উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(নয়) by হুমায়ূন আহমেদ

মার ধারণা ছিল, ‘টেলিগ্রাম’ বিষয়টা মোবাইল ফোনের কারণে দেশ থেকে উঠে গেছে। এখন কেউ আর ‘Mother serious come sharp’ জাতীয় টেলিগ্রাম করে না। ট্রেনে চলার সময় রাস্তার পাশে টেলিগ্রাফের খুঁটিও দেখি না। সংগত কারণেই মনে হয়, লোকজন টেলিগ্রাফের খুঁটি বিক্রি করে কটকটি কিনে খেয়ে ফেলেছে।
আমার সব ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। এক দুপুরবেলা বাবার কাছ থেকে টেলিগ্রাম চলে এল। টেলিগ্রামের ভাষা এমনিতেই সংক্ষিপ্ত থাকে, বাবারটা আরও সংক্ষিপ্ত। তিনি লিখেছেন, ‘Sold.’ বাড়ি বিক্রি হয়েছে বুঝতে পারছি। কত টাকায় বিক্রি হলো, কিছুই জানা গেল না। বাড়ি বিক্রি করে তিনি গ্রামে পড়ে আছেন কেন, তা-ও জানা যাচ্ছে না। আমাদের তিন মাসের ভিসা দেওয়া হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে এক মাস চলে গেছে।
বাসার পরিস্থিতি বর্ণনা করা যাক। মায়ের শরীর আরও খারাপ করেছে। তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার চোখ কপালে তুলে বলেছেন, এখনো দেশে পড়ে আছেন? ওনার না ব্যাংককে চিকিৎসা হওয়ার কথা?
আমি বললাম, আমাদের দুই ভাই ও বাবা—এই তিনজনের স্যুট বানানো হয়নি বলে যেতে পারছি না। বাবা ঢাকায় নেই, তাঁর মাপ নেওয়া যাচ্ছে না। এটাই সমস্যা। আর কোনো সমস্যা না। তবে বিকল্প ব্যবস্থা হয়েছে। বাবার পুরোনো এক স্যুট থেকে মাপ নেওয়া হয়েছে।
অনকোলজিস্ট হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। মাছি ঢুকে যাওয়ার মতো বড় হাঁ। যাঁরা ক্যানসার নামক রোগের চিকিৎসক, তাঁদের বলে অনকোলজিস্ট। এই তথ্য আগে জানা ছিল না। মায়ের ক্যানসার হওয়ায় নতুন একটা শব্দ জানা গেল। ‘জ্ঞান’ নানাভাবে আসে। জ্ঞানের প্রবাহ সত্যই বিচিত্র।
স্যুট যে বানাতে দেওয়া হয়েছে, এটা সত্যি। হালকা ঘিয়া রং। এর সঙ্গে মানানসই টাই কেনা হয়ে গেছে।
মা শরীর ভয়ংকর খারাপ নিয়েও স্যুটকেসে জিনিসপত্র ভরছেন। বিশাল আকৃতির এই স্যুটকেস মায়ের দূরসম্পর্কের এক বোনের কাছ থেকে ধার হিসেবে আনা হয়েছে। এই খালার নাম ঝুনু খালা। তাঁর কাছে নানান ধরনের স্যুটকেস, হ্যান্ডব্যাগ আছে। বিদেশযাত্রীদের তিনি আগ্রহ করে স্যুটকেস ধার দেন এবং একপর্যায়ে বলেন, খালি স্যুটকেস ফেরত দিয়ো না। খালি স্যুটকেস ফেরত দিলে অমঙ্গল হয়। স্যুটকেসে কয়েকটা কসমেটিকস ভরে দিয়ো। শুধু সাবান আনবে না। ঘরে একগাদা সাবান।
ঝুনু খালার স্যুটকেসে মা অদ্ভুত অদ্ভুত জিনিস ভরছেন। দু-একটার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে—
১. সুপারি কাটার সরতা। মা পান খান না। সরতা কেন যাচ্ছে বুঝতে পারছি না।
২. একটা সাতকড়ার আচারের ফ্যামিলি সাইজ বোতল। আমাদের বাড়ি সিলেটে না বলে আমরা সাতকড়া খাই না। এই আচারটা কেন যাচ্ছে কে জানে!
