ্চাত্যায়ন প্রক্রিয়া (westernization process) সম্পন্ন করা; (৫) পূর্বের পাশ্চাত্যানুগামী শায়েখ-সরাজা-বাদশাহদের পরিবর্তে নব-উত্থিত গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্যানুসারী অভিজাত শ্রেণী (elite) সমভিব্যাহারে পাশ্চাত্য আর্থসামাজিক স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ সংরক্ষণ করা।
উল্লিখিত ইউরোপীয় তথা পাশ্চাত্য গণতন্ত্র মডেল উপস্থাপনকারীরা তুির্ক গণতন্ত্র মডেল প্রত্যাখ্যানের নেপথ্যে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলো তুলে ধরেছেন : (১) তুর্কি মডেলে সেক্যুলারিজমের পরোক্ষ মৃত্যুর অশনিসংকেত দিয়ে চলেছে। যেমন- পূর্বেকার জারি করা আইনানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রীদের হিজাব নিষিদ্ধ আইন ২০০৭ সাল থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে (২) সামরিক বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় পাশ্চাত্যায়ন এবং ধর্মনিরপেক্ষায়নের(secularization) চলমান প্রক্রিয়া সাম্প্রতিককালে প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে; (৩) তুর্কি গণতন্ত্রের নতুনত্বকে অনেকে অযৌক্তিক অর্বাচীনতা হিসেবে নিন্দিত করছেন এবং কেউ কেউ তাকে ভঙ্গুর হিসেবে বিশেষিত করার প্রয়াস চালাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক বছর ধরে অনেক তুর্কির কারারুদ্ধকরণের বিষয়টি উল্লেখ করা হচ্ছে; (৪) তুর্কিরা নিজেরা এখনো তুমুল বিতর্কে নিমজ্জিত এবং এ সুশৃঙ্খলার অভাব তুর্কি মডেলের অনুসৃত হওয়ার যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করছে প্রভূতভাবে; (৫) আরবের ইসলামপন্থীরা তুর্কি মডেল অনুসরণের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তুর্কি মডেলের গণতান্ত্রিক চরিত্র লুপ্ত হতে চলেছে; (৬) মুসলিম হওয়ার কারণে যে তুুর্কি মডেল অনুসরণ করতে হবে এমনটা অযৌক্তিক, কারণ আফ্রো-এশিয়ায় অমুসলিমদের সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়।
এখন আমরা তুর্কি মডেলের কিঞ্চিৎ আলোচনাপূর্বক তার প্রযোজ্যতার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করব। তুর্কি শাসনব্যবস্থাটি 'মন্ত্রিপরিষদ শাসিত প্রজাতান্ত্রিক গণতন্ত্র' হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এখানে রয়েছে এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, যেখানে প্রধানমন্ত্রী কার্যত নির্বাহী প্রধান হওয়ার জোরে সব নির্বাহী ক্ষমতা চর্চার যোগ্য হলেও প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সেনাবাহিনীপ্রধান এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং এভাবে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা সহজতর হয়। রাজনৈতিক দলগুলো আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার বিধান মেনে চলে এবং এর জন্য কমপক্ষে ১০ শতাংশ ভোট অর্জনের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দীর্ঘ সেনাশাসনে নিষিদ্ধ পার্টি ২০০১ সালে ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তার প্রধান আবদুল্লাহ গুলকে প্রেসিডেন্টের আসনে অধিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয় এবং রাতারাতি এ পার্টি এতই জনপ্রিয়তা অর্জন করে যে ২০০৭ সালে ৪৭ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ৪৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তুরস্কের রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়।
এমন একটি জনপ্রিয় তুর্কি মডেল আরব বিশ্বে বাস্তবায়নযোগ্য হতে পারে নানা কারণে : (১) তুরস্কের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার চড়াই-উতরাই পার হওয়ার প্রতিটি আঁকাবাঁকা পথের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর জনগণের অভিজ্ঞতা একই ধরনের (২) কামাল আতাতুর্ক প্রবর্তিত জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী প্রধানকে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রধান পদে অভিষিক্ত করে সেনাবাহিনীর অপশাসনের নিগড় থেকে মুক্ত করে বর্তমানকার ব্যবস্থা ফরাসি মডেলের মতো