সিরিয়ায় ‘জাতীয় পরিষদের’ নাম ঘোষণা বিদ্রোহীদের

সিরিয়ার বিদ্রোহীরা তুরস্কে বৈঠকের পর গতকাল শুক্রবার একটি ‘জাতীয় পরিষদ’ গঠনের লক্ষ্যে ১৪০ জন সদস্য বাছাই করেছে। বিদ্রোহীদের দাবি, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে এই পরিষদ গঠন করা হয়েছে। এই পরিষদ সিরিয়ার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের নীতি সমন্বয় করারও কাজ করবে। দেশটিতে গতকাল নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ১১ জন নিহত হয়েছে।
সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গতকাল হামা শহরের কাছের একটি গ্রামে দমন অভিযান চালান। এ সময় পাঁচজন নিহত হয়। একজন মানবাধিকারকর্মী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে সেনা ও পুলিশের সদস্যরা মেশিনগান নিয়ে সেখানে দুই ঘণ্টার অভিযান চালান। এ সময় তাঁরা নির্বিচারে গুলি ছুড়লে পাঁচজন নিহত হয়।
লন্ডনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের কর্মকর্তারা জানান, জাবেল আল-জাওয়িয়াহর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর হত্যা করেছেন। এ ছাড়া অন্য এলাকায় আরও তিনজন নিহত হয়। হামা শহরে জুমার নামাজের পর একটি মসজিদে জড়ো হওয়া মুসল্লিদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে ফেলেন। স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরা জানান, সেখানকার আকাশে পরিদর্শন হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে।
বিবিসির প্রতিবেদক জোনাথন হেড ইস্তাম্বুল থেকে জানান, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের বৈঠকে ‘জাতীয় পরিষদের’ ১৪০ সদস্যের মধ্যে ৭২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সিরিয়ায় অবস্থান করছেন বলে কয়েকজন সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
বিদ্রোহীদের মুখপাত্র বাসমা কাদমানি জানান, প্রথম পর্যায়ের পরামর্শমূলক বৈঠকের পর উপস্থিত সবাই সিরীয় ন্যাশনাল কাউন্সিল বা জাতীয় পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইয়াসির তারাব্বারা নামের পরিষদের একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। এটি হচ্ছে এর উদ্বোধনী বৈঠক।’
গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন সিরিয়ার বিদ্রোহীদের ওপর প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারের চালানো দমন অভিযানের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ‘সম্মিলিত’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওয়াশিংটনও মার্কিন নাগরিকদের সিরিয়া ত্যাগ করার আহ্বান জানায়।
বান কি মুন বলেন, যেহেতু আসাদ তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখছেন না, তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, তাঁর বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া ও একই সুরে তাঁর বিরুদ্ধে বলা।
গত মার্চে সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে কথা বলেন বান কি মুন। প্রতিবারই আসাদ বিদ্রোহীদের ওপর দমন অভিযান বন্ধ ও রাজনৈতিক সংস্কার শুরুর অঙ্গীকার করেন। বান কি মুন বলেন, এসব প্রতিশ্রুতি ভেঙেছেন তিনি। তাই জাতিসংঘের সদস্য দেশ ও নিরাপত্তা পরিষদকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বারবার আন্তর্জাতিক আহ্বান অমান্যকারী সিরিয়ার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
পশ্চিমা শক্তিগুলো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আসাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। তবে রাশিয়া, চীন ও অন্য কয়েকটি দেশের বিরোধিতার মুখে এই প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.