শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি

শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করা হয়েছে। তবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে সংশয়ও।
রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি: সামাজিক অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় গতকাল শনিবার বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেছেন, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের শাস্তি দিতে না পারলে তা ভবিষ্যতের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হিসেবে থেকে যাবে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে কারসাজির উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই। ইতিপূর্বে পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হয়েছে। ফলে এ প্রতিবেদন দিয়ে আইনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি অজয় রায়। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ ড. আর এম দেবনাথ, অধ্যাপক এম এম আকাশ, রঙ্গলাল সেন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং দ্য ডেইলি সান-এর সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সদস্য হারিচ উদ্দিন। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তবারক হোসেইন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, শেয়ারবাজারে কারসাজি আগামী নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এর ফলে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা বাড়বে। বিরোধী দল একে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে লাগাবে।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, শেয়ারবাজারের ঘটনা শুধু কেলেঙ্কারিই নয়, তার চেয়ে অনেক বড় কিছু; যার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া অনেক দীর্ঘস্থায়ী। এখানে একটি বড় ধরনের লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষিত বেকাররা পুঁজি খাটিয়ে মুনাফা আয়ের লক্ষ্যে শেয়ারবাজারে আসেন। কিন্তু তাঁরা এসে পুঁজি হারিয়েছেন। ফলে শাসকশ্রেণীর প্রতি তাঁদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে পরবর্তী নির্বাচনে।
আর এম দেবনাথ বলেন, শেয়ারবাজার তদন্ত প্রতিবেদনে নতুন কিছু নেই। এর অনেক কিছুই আগে পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তাঁর মতে, এই প্রতিবেদন থেকে মামলা করা সম্ভব নয়। কেননা, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে গেলে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ লাগবে। প্রতিবেদনে তেমন কোনো প্রমাণের উল্লেখ নেই। এসব কারণেই ’৯৬-এর কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও বিচার করা যায়নি।
আর এম দেবনাথ আরও বলেন, প্রাথমিক বাজারে যে লুটপাট হয়েছে, তাতে সরকারের সম্মতি ছিল। আর শেয়ারবাজার কারসাজিতে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। এই মহলটির সুনির্দিষ্টভাবে তেমন কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তবে তাঁরা সব সময়ই সংঘবদ্ধ। যখন যে সরকার আসে, ওই সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাঁরা সম্পদ হাতিয়ে নেন।
এম এম আকাশ বলেন, শেয়ারবাজারে একশ্রেণীর লোক নিঃস্ব হয়েছেন। তবে একশ্রেণীর লোক লাভও করেছেন। তাঁর মতে, যাঁরা লাভ করেছেন, তাঁদের করদাতা শনাক্তকরণ (টিআইএন) নম্বর বের করে ওই লাভ আয় হিসেবে দেখানো হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এ ক্ষেত্রে ওই লাভের ওপর কর বসানো যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এম এম আকাশ প্রশ্ন তোলেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে লাভ কী? কারণ, এর ফলে যাঁরা টাকা হারিয়েছেন, তাঁরা টাকা ফেরত পাবেন না। যাঁরা বাজার থেকে টাকা লুটে নিয়েছেন, তাঁরাও টাকা ফেরত দেবেন না।
রঙ্গলাল সেন বলেন, পুঁজিবাজার হলো অনুমানের জায়গা। এখানে যেমন লাভ আছে, তেমনি লোকসানও আছে। তাঁর মতে, সাম্প্রতিক ঘটনায় অল্পসংখ্যক লোক লাভবান হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৯৫ শতাংশ।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি পুঁজিবাদী অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই প্রচলিত বাজারব্যবস্থায় এ কেলেঙ্কারি ঠেকানো মুশকিল।

No comments

Powered by Blogger.