ফুকুশিমায় সাগরের পানিতে তেজস্ক্রিয়তা ১২০০ গুণ বেশি

জাপানে ক্ষতিগ্রস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে সাগরের পানিতে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে প্রশান্ত মহাসাগরের জলসীমায় সহনীয় মাত্রার চেয়ে এক হাজার ২৫০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয় আয়োডিন পাওয়া গেছে। দেশটির পারমাণবিক নিরাপত্তা সংস্থা এ কথা জানায়।
গতকাল শনিবার পরমাণু নিরাপত্তা সংস্থার এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির এক পরীক্ষা শেষে এক নম্বর চুলির কাছে সমুদ্র উপকূলের কয়েক শ মিটার দূর পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে এক হাজার ২৫০ দশমিক ৮ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয় আয়োডিন-১৩১ ধরা পড়েছে।
জাপানের পারমাণবিক ও শিল্প নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিদেহিকো নিশিইয়ামা জানিয়েছেন, তেজস্ক্রিয়তার এই মাত্রায় জলজ প্রাণীগুলো কিছুটা ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে তিনি বলেন, সাগরের স্রোতে তেজস্ক্রিয়তার কণাগুলো ছড়িয়ে পড়বে এবং এটি সময়ের ব্যবধানে কমে যাবে। এ ছাড়া সাগরের মাছ ও সমুদ্রের শৈবাল এই তেজস্ক্রিয়তা শুষে নেবে।
১১ মার্চের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামিতে ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর কেন্দ্রটির চুল্লিগুলোতে কয়েক দফা বিস্ফোরণে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে কেন্দ্রটি স্থিতিশীল ও জ্বালানি রডগুলো ঠান্ডা রাখতে সাত শতাধিক প্রকৌশলী পালাক্রমে কাজ করে যাচ্ছেন। ভূমিকম্প ও সুনামিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরও সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ।
জাপানের ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরেকটি পারমাণবিক চুল্লিতে উচ্চ মাত্রার তেজস্ক্রিয় পানি শনাক্ত করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রটিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামি আঘাত হানার দুই সপ্তাহ পর তেজস্ক্রিয়ার দূষণ তীব্রতর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ নম্বর চুল্লি শীতল করার চেষ্টাকালে তিনজন কর্মী চুল্লির স্বাভাবিক মাত্রার চেয়েও ১০ হাজার গুণ বেশি মাত্রার তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তেজস্ক্রিয় দূষণাক্রান্ত পানিতে হাঁটার পর তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পারমাণবিক কেন্দ্রটির তেজস্ক্রিয় বিকিরণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ৭০০ প্রকৌশলী দুই সপ্তাহ ধরে দিনরাত চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে কেন্দ্রটি ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে।
কেন্দ্রটির ছয়টি পারমাণবিক চুল্লির দুটি এখন দৃশ্যত নিরাপদ। কিন্তু বাকি চারটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। এগুলো থেকে মাঝে মাঝে বাষ্প ও ধোঁয়া বের হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.