মেট্রো রেল প্রকল্প-কালক্ষেপণ কাম্য নয়

সঠিক সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে প্রস্তাবিত মেট্রো রেললাইন বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যয় বৃদ্ধিও হয়েছে অনেক। সম্প্রতি হিসাব অনুযায়ী এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৭০ কোটি ডলার বলা হলেও মার্চের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এবং চুক্তি না হলে তা আরো অনেক বেড়ে যাবে।


বৃদ্ধির আশঙ্কা স্পষ্ট হওয়ার পরও প্রকল্প বাস্তবায়নে গড়িমসি বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই তার স্থান নির্ধারণ নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়। বিজয় সরণি দিয়ে এই মেট্রো রেল যাবে বলে প্রথম দিকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী তাতে আপত্তি প্রদান করে। তাদের যুক্তি জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে এই লাইন ক্ষতিকর হবে। বলা হয়, বিমানবাহিনীর দাবির সূত্রেই মেট্রো রেলের পথ পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি এবং পরিবেশবিদদের বক্তব্য হচ্ছে- বিজয় সরণি দিয়ে মেট্রো রেল গেলে সংসদ ভবনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তারা প্রবল আপত্তি প্রদর্শন করার পরও সরকার বিজয় সরণি দিয়ে এই মেট্রো রেল নেওয়ার পরিকল্পনা পরিবর্তন করেছে। বিজয় সরণি দিয়ে যাওয়া না যাওয়া এই বিতর্কে জড়িয়ে দীর্ঘদিন গত হয়ে যায়। এর মধ্যে স্থান পরিবর্তন, সময় ক্ষেপণ এবং নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ব্যয় আরো বেড়ে যায়। যার পুরো দায়ই বহন করতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরের জনগণের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে উড়াল সেতু আর মেট্রো রেলের প্রয়োজন রয়েছে। কিছু ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ এগিয়ে চললেও মেট্রো রেল ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হওয়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এদিকে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্য হিসেবেও এই মেট্রো রেল ব্যবস্থা বাস্তবায়ন প্রয়োজন। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না, পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আন্তরিক হওয়ার প্রয়োজন আছে। আবার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নগর পরিকল্পনাবিদ এবং পরিবেশবাদীদের সঙ্গেও আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। কারণ একটি কাজ শেষ করার পর তা পরিবর্তন করা দেশের জন্য বড় রকমের ক্ষতি বয়ে আনবে। সুতরাং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ সম্পন্ন করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবার আলোচনা-পর্যালোচনার সূত্র ধরে যাতে পুরো কাজটিই বিলম্বিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যেহেতু বাড়তি ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে এবং এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করাও অপরিহার্য, তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন হওয়া জাতীয় স্বার্থেই প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.