৩. একটা ছোট আখরোট কাঠের বাক্স। বাক্সে তালাচাবির ব্যবস্থা আছে। এ ধরনের বাক্সে মেয়েরা প্রেমপত্র লুকিয়ে রাখে। মায়ের কাছে প্রেমপত্র থাকার কোনো কারণ নেই। বাবা-মায়ের বিয়ে প্রেমের বিয়ে না। বিয়ের পর বাবা-মা কখনো আলাদা থাকেননি যে চিঠিপত্র লেখার সুযোগ হবে। বাবা এই প্রথম মাকে ছেড়ে এক মাস হলো গ্রামের বাড়িতে পড়ে আছেন।
গত এক মাসে বাসার উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, ড্রাইভার ইসমাইল গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গেছে। পদ্মর মা থানা-পুলিশে ছোটাছুটি করছেন। তাতে লাভ কিছু হচ্ছে না। পদ্মর মা চাইছেন ইসমাইলের ছবি দিয়ে পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন ছাপাতে। তাতে লেখা থাকবে ‘একে ধরিয়ে দিন’। ইসমাইলের ছবি পাওয়া যাচ্ছে না বলে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাচ্ছে না।
ছবি নিয়ে এক কাণ্ড হলো। রহিমার মাকে জিজ্ঞেস করা হলো তার কাছে ইসমাইলের ছবি আছে কি না।
রহিমার মা কেঁদেকেটে অস্থির। সে বলল, আপনারা আমারে কী ভাবেন? হারামজাদা চোর আমার কে? সে আমার স্বামী নাকি? তার কাছে আমি হাঙ্গা বইছি? আমি কী জন্যে তার ছবি ব্লাউজের নিচে লুকায়া ঘুরব?
পদ্মর মা বললেন, ব্লাউজের নিচে ছবি লুকিয়ে রাখবে, এমন কথা তো আমি বলিনি।
রহিমার মা বলল, আমি যে অপমান হইছি, তার জন্যে বিচার চাই। বিচার যদি না হয়, আমি গলায় ফাঁস দেব।
সামান্য কারণে তুমি গলায় ফাঁস দেবে?
আপনি যা বলছেন তা সামান্য না। গরিবের ইজ্জত নিয়া কথা তুলছেন।
পদ্মর মা তখন অ্যাটম বোমা ফাটালেন। কঠিন গলায় বললেন, তুমি যে পেটে বাচ্চা নিয়ে ঘুরঘুর করছো, এতে তোমার ইজ্জতের হানি হচ্ছে না? আমি নিশ্চিত, বাচ্চার বাবা ড্রাইভার ইসমাইল। আমি নিজে অনেক রাতে ইসমাইলের ঘর থেকে তোমাকে বের হতে দেখেছি।
রহিমার মা ছুটে গেল ভাইয়ার কাছে। তার বিচার চাই। এই মুহূর্তে বিচার না হলে সে গলায় ফাঁস নেবে। চিঠি লিখে যাবে, তার মৃত্যুর জন্য পদ্মর মা দায়ী।
ভাইয়া শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিল। বই থেকে চোখ না তুলে বলল, তুমি তো লিখতে পারো না। কাগজ-কলম নিয়ে আসো, আমি লিখে দিই। তুমি শুধু টিপসই দিয়ে দাও।
রহিমার মা কাঁদতে কাঁদতে বলল, এই আপনার বিচার?
ভাইয়া বলল, হুঁ। তবে পরামর্শ চাইলে পরামর্শ দিতে পারি।
কী পরামর্শ দেবেন?
ভাইয়া নির্বিকার গলায় বলল, তুমি ইসমাইল ড্রাইভারের কাছে চলে যাও। তাকে চেপে ধরে বিয়ের ব্যবস্থা করো। সন্তান বাপের পরিচয় জানবে না, এটা কেমন কথা!
দীর্ঘ সময় ঝিম ধরে থেকে রহিমার মা বলল, তারে আমি কই পামু?
ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে বলল, ঠিকানা জোগাড় করা আমার কাছে কোনো ব্যাপার না। তুমি চাও কি না বলো।
রহিমার মা বলল, তারে একবার খালি আমার কাছে আইন্যা দেন। দেহেন, স্যান্ডেল দিয়া পিটায়া তারে কী করি।
ভাইয়া বলল, এনে দিচ্ছি। কান্নাকাটি বন্ধ করো। গর্ভাবস্থায় মায়ের অতিরিক্ত কান্নাকাটি সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। সন্তানের হাঁপানি রোগ হয়।
রহিমার মা কান্না বন্ধ করে সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে গেল। সে গলা নিচু করে বলল, হারামজাদাটারে কয় দিনের মধ্যে আনবেন?
ভাইয়া উদাস গলায় বলল, দেখি!
