পচা-বাসি খাবার

‘খাবারের মান’ বলে যে একটি বিষয় আছে, তা আমাদের দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁ বা খাবার সরবরাহকারীদের অনেকের মাথাতেই থাকে না। আবার ‘মান নিয়ন্ত্রণের’ জন্য সরকারের যে উদ্যোগ থাকা দরকার, তা-ও চোখে পড়ে না। এর ফলাফল আমরা দেখছি, খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই।
গত মঙ্গলবার পচা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী। পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ছিলেন এঁদের মধ্যে। গত শুক্রবার ঘটেছে একই ধরনের আরও একটি ঘটনা। একটি ওষুধ কোম্পানির বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে যোগ দেওয়া কর্মীদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন দুপুরের খাবার খাওয়ার পর। সম্মেলনটি হয়েছে ধানমন্ডির ম্যারিয়ট কনভেনশন সেন্টারে, খাবার সরবরাহ করেছে তারাই। বিশ্বকাপের মতো একটি আয়োজনে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের খাদ্য সরবরাহের দায়িত্ব যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারাই এমন খাবার সরবরাহ করল, যা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন শতাধিক নিরাপত্তাকর্মী। বোঝা যায়, খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটিতে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ বলে কিছু নেই। এ ঘটনার তাও কিছু প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ করেছি। খাবার সরবরাহকারী ঠিকাদার ও রেস্তোরাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু ম্যারিয়ট কনভেনশন সেন্টারে যে ঘটনা ঘটল, তার ফলাফল কী হবে?
দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁ যে পরিবেশে খাবার তৈরি ও পরিবেশন করে, তাতে মান বজায় রাখার কোনো বালাই নেই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও কেউ নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঝেমধ্যে যে অভিযান চালান এবং জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যাওয়ার যে বিধান রয়েছে, তাতে এই খাদ্য ব্যবসায়ীদের ঠেকানো যাবে বলে মনে হয় না। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ‘খাদ্য ও ওষুধ’ প্রশাসনের মতো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান কার্যকর রয়েছে। খাদ্য ও ওষুধের মানের ক্ষেত্রে সেখানে সামান্যতম ছাড়ও দেওয়া হয় না। অথচ আমাদের দেশে খাবারের মান নিয়ে কার্যত যাচ্ছেতাই চলছে। এ ধরনের একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশেও জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার ও নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.