পল্লীকবির আসমানীর চিকিৎসার দাবি

নাতি সবুজের ডাকে পাশ ফিরে শুয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালেন আসমানী। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বিখ্যাত কবিতা 'আসমানী'র নায়িকা এই আসমানী। ভাদ্র মাসের দুপুরে অসহ্য গরমের ভেতরও মাটিতে পাটি পেতে কাঁথা গায়ে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
নাতি সবুজের ডাক শুনে ভাবলেন, খাবার খেতে ডাকছে। কিন্তু সবুজ তাঁকে জানালো, সাংবাদিক এসেছে। আসমানী তাঁর ভীরু-দুর্বল চোখ তুলে সাংবাদিক খুঁজলেন। কেমন বিমর্ষ। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন তিনি। জানা গেল, তখনো সকালের খাবার খাওয়া হয়নি তাঁর। ওষুধ তো পরের কথা।

ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রাম। শহর থেকে পথের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটারের মতো। ফরিদপুর-ঢাকা মহাসড়কের শিবরামপুর এলাকা থেকে ডান দিকের পাকা সড়ক গেছে রসুলপুরের দিকে। কিন্তু দুই কিলোমিটার পর থেকে মাটির কাঁচা রাস্তা শুরু। ওই পথের আরো প্রায় দুই কিলোমিটার পর ছায়াঘেরা গাছ-বাঁশঝাড় পেরিয়ে তবেই যাওয়া যায় আসমানীর বাড়ির আঙিনায়। তখন সূর্য একদম মাথার ওপর এসে পড়েছে। ওই সময় আসমানীর বাড়ি গিয়ে জানা গেল, তখনো তাঁর সকালের খাবার খাওয়া হয়নি।

ততক্ষণে আসমানী অস্ফুট স্বরে বলতে শুরু করেছেন তাঁর অসুস্থতার কথা। ভাঙা বাঁ হাতের যন্ত্রণার কথা। অনেক দিন ধরে কানে কম শুনছেন তিনি। অনেক কষ্টে তাঁকে বোঝানা গেল, কেমন আছেন_জানতে সাংবাদিক এসেছেন। ফের অস্ফুট উচ্চারণে বললেন, 'আর পারছি না। শরীরে অনেক কষ্ট। তোমরা কি পারবে আমার জন্য ওষুধ-পথ্যের ব্যবস্থা করে দিতে?' এরপর আর কোনো কথা বললেন না আসমানী। ছবি তোলার জন্য হাত ধরে তাঁকে ঘরের দাওয়ায় পাটি পেতে বসানো হলো।

কথা হলো মেয়ের ঘরের নাতি সবুজ শেখের সঙ্গে। তিনি জানান, নানির ছয় মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তাঁর মা জোছনাই নানির কাছে থাকেন। তাঁকে দেখে রাখেন। তাঁর সেবা-যত্ন করেন।

সবুজ স্থানীয় একটি পাটকলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কোনো রকমে সংসার চালাতে পারলেও নানির ওষুধ ও পথ্য ঠিকমতো কেনা হয় না। তিনি জানান, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মাঝেমধ্যে সহযোগিতা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তিনি সরকারি ব্যয়ে নানির চিকিৎসার দাবি জানান। আসমানীর তারেক নাতি নিজাম মণ্ডল বলেন, 'নিজের সংসারই ঠিকমতো চালাতে পারি না। হিমশিম খেতে হয়। এরপর কিভাবে দাদির চিকিৎসার খরচ চালাব?' এদিকে আসমানীর চিকিৎসা সরকারি ব্যয়ে করার দাবি জানিয়েছেন ফরিদপুরের সাংস্কৃতিকর্মীরাও।

ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন আসমানীর চিকিৎসার জন্য সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান। ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চৌধুরী কুশল বলেন, পল্লীকবি তাঁর কবিতায় আসমানীর যে বর্ণনা দিয়েছিলেন প্রায় শত বছর পরও তা বদলায়নি। তিনি সরকারি ব্যয়ে আসমানীর চিকিৎসার দাবি জানান।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিনুর রহমান ফরিদ বলেন, 'আসমানী আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। তিনি আসমানীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সংস্কৃতিমন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আসমানীদের বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.