উন্নয়ন ও শিল্পায়ন-তোষামদমুখী নয়, উৎপাদনমুখী শিল্প গড়ে উঠুক

যুগে-যুগে, কালে-কালে শাসকশ্রেণীর পাশে মোসাহেবদের একটা জোট গড়ে ওঠে। এই মোসাহেবদের একমাত্র কাজই হচ্ছে মোসাহেবি করা। সময়ের বিবর্তনে মোসাহেবির বা তোষামোদির ধরন পাল্টেছে। আজকের দিনে এসেও মোসাহেব বা তোষামোদকারীদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া খুব একটা দুষ্কর নয়। আজকের দিনে রাজনৈতিক মোসাহেব বা


তোষামোদকারীরা শুধু 'জি হুজুর' প্রক্রিয়ার মধ্যে নিজেদের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ রাখেনি। আজকের দিনে রাজনীতিকদের মুখে উচ্চারিত হয় উন্নয়নের কথা। দেশের বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয় বিভিন্ন প্রকল্প। তোষামোদি প্রকল্প হিসেবেও যে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যায়, অকারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেও যে ক্ষমতাসীন মহলের সুনজরে থাকার চেষ্টা করা যায়, তারই একটি উদাহরণ এসেনশিয়াল ড্রাগস লিমিটেড। জোট সরকারের আমলে এমনই একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল, গড়ে তোলা হয়েছিল শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বিগত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ছেলের মন জয় করাটাই ছিল সে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। ২০০৪ সালে উদ্বোধন করা সে প্রকল্প এখন পর্যন্ত উৎপাদনে যেতে পারেনি। 'সেফালোস্পোরিন প্রকল্প' নামের সে প্রকল্পের নামে নেওয়া ঋণের কিস্তি এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে ২২ লাখ টাকা। এমন অবস্থায় এসেনশিয়াল ড্রাগস ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের এই প্রকল্পের নেপথ্যের উদ্দেশ্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মন জয় করা। কারণ প্রকল্পের স্থান হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জকে। একনেকে প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গেছে। এখন চলছে স্থান নির্বাচনের কাজ। স্থান নির্বাচন হয়ে গেলে প্রকল্পের জন্য অর্থ ব্যয় করা হবে।
যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সেই প্রকল্পের ভালোমন্দ বিবেচনায় নিতে হয়। যাঁরা এই প্রকল্প প্রণয়ন করেছেন, তাঁরাও নিশ্চয় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছিলেন। কিন্তু আগের প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের কোনো চিন্তাভাবনা ছিল কি না, সেটা স্পষ্ট নয়। এসেনশিয়াল ড্রাগসের এক কর্তা বলছেন, বগুড়ার মতো অবস্থা এই প্রকল্পের হবে না। এই প্রকল্প থেকে দুই বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়া যাবে। তাতে সরকারের কেমন করে কিভাবে লাভ হবে, সেসব কথাও বলা হয়েছে। যে প্রকল্পের জমি এখন পর্যন্ত অধিগ্রহণ করা হয়নি, সেই প্রকল্প নিয়ে এখনই আশাবাদ অনেকটাই 'গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল' জাতীয় হলেও তোষামোদের প্রকল্প পাস করিয়ে নিতে এর বিকল্পও বোধ হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ছিল না। নতুন এই প্রকল্প সম্পর্কে অনেক আশার কথা শোনালেও বগুড়ার প্রকল্পটি কেন ব্যর্থ হলো, সে বিষয়ে চুপ থাকতেই যেন তাঁরা নিরাপদ বোধ করেছেন। একটি প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দের পর কেন সে প্রকল্প থেকে উৎপাদন পাওয়া যাবে না বা সেই প্রকল্পকে কেন উৎপাদনমুখী করা হবে না_তা নিয়ে কারো যেন মাথাব্যথা নেই। এসেনশিয়াল ড্রাগসের এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন হয়তো উঠত না। কিন্তু যখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানপ্রধানের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির সুপারিশসহ নানা অনিয়মের কথা উঠে আসে, তখন নতুন একটি প্রকল্পের প্রস্তাবকে তোষামোদের প্রকল্প ভাবলে এর প্রতিবাদ করা কঠিনই হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে আরো অনেক উন্নয়নকাজ প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন স্থানে কল-কারখানা গড়ে ওঠা দরকার। তাতে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কিন্তু বিদেশের ঋণের টাকা যাতে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.