তলজগতে (Under world) ভাইয়ার প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে আমি চমৎকৃত। ভাইয়ার অ্যান্টি-গ্রুপের প্রধান শামসু মারা গেছে। আমাদের বাসায় যে পত্রিকা আসে (দৈনিক সুপ্রভাত), তার প্রথম পাতায় ছবিসহ খবর ছাপা হয়েছে। খবরের শিরোনাম—
সাপের হাতে সাপের মৃত্যু
দলীয় কোন্দলে শীর্ষ সন্ত্রাসী শামসু নিহত
ছবিতে বিকৃত চেহারার একজনকে ফুটপাতে চিত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তার হাতে ছোট পানির বোতল। বোতলের মুখ খোলা হয়নি।
শামসুর মৃত্যুর পেছনে ভাইয়ার কলকাঠি আছে, তা বোঝা গেল ব্যাঙার আগমনে। সে এক বাক্স মিষ্টি নিয়ে এসেছে। আগে মিষ্টি আনা হতো হাঁড়িতে। এখন মিষ্টি আসে সুদৃশ্য কাগজের বাক্সে। রঙিন ফিতা দিয়ে সেই বাক্সে ফুল তোলা থাকে।
ব্যাঙা মিষ্টির বাক্স খুলল। সবাইকে মিষ্টি দেওয়া হলো। সবাই খেল, শুধু ভাইয়া বলল, না। রগট ধর্মের নীতিমালায় কোনো ঘটনাতেই আনন্দ প্রকাশ করা যায় না।
ভাইয়া রগট ধর্মে নতুন ধারা যুক্ত করেছে। এই ধর্মের অনুসারীদের বছরে একবার প্রাণী হত্যা করতে হবে। এমন প্রাণী, যার মাংস কোনো কাজে আসবে না। যেমন—কুকুর, বিড়াল।
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, প্রাণীদের মধ্যে মানুষ পড়ে কি না। ভাইয়া বলল, হোয়াই নট? নিম্নশ্রেণীর প্রাণী, নিজেদের হত্যা করতে হবে; তবে মানুষ প্রাণী কেউ নিজে হত্যা করতে না পারলে অন্যকে দিয়ে করালেও চলবে।
তোমার ধর্মে তীর্থস্থান বলে কিছু আছে?
ভাইয়া বলল, অবশ্যই আছে। যেসব জায়গায় একসঙ্গে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সেসব জায়গাই রগট ধর্মের তীর্থস্থান।
আমি বললাম, পুণ্য অর্জনের জন্য ওই সব জায়গায় যেতে হবে?
ভাইয়া বলল, রগট ধর্মে পুণ্য বলে কিছু নেই। সবই পাপ। পাপ বাড়ানোর জন্যে এসব জায়গায় রগট ধর্মের লোকজন যাবে, আনন্দ-উল্লাস করবে।
আমি বললাম, ভাইয়া, ঠিক করে বলো তো, তুমি কি অসুস্থ?
ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে বলল, অসুস্থতা রগট ধর্মের চাবিকাঠি।
শামসুর মৃত্যুর খবর ছাপা হওয়ার তিন দিনের মাথায় ড্রাইভার সালামত এসে উপস্থিত। ভয়ে-আতঙ্কে সে অস্থির। তাকে দেখাচ্ছে মৃত মানুষের মতো। সালামত বলল, ভাইজান! আমি আপনার পায়ে ধরতে আসছি।
ভাইয়া বলল, লাইফবয় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এসে পায়ে ধরো। নোংরা হাতে পায়ে ধরবে না। ভালো কথা, তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কি কথা বলবে? পদ্মকে ডেকে দেব?
সালামত কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, এমন কথা মনেও স্থান দেবেন না। পদ্ম আমার কেউ না। আপনি অর্ডার দিলে আমি তারে মা ডাকব। এখন থেকে আমি আপনার হুকুমের চাকর।
পদ্ম আমার প্রতি অত্যন্ত নারাজ। তার নারাজির কারণ সম্ভবত বনলতা। এই মেয়েটি প্রায় রোজই আসছে। কেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। আমাকে বলেছে, আমাদের বাড়ি তার অফিসে যাওয়ার পথে পড়ে এবং আমাদের বাসার চা অসাধারণ বলেই চা খাওয়ার জন্যে থামে।
পদ্ম আমাকে বলল, ওই নাকথ্যাবড়ি রোজ আসে কেন?
আমি বললাম, রোজ তো আসে না। মাঝেমধ্যে আসে।
কেন আসে?
