ছেলের হাড়গোড় নিয়ে বাড়ি ফিরলেন আমেনা

মাথা নেই। দুই হাত নেই। দুই পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ নেই। শরীরের বাকি অংশে কোনো মাংসও নেই। কিন্তু পরনের লাল প্যান্টটা রয়েছে। লাল প্যান্টের নীল বর্ডার দেখেই মা আমেনা বেগম ডুকরে কেঁদে ওঠেন। এটাই তার ছেলে মিজানুর রহমান (২০)। গত ঈদের আগের দিন ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় গরু আনতে যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এর পর আর ছেলের কোনো খোঁজ পাননি মা। ১৬ দিন পর গত বৃহস্পতিবার ছেলের লাশ শনাক্ত করেন তিনি। গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ময়নাতদন্ত শেষে পবার হড়গ্রাম গোরস্তানে মিজানের লাশ দাফন করা হয়।
মিজানুর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের বড়শি গ্রামে। তার বাবা মৃত এরশাদ আলী। মা আমেনা বেগম মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়কের পাশে খাসজমিতে একটি ঘর তুলে তারা বসবাস করেন।

মিজানের মা আমেনা বেগম জানান, ঈদের আগের দিন মিজান ভারত থেকে গরু আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তার সঙ্গে ছিলেন গুড়িপাড়া এলাকার আজগর নামের এক ব্যক্তি। ঈদের পর আজগর ফিরে এসে জানান, গরু নিয়ে ফেরার পথে মিজানকে বিএসএফ সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। তিনি কোনো মতে পালিয়ে এসেছেন।

মিজানের বোন আঁখি জানান, বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে মিজানের সন্ধান না পাওয়ায় তারা আজগরের কাছে যান। আজগর তাদের জানান, বিএসএফ ধরে নিয়ে মিজানকে ভারতের বহরমপুরে পাঠিয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে সে ফিরে আসবে বলে তিনি তাদের আশ্বস্ত করেন।

মিজানের চাচা মোরসালিন ও তার স্ত্রী আছিয়া বেগম মিজানের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে ভারত যান। সেখানে বিএসএফের স্পিডবোট চালকের সঙ্গে তাদের কথা হয়। তার উদ্ধৃতি দিয়ে মোরসালিন জানান, ঈদের রাতে পদ্মা নদীতে চোরাকারবারিদের একটি দলকে ধরতে অভিযান চালায় বিএসএফ। ওই সময় এক ছেলে নদীতে ঝাঁপ দেয়। পরে ওই ছেলের ওপর দিয়ে স্পিডবোট চালিয়ে দেওয়া হয়। তবে সে মিজান কি-না তা ওই বোটচালক জানাতে পারেনি। মোরসালিন জানান, স্পিডবোড চালকের কথায় তারা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর পবা উপজেলার চর খিদিরপুর এলাকার লোকজন পদ্মা নদীর চরে জামা-কাপড়সহ একটি কঙ্কাল পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন গিয়ে পোশাক দেখে কঙ্কালটি মিজানের বলে শনাক্ত করেন। মিজানের মা জানান, তার ছেলে লাল রঙের যে প্যান্টটি পরে গিয়েছিল, সেই প্যান্টই ছিল ওই কঙ্কালের শরীরে।

নগরীর রাজপাড়া থানার ওসি মোকাররম হোসেন জানান, কঙ্কালটি মিজানের বলে শনাক্ত করেছে তার পরিবার। তবে এ ঘটনার পর থেকে আজগরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে ধরতে পারলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানান ওসি।

নগরীর রাজপাড়া থানায় নিহত মিজানের মা আমেনা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় তাকে গরু আনার কথা বলে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া আজগরকে আসামি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.