সিরামিক শিল্প-সরকারি তরফে প্রণোদনা দরকার

শিল্পের বিকাশ আর সমৃদ্ধি মানেই দেশ ও মানুষের কল্যাণ। অর্থনীতির জন্যও তা অনেক বড় সহায়ক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে শিল্প খাতের বিকাশে সরকারের তরফে সহায়তা-সহযোগিতার কথা অহরহ উচ্চারিত হলেও বাস্তবতা এর যথেষ্ট প্রতিকূলে।


তার পরও নানা প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতার প্রাচীর ডিঙিয়ে বেসরকারি শিল্প খাতের কর্ণধাররা বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে চলেছেন। এ জন্য তাঁরা অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। ১৯ জুন 'প্রণোদনা ছাড়াই বিকশিত হচ্ছে সিরামিক শিল্প' শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে সিরামিক শিল্প কিভাবে বিকশিত হচ্ছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে। সিরামিকের দ্রব্যাদি কিংবা ভবন নির্মাণে সিরামিকের বিভিন্ন উপাদানের কদর পুরনো হলেও সিরামিকের পণ্যদ্রব্য সাধারণের হাতের নাগালে আসার ইতিহাস খুব পুরনো নয়। স্বাধীনতা-উত্তর আমরা যে সিরামিকের জন্য নির্ভর করতাম আমদানির ওপর, এখন আর তা নেই। দেশের চাহিদা তো মেটাচ্ছেই, দেশীয় সিরামিক শিল্প এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে এবং উত্তরোত্তর এর চাহিদা বাড়ছে।
বর্তমানে বছরে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে সিরামিক শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে। যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ পর্যাপ্ত হয়, তবে উৎপাদন আরো অনেক বাড়ানো সম্ভব। তুলনামূলকভাবে এখানে শ্রমের মূল্য কম। এ শিল্পের সাফল্যের পেছনে এটি একটি কারণ হলেও উদ্যোক্তাদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং যথাযথ পরিকল্পনায় এগিয়ে যাওয়ার দূরদর্শিতার প্রশংসাও করতে হয়। সিরামিক ও টাইলস দুটোই বর্তমানে দেশের সম্ভাবনাময় শিল্প খাত। তবে এর আরো বিকাশ ও সমৃদ্ধির জন্য দরকার যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা, নানামুখী প্রণোদনা, শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক বাজার বিস্তৃতকরণের লক্ষ্যে দরকার পরিকল্পিত ও দূরদর্শী উদ্যোগ। রপ্তানি খাত ও অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমেই এর যে চাহিদা বাড়ছে, এ থেকে প্রতীয়মান হয়, গুণগত মানসহ আধুনিক ও রুচিসম্মত ডিজাইনের পণ্য উৎপাদনের ব্যাপারেও উদ্যোক্তারা সতর্ক এবং যত্নবান রয়েছেন।
প্রণোদনা ছাড়াই যে খাতটি বিকশিত হচ্ছে সে খাতটিকে সরকারের তরফে সহযোগিতার মনোভাব প্রদর্শন না করার যে অভিযোগ রয়েছে, তা অবশ্যই দুঃখজনক। উদ্যোক্তারা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের উৎপাদিত শিল্পপণ্যের জন্য সমাদৃত হলেও সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাব ও মৌনতা অনাকাঙ্ক্ষিত। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এ খাতে সংশ্লিষ্টদের নানামুখী পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে আমাদের সার্বিক প্রেক্ষাপটে এর আরো ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয় হয়ে উঠবে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতির জন্যও তা হবে শুভবার্তা।

No comments

Powered by Blogger.