আমার প্রেমে পড়েছে, এই জন্যে আসে।
পদ্ম বলল, আপনার প্রেমে পড়বে কেন? কী দেখে সে আপনার প্রেমে পড়বে? কী আছে আপনার?
আমার কিছুই নেই বলে সে আমার প্রেমে পড়েছে। আমার কিছু নেই বলে আমার প্রতি তার করুণা হয়েছে। করুণা থেকে প্রেম। এই প্রেমকে বলে ক-প্রেম। ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, তাকে বলে ঘৃ-প্রেম। আমার প্রতি তোমার প্রেমের নাম ঘৃ-প্রেম।
আপনার প্রতি আমার প্রেম?
অবশ্যই। ঘৃ-প্রেম।
আপনার এই সব ফাজলামি আমি জন্মের মতো বন্ধ করতে পারি, এটা জানেন?
আগে জানতাম না, এখন জানলাম।
পদ্ম বলল, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। আমি বলব, গভীর রাতে দরজা ভেঙে আপনি আমার ঘরে ঢুকেছেন। রেপ করতে চেয়েছিলেন। আমার চিৎকার-চেঁচামেচিতে পালিয়ে গেছেন।
সাক্ষী কোথায় পাবে?
আমার মা সাক্ষ্য দেবেন। আমি কী করব জানেন? নিজেই নিজের শরীরে আঁচড়ে-কামড়ে দাগ করব। পুলিশকে বলব, এসব আপনি করেছেন।
পদ্ম ভয়ংকর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয়, এই কাজ সে সত্যি সত্যি করবে। অবশ্য না-ও করতে পারে। এক ডাক্তার ছেলের সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা অনেক দূর এগিয়েছে। ছেলের নাম বদিউজ্জামান খান। ছেলে সুদর্শন। এমআরসিপি ডিগ্রি নিতে ইংল্যান্ড যাবে। যাওয়ার আগে বিয়ে করে বউ নিয়ে যাবে। পদ্মকে তার খুবই পছন্দ হয়েছে। বনলতা যেমন ঘন ঘন এ বাড়িতে আসে, ডাক্তার বদিউজ্জামান খানও আসে।
বিয়ে মোটামুটি ফাইনাল হওয়ার পর ধর্ষণজাতীয় মামলা-মোকদ্দমা হওয়ার কথা নয়। মেয়ে ধর্ষণ মামলা করছে শুনলেই পাত্রের পিছিয়ে যাওয়ার কথা।
গ্রামের বাড়ি থেকে সম্বোধনহীন একটি চিঠি এসেছে। এই চিঠি কার কাছে লেখা, বোঝা যাচ্ছে না। মনে হয়, সবার কাছেই লেখা। চিঠির সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে জামালও এসে উপস্থিত। জামালের কথা মনে আছে তো? ওই যে বাবার মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে গেল।
জামাল খালি হাতে আসেনি। এক আঁটি সজনে এবং জাটকার চেয়ে এক সাইজ বড় ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছে। যেন কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে সে উঠান ঝাঁট দিতে শুরু করেছে। তাকে আমরা কেউ কিছুই বললাম না। শুধু রহিমার মা বলল, পুলা, তোর সাহস দেইখা ‘চমৎকার’ হইছি।
জামাল রহিমার মায়ের কথা ভ্রুক্ষেপও করল না। উঠান ঝাঁট দিয়ে সে তেলের বাটি নিয়ে ভাইয়ার পা মালিশ করতে বসল।
বাবা তাঁর চিঠিতে লিখেছেন—
‘বিরাট ঝামেলায় আছি। বাড়ি চার লাখ বিয়াল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বায়নার পঞ্চাশ হাজার টাকা ছাড়া কোনো টাকা এখনো পাই নাই। যার কাছে বিক্রি করেছি সে আজ দিব, কাল দিব করছে। বড় ভুল যা করেছি তা হলো, বাড়ি বিক্রির দলিলে সই করে দিয়েছি। এখন কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
আওয়ামী লীগের নেতা ছানাউল্লাহ সাহেব, যাঁর নামে ছানাউল্লাহ সড়ক, দুবার আমাদের বাড়িতে এসেছেন। দুবারই পদ্মর মায়ের সঙ্গে দরজা ভেজিয়ে বৈঠক করেছেন। ছানাউল্লাহ সাহেবের এক সঙ্গীকে গজ-ফিতা নিয়ে বাড়ি মাপামাপিও করতে দেখা গেল। ভাইয়াকে ঘটনা জানাতেই সে বলল, অতি চালাক মহিলা। সে এই বাড়ি বিক্রির তালে আছে। ঝামেলার বাড়ি তো, বিক্রি করে খালাস হয়ে যাবে। ঝামেলা অন্যের ঘাড়ে যাবে—‘যা যস্য প্রকৃতিঃ স্বভাব জনিতা, কেনাপি ন প্রাজ্যতে’।
আমি বললাম, এর মানে কী?
