সভাপতি বললেন, বিদেশি কোচ

তিন জয় আর তিন পরাজয়ের চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে ৫৮ আর ৭৮ রানে অলআউটের লজ্জা। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতা ফিফটি-ফিফটি হলেও এই দুই ব্যাটিং বিপর্যয়ে সাফল্যের অংশটি মুছে যাওয়ার জোগাড়। এসব ক্ষেত্রে যা হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটেও তাই হচ্ছে। সব দোষ কোচ জেমি সিডন্সের!
বিসিবির সঙ্গে সিডন্সের চুক্তি আগামী জুন পর্যন্ত। বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার দায় কাঁধে তুলে দিয়ে এরপর তাঁকে আর না রাখতে বদ্ধপরিকর বোর্ডের একটি অংশ। এমনও হতে পারে আগামী ১৩ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষ হলে অস্ট্রেলিয়া দলের সঙ্গেই দেশে ফিরে গেলেন সিডন্স! এর মধ্যেই বাতাসে গুঞ্জন, বাংলাদেশ দলের পরবর্তী কোচ হতে পারেন স্থানীয় কেউ। তবে বোর্ড সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল কাল সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের এ ধরনের কোনো চিন্তা নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্থানীয় কোচ নেওয়ার সময় এখনো আসেনি। জাতীয় দলের দায়িত্ব বিদেশি কোচের হাতেই থাকতে হবে। ক্রিকেটে উন্নত দেশগুলোও জাতীয় দলের জন্য বিদেশি কোচ রাখছে।’
কাল সকালে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে দেখা করে বিশ্বকাপ-সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন সিডন্স। রিপোর্টে কী আছে না বললেও সভাপতি বলেছেন, ‘আমরা মূলত বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স নিয়েই কথা বলেছি। টেকনিক্যাল কমিটি কোচের দেওয়া রিপোর্ট মূল্যায়ন করে দেখবে। বর্তমান চুক্তি শেষে সিডন্স আর বাংলাদেশ দলের কোচ থাকবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বোর্ড সভায়।’
কাল বিকেলে অনুষ্ঠিত বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভায়ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সিডন্স-সংক্রান্ত আলোচনা। মোস্তফা কামাল অবশ্য গত চার বছরে সিডন্সের প্রাপ্তিটাকেও খাটো করে দেখতে রাজি নন, ‘অনেকে তাৎক্ষণিক হতাশা থেকে সিডন্সকে বাদ দেওয়ার কথা বলে থাকতে পারেন। আমরা এখনো সে রকম কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আর কোচ হিসেবে বিশ্বকাপে সিডন্স অত বেশি ব্যর্থও নন। বরং তাঁর সময়েই আমাদের ম্যাচ জয়ের সংখ্যা বেশি।’
বিসিবি সভাপতির অফিসকক্ষে যখন সিডন্স-সভাপতি আলোচনা চলছে, একাডেমি ভবনে তখন বিশ্বকাপের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে আরেক আলোচনা চলছিল ক্রিকেটারদের সঙ্গে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যদের। মোহাম্মদ আশরাফুল, তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন ছাড়া দলের বাকি সব ক্রিকেটারই ছিলেন সেখানে।্রঅধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আলোচনাটাই চলল ঘণ্টা খানেক। কমিটির প্রধান এনায়েত হোসেন ও দুই সদস্য জালাল ইউনুস এবং গাজী আশরাফ হোসেন কথা বলেছেন বাকি ক্রিকেটারদের সঙ্গেও। টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে আমরা খেলোয়াড়দের কথা শুনেছি। সাপোর্ট স্টাফ বা শৃঙ্খলায় কোনো সমস্যা ছিল কি না, কিংবা আমাদের দিক থেকেও কোনো সমস্যা ছিল কি না—এসব জানতে চাওয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের কাছে।’
৫৮ আর ৭৮ রানে অলআউট হওয়া ম্যাচ দুটি আলোচনার অনেকাংশ জুড়েই ছিল। খেলোয়াড়েরা বলেছেন পুরোনো কথাই—কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার ম্যাচ হওয়ায় নিজেদের অজান্তেই নিজেদের ওপর চাপ তৈরি করেছিলেন তাঁরা। তবে খেলা দেখে এবং কাল খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সের ব্যাপারে বোর্ডের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। ‘আমরা খুশিও না আবার অখুশিও না। ৫৮ আর ৭৮ রানে অলআউট হওয়াটা সমস্যা সৃষ্টি করলেও এটা আমাদের দলের আসল ছবি নয়। দলটা অনেক ভালো, এটা তারা আগেও প্রমাণ করেছে। ৫৮ আর ৭৮-এর জায়গায় যদি ১৫৮ আর ১৭৮ হতো তাহলে এত কথা হতো না’—বলেছেন মিডিয়া কমিটির প্রধান। বিশ্বকাপ ভুলে খেলোয়াড়দের আসন্ন অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ব্যাপারে মনোযোগী হতে বলেছে টেকনিক্যাল কমিটি।
বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ ছাড়া বোর্ড সভায় নির্বাচক কমিটি এবং কোচিং স্টাফ সদস্যদের চুক্তি নবায়ন প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ফিল্ডিং কোচ ইয়ান পন্ট এবং বোলিং কোচ জুলিয়ান ফাউন্টেন শর্ত সাপেক্ষে চুক্তি বাড়াতে চান। এ নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ ছাড়া ট্রেনার গ্রান্ট লুডেন এবং ফিজিও মাইকেল হেনরিও চুক্তি বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আগামী ৭ এপ্রিল পরবর্তী বোর্ড সভায় এসব ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। তবে জানা গেছে, ফিজিও হেনরির চুক্তি আর না বাড়ানোর অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বোর্ড। পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা প্রবল নির্বাচক কমিটিতেও।
বোর্ড সভায় সাফল্যজনকভাবে বিশ্বকাপ শেষ করতে পারায় সরকারসহ বিশ্বকাপ আয়োজনের অন্য সঙ্গীদের ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা বিসিবিকে ভবিষ্যতে আরও বড় কোনো আসর আয়োজনের সাহস দিচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.