আইপিএলের দলগুলো সোনার ডিমপাড়া হাঁস

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিয়ে সবার মধ্যেই কৌতূহল রয়েছে। কৌতূহল দলগুলোর লাভ-লোকসান এবং এতে বিনিয়োগের উদ্দেশ্য নিয়ে। এই যে শাহরুখ খান তাঁর ব্যস্ত শিডিউল ফেলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচগুলোতে উপস্থিত থাকছেন, এতে তাঁর লাভ কী? আসলে লাভ তিনি করেই ফেলেছেন আইপিএলে একটি দলের মালিক হয়ে। কিছু টাকা বিনিয়োগ করে তিনি নিজের করে নিয়েছেন একটি সোনার ডিমপাড়া হাঁস। সাফল্য আসুক আর নাই আসুক ওই হাঁস প্রতিনিয়ত সোনার ডিম দিয়ে যাচ্ছে (পড়ুন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা)।
ভারতের একটি প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা কেন্দ্র (আইআইএফএল) সম্প্রতি আইপিএলে অংশ নেওয়া দলগুলোর লাভ-লোকসানের একটি খতিয়ান তৈরি করেছে। যা প্রকাশিত হয়েছে ভারতীয় প্রখ্যাত সাময়িকী ইন্ডিয়া টুডেতে। গবেষণা ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহ করে তারা দেখিয়েছে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া দলগুলো আসলে কখনোই ক্ষতির মুখে পড়ে না। যে ক্ষতির ব্যাপারটি ঘটে সেটা হলো ‘লাভ কম হওয়া’। এর বাইরে দলগুলোর কোনো ব্যবসায়িক ক্ষতি নেই।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, আইপিএলের সবচেয়ে ব্যবসাসফল দলের এক মৌসুমে আয় হয় ১০৮ কোটি রুপি। প্রায় ৬৫ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে তারা এই পরিমাণ আয় করেছে। অর্থাত্ লাভ ৪৩ কোটি রুপি। অন্যদিকে যে দলটি অপেক্ষাকৃত কম লাভ করে তার অঙ্কটাও নেহাতই মন্দ নয়। তার লাভ ১৮ কোটি রুপি। ৯৫ কোটি রুপি খরচ করে দলটির হাতে আসে ১১৪ কোটি রুপি। লাভ-ক্ষতির পার্থক্যটা কেবল ‘লাভ বেশি হওয়া বা কম হওয়া’র মধ্যেই সীমিত।
আইপিএলে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে অন্যান্য রাজস্ব ভাগাভাগি হয় বিভিন্ন অনুষঙ্গ বিচার করে। হতে পারে সেই দলটির খেলোয়াড়দের তারকামূল্য বেশি, হতে পারে সেই দলটির মালিকই বড় একজন তারকা। টেলিভিশন স্বত্ব বাবদ শচীন টেন্ডুলকারের মুম্বাই ইন্ডিয়ানস যে অর্থ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাবে, পুনে ওয়ারিয়র্স কিংবা দিল্লি ডেকান চারজার্সের প্রাপ্ত অর্থ নিশ্চয়ই এক হবে না। কারণ টেন্ডুলকারের তারকামূল্য অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে অনেক বেশি। আইপিএলে সবচেয়ে লাভজনক একটি দল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে টেলিভিশন স্বত্ব বাবদ পায় ৬৮ কোটি রুপি। এ ছাড়া তারা কেন্দ্রীয় স্পনসরশিপ থেকে ১১ কোটি রুপি, টিম স্পনসরশিপ থেকে ১৫ কোটি রুপি, স্টেডিয়ামের টিকিট বিক্রি বাবদ ১০ কোটি রুপি, স্টেডিয়ামের বিজ্ঞাপন বিলবোর্ড থেকে আড়াই কোটি রুপি পেয়ে থাকে। এর পাশাপাশি প্রাইজমানির ভাগ এক কোটি রুপি তো রয়েছেই।
এখন আসা যাক আইপিএলের মোট ব্র্যান্ডমূল্যের আলোচনায়। চতুর্থ আসরে এই প্রতিযোগিতার ব্র্যান্ডমূল্য কমে গেছে প্রায় ৪৬ কোটি ডলার। ২০১০ সালে যেখানে আইপিএলের ব্র্যান্ডমূল্য ছিল ৪১ কোটি ৩০ লাখ ডলার, সেখানে ২০১১ সালে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্র্যান্ডমূল্যধারী দল হচ্ছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। তাদের মূল্য ৫ দশমিক ৭১৩ কোটি ডলার। এর পরপরই রয়েছে চেন্নাই সুপার কিংসের অবস্থান। তাদের ব্র্যান্ডমূল্য ৫ দশমিক ৫৩৭ কোটি ডলার। বিজয় মালিয়ার বেঙ্গালুরু রয়েল চ্যালেঞ্জার্সের ব্র্যান্ডমূল্য ৪ দশমিক ৭৫৮ কোটি ডলার। চতুর্থ স্থানে রয়েছে শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স। কেকেআরের ব্র্যান্ডমূল্য ৪ দশমিক ৬০৫ কোটি ডলার।
আইপিএলে ব্র্যান্ডমূল্যের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন স্থানে থাকা দুটি দল হচ্ছে শিল্পা শেঠির রাজস্থান রয়েলস ও প্রীতি জিনতার কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। বিশ্বমন্দা ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অর্থনৈতিক কারণে আইপিএলের চতুর্থ আসর ব্যবসায়িক দিক দিয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও ভারতের বিশ্বকাপ জয় এবারের আইপিএল নিয়ে অনেককেই আশাবাদী করে তুলেছে। ব্র্যান্ডমূল্য কমলেও টেলিভিশন সম্প্রচার স্বত্বের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আইপিএলে এবার অনেকটাই বাণিজ্যিকভাবে সফল হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

No comments

Powered by Blogger.