হেরেও শিরোপা আবাহনীর

ম্যাচের ১৪ ওভার বাকি। ৭৪ রানের মধ্যে ফেলতে হবে মোহামেডানের ৫টি উইকেট। আবাহনী জিতবে কি হারবে বোঝার উপায় ছিল না তখনো। অথচ শিরোপা জয়ের উৎসব শুরু হয়ে গেল! ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম নেচে উঠল ‘আবাহনী...আবাহনী’ জয়ধ্বনিতে!
নিজেদের খেলা ফতুল্লায়, কিন্তু আবাহনীর শিরোপা জয়ের খবর এল বিকেএসপি থেকে! ওখানে বিমানের কাছে গাজী ট্যাঙ্কের ১৫ রানের হারই আসলে নিশ্চিত করে দেয় এক বছর পর আবাহনীর লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার। ফতুল্লায় চরম উত্তেজনার ম্যাচে ৩ বল বাকি থাকতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ১ উইকেটে হেরে যাওয়ার পরও পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে (২৪) থাকায় চ্যাম্পিয়ন আবাহনী। তবে বিমানের কাছে গাজীর হার এবং আবাহনীকে হারানোয় ২৩ পয়েন্ট নিয়ে শেষ পর্যন্ত রানার্সআপ গতবারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। ২২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় গাজী ট্যাঙ্ক।
মোহামেডানের বিপক্ষে জিতলে তো কথাই নেই, হারলেও আবাহনীর শিরোপা সম্ভাবনা লুকিয়ে ছিল গাজীর হারে। ঝুঁকিমুক্ত থাকতে তাই মনেপ্রাণে নিজেদের জয়ের সঙ্গে গাজীর পরাজয়ও কামনা করছিল আবাহনী। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে দেখতেই আবাহনীর কর্মকর্তারা টেলিফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন বিমানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। ম্যাচের পরিস্থিতি জেনে মাঝে মধ্যে বিমানের জন্য টিপসও যাচ্ছিল ফতুল্লা থেকে। এ যেন এক সঙ্গে দুই ম্যাচ খেলা! শেষ পর্যন্ত নিজেরা না জিতলেও বিমানের সফল উড্ডয়নে সাফল্যের হাসি হেসেছেন আবাহনীর কর্তারা।
মাঠের বাইরের এই খেলার সঙ্গে মাঠের খেলাও জমল বেশ। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর চিরায়ত লড়াইয়ে বাড়তি আকর্ষণ ছিলেন ইনজুরিতে পড়ার ঠিক দেড় মাস পর খেলায় ফেরা মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৬-০-৩৩-০, ৩-০-১৬-১ এবং ১-০-৬-০—তিন স্পেলের এই বিশ্লেষণে মাশরাফির বোলিংটা সাদামাটা মনে হলেও ইনজুরি থেকে ফেরা কোনো পেসারের জন্য যথেষ্টই ভালো। মাঠের বাইরে থেকে বলের গতি কিছুটা কম মনে হয়েছে, বল করার সময় দৌড়টাও ঠিক মাশরাফিসুলভ ছিল না। তবে সবচেয়ে বড় কথা, নতুন বলে একটানা ছয় ওভার বল করেছেন কোনো সমস্যা ছাড়াই। বলের লাইন-লেন্থও ছিল একেবারে নিখুঁত। সঙ্গে ফিটনেস প্রমাণের জন্য বাড়তি উদাহরণ হয়ে থাকল স্লিপ ও মিড উইকেটে নেওয়া তাঁর দু-দুটি দুর্দান্ত ক্যাচ।