প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মাঝে অনন্য ভারসাম্য রক্ষা করে চলছে, যা আরবজাহানের অনুকরণযোগ্য; (৩) তুর্কি মডেলটি সামরিক ঔদ্ধত্যের বদলে সামরিক বাহিনীকে স্বচ্ছ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে; (৪) সামরিকসহ অন্যান্য শাসনতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর হওয়ার নানা স্ট্যান্ডিং কমিটি ঈপ্সিত ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে; (৫) বর্তমান প্রশাসন কর্তৃক কারারুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া আইনের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করার সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক আদর্শ চর্চা করছে এবং এ ক্ষেত্রে কেউ-ই আর সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে না; (৬) ২০০১ সাল থেকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দিন দিন জনপ্রিয়তা অর্জন করছে বর্তমান মডেলটি; (৭) একটা রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর জনগোষ্ঠী যেমন শিক্ষিত নাগরিক, তরুণ ছাত্রছাত্রী, উদীয়মান পেশাজীবী শ্রেণী প্রত্যেকেই দ্রুতগতিতে বর্তমানের তুর্কি মডেল অধ্যয়ন করছে এবং তা অত্রাঞ্চলে বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করছে; (৮) আফ্রো-এশীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে তুরস্কের সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য (cultural affinity) তুর্কি মডেলের গ্রহণযোগ্যতাকে সামনে নিয়ে আসছে; (৯) সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মতামত জরিপে তুর্কি মডেলের উপযোগিতার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে। যেমন- কিছুদিন আগে মিসরের এক মতামত জরিপে ৪৪ শতাংশ তুর্কি মডেলের পক্ষে মত দেয় ৮ শতাংশ, ফরাসি মডেলের পক্ষে এবং ১০ শতাংশ সৌদি আরবের মডেলের পক্ষে তাদের বক্তব্য দেয়। (১০) অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আরব দেশগুলোর জন্য তুর্কি মডেলের কোনো বিকল্প নেই বলে অনুমিত হচ্ছে। (১১) তুর্কি মডেল সামরিক আধিপত্য এবং দুর্নীতি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আবির্ভূত হতে সক্ষম হয়েছে; (১২) তুর্কি মডেল 'শুরা' (consultation and debate) ব্যবস্থাকে প্রবর্তিত করে গণতন্ত্রের প্রথম ও প্রধান শর্ত পালন করতে সক্ষম হয়েছে, যা অন্যদের ক্ষেত্রেও বাস্তবায়নযোগ্য। (১৩) তুর্কি মডেলটি কোনো ধর্মীয় (Islamic) ব্যাপার নয়, বরং তা একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপনা, যা মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান নির্বিশেষে সব আঞ্চলিক রাষ্ট্রে প্রয়োগযোগ্য হতে পারে প্রশ্নাতীতভাবে।
সর্বোপরি আমরা বলব, প্রতিটি মডেলেরই কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে এবং সেই সীমাবদ্ধতা নিয়েই মডেলগুলো প্রচলিত ও প্রবর্তিত হয়ে রাষ্ট্রাচরণ নিয়ন্ত্রণ ও শাসিত করে। তুর্কি মডেলের নানা সীমাবদ্ধতার অবস্থিতি কোনোভাবেই তা আরব বিশ্বে বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী হতে পারে না। আরবজাহানে তিউনিসিয়া, মরক্কো, মিসরসহ যে দেশগুলোতে সম্প্রতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে সেক্যুলার এবং আরব-ইসলামী মূল্যবোধ-সংযোজিত দলের মধ্যে যে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, সেই প্রতিযোগিতায় নিঃসন্দেহে আবালবৃদ্ধবনিতা আরবীয় মূল্যবোধ জড়িত রাজনৈতিক আদর্শের পক্ষেই তাদের মতামত দিয়েছে। আরব বিশ্বের সর্বত্র আজ তুর্কি মডেল অনুসরণের তর্ক-বিতর্ক ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সংগত কারণেই সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরিতকরণের (cultural reconfiguration) এ যুগসন্ধিক্ষণে তুর্কি মডেলই কেবল আরব বিশ্বের জন্য কার্যকর, ফলপ্রসূ ও দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই রাজনৈতিক মডেল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারম্যান, সিআইডিএস
mramin68@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.