ভাইয়া বলল, মানে বলতে পারব না। খুঁজে বের কর।
আমাদের পরিবারের অনেক নিরানন্দের মধ্যে একটি আনন্দের ব্যাপার হলো, আমি চাকরি পেয়েছি। বনলতা রিসার্চ সেন্টারে ফিল্ড ওয়ার্কারের চাকরি। মাসিক বেতন তিন হাজার টাকা। টিএ ডিএ আছে। দুই ঈদে বেতনের অর্ধেক বোনাস।
বনলতা অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার আমার হাতে দিয়ে বলল, আপনাকে বলেছিলাম না, আমার বসকে বললেই আপনার চাকরি হয়ে যাবে?
বনলতা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছছে। আমি বললাম, কাঁদছ কেন?
আপনার চাকরি হয়েছে, এই আনন্দে কাঁদছি।
আমি বললাম, চাকরি হওয়ার আনন্দে আমি কাঁদব। তুমি কেন কাঁদবে?
বনলতা আগে টিপটিপ করে কাঁদছিল, এই পর্যায়ে শাড়িতে মুখ চেপে ফুঁপিয়ে উঠল। উঠানে খাম্বা ধরে পদ্ম দাঁড়িয়ে আছে। সে বনলতার দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
[চলবে]
=============================
উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(আট)  উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(সাত)  উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(ছয়)  উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(পাঁচ)  উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(চার)  উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(তিন)  উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(দুই)  উপন্যাস- আমরা কেউ বাসায় নেই-(এক)  গল্প- পৃথিবীর দীর্ঘতম হাত  কালা পানির অনশন  লেখক না হলে গোয়েন্দা হতাম  অভিবাসী মানুষদের উপন্যাস  আগুনের পরশমণি  প্রেমাংশুর রক্ত চাই  গল্প- কোথায় তুমি  কবিতা বাতাসে অক্সিজেন ছড়ায়  সত্যজিৎ আমার গুরু ছিলেন  গল্প- দৌড়  বাংলা ঋতু-মাসের নামবিচার  যেভাবে মায়ের মন জয় করল বাবা  মানিক পীরের গান  গল্প- চুপি চুপি বাঁশি বাজে  গল্প- বিধুহীন  গল্প- অসমাপ্ত চুম্বনের ১৯ বছর পর...  গল্প- বসন্ত বিলাপ  খোয়াবের প্রতিলিপি  গল্প- জিঞ্জির ফেরা  দুর্লভ সময়ের হলফনামা  ইচ্ছা ছিল কবি হওয়ার  আমার গ্রন্থাগার  সোনার কমলার খোঁজে  রূপবান ঢাকার রক্তক্ষরণ  নারী জীবনের অচলায়তন  'ত্যাগের' মূল্যায়ন ও মুক্তকণ্ঠ তারুণ্য  মূল সংবিধান সংরক্ষণে সরকারের ইউটার্ন  তুরস্কে জেনারেলদের পদত্যাগ কেন?  ছোট দলগুলো ফুরফুরে মেজাজে!  কোচিং ব্যবসা এবং শিক্ষার বেহাল দশা  গল্প- লঞ্চের আপার ক্লাসে বাচ্চা হাতি  গুরুপল্লির আশ্রমে ভর্তি না হয়েই  মুক্তিযুদ্ধের ১০ বই  মগ্নচৈতন্যের বর্ণময় অভিঘাত  গল্প- চিনেজোঁক  পুস্তক প্রকাশনা ও বাংলা একাডেমীর বইমেলা  শাহি মনজিলে সাহিত্য উৎসব by শাহীন আখতার  বাজে জসীমউদ্দীন  নান্দনিক চৈতন্য  গ্রামকে শহরে এনেছি  গল্প- জলঝড়  একাত্তরের অপ্রকাশিত দিনপঞ্জি  রশীদ করীমে'র সাক্ষাৎকার- 'মনে পড়ে বন্ধুদের'  প্রাচ্যের ছহি খাবনামা  গল্প- এভাবেই ভুল হয়  গল্প- মাঠরঙ্গ  ফয়েজ আহমেদঃ স্মৃতিতে চিঠিতে


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ


এই উপন্যাস'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.