মাশরাফির ফেরার দিনে অবশ্য আবাহনীর বোলিং নায়ক আবুল হাসান। আকাশি-হলুদ ক্লাবটা যে ২৩০ রান করেও দর্শকদের জমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দিল, সেটা তরুণ এই পেসারের কৃতিত্বে। মোহামেডানের বিপক্ষে লিগ ম্যাচে ৪ উইকেট নেওয়া হাসান কাল নিলেন ৩১ রানে ৬ উইকেট, লিগে তার মোট উইকেট দাঁড়াল ২০টি। হাসানের বিধ্বংসী বোলিংয়ের পরও মোহামেডানকে শেষ পর্যন্ত জয় দেখিয়েছেন বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান ফয়সাল হোসেন ও শামসুর রহমান।
মাত্র ১২ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর চতুর্থ উইকেটে শামসুর-খালেদ মাসুদের ৬৬ রানের জুটিটা ছিল বিপর্যয়ে প্রতিরোধ। তবে মোহামেডানকে ম্যাচে ফেরায় শামসুরের সঙ্গে ফয়সালের ৭৮ রানের পঞ্চম উইকেট জুটি। ৯০ বলে ২ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় ৬৫ রান শামসুরের, চার বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় ৬৭ বলে ৬৫ রান করেছেন ফয়সাল। হাসানের বলে কট বিহাইন্ড হওয়ার আগে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আজহার মেহমুদের সঙ্গে ৪৮ রানের আরেকটি জুটি গড়ে ফয়সালই জয়ের মূল কাণ্ডারি। টেল এন্ডারদের নিয়ে ‘ফিনিশিং টাচ’টা দিয়েছেন আজহার। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৯ রান। হাসানের প্রথম বলে এনামুল নেন ১, পরের দুই বলে দুই বাউন্ডারি মেরে দলকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেন আজহার।
আনামুল-রনির ৮৭ রানের ওপেনিং জুটিতে শুরুটা ভালো হলেও শেষ পর্যন্ত আবাহনী বড় স্কোর গড়তে পারেনি মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় এবং কিছুটা মন্থর ব্যাটিংয়ের করণে। মিডল অর্ডারে যখন দ্রুত রান তোলা জরুরি ছিল, ভারতীয় ব্যাটসম্যান রেশমি রঞ্জন পারিদা ওই সময়ে করেন ৩০ বলে ১৮ ও রজত ভাটিয়া ৬২ বলে ৪৫!
আবাহনীকে শিরোপা ‘উপহার’ দেওয়া গাজী ট্যাঙ্কের প্রথম লিগ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে গেছে বিমানের কাছে হেরে। বিকেএসপিতে জয়ের লক্ষ্য ছিল ২১৪ রান, ৪৭.৫ ওভারে তারা অলআউট ১৯৮ রানেই।
সং ক্ষি প্ত স্কো র
আবাহনী: ৫০ ওভারে ২৩০/৮ (আনামুল ৪৬, রজত ৪৫, রনি ৩৮, ফরহাদ ৩২, সগীর ২১*; এনামুল ২/৩৩, শোয়েব ২/৩৬, তারেক ২/৪৩, মুক্তার ১/৮, নূর ১/৪৫)। মোহামেডান: ৪৯.৩ ওভারে ২৩১/৯ (শামসুর ৬৫, ফয়সাল ৬৫, আজহার ৩৪*, মাসুদ ২৭; আবুল হাসান ৬/৩১, রজত ১/১৮, মাশরাফি ১/৫৫)।
ফল: মোহামেডান ১ উইকেটে জয়ী।
বিমান: ৫০ ওভারে ২১৩/৯ (জহুরুল ৫৭, তুষার ৩৪, লতিফ ২৫, মোশারফ ২৩; নাসির ৩/৪১, আজমত ২/২২, কামরুল ১/২২, সাব্বির ১/২৪, শাকের ১/২৯, সানজামুল ১/৩৭)। গাজী: ৪৭.৫ ওভারে ১৯৮ (নাসির ৩৪, অলক ৩৩, সাজ্জাদ ৩২, মিঠুন ২৭, আজমত ২৪; সানোয়ার ২/২০, শরীফউল্লাহ ২/৩৮, ইলিয়াস ১/২২, মোশারফ ১/৩২, মনোয়ার ১/৩৩)।
ফল: বিমান ১৫ রানে জয়ী।

No comments

Powered by Blogger.