খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে by মাহবুব হোসেন



মাহবুব হোসেনের জন্ম ১৯৪৫ সালের ২ জানুয়ারি নানাবাড়ি নদীয়ার কৃষ্ণনগরে। তিনি বড় হয়েছেন দাদাবাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৭৭ সালে ব্রিটেনের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বর্তমানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের মহাপরিচালক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি যুক্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে। বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া

প্রথম আলো l বাজারে চালের দাম যথেষ্ট চড়া। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাজার থেকে চাল সংগ্রহ না করার। সিদ্ধান্তটি যথাযথ বলে মনে করেন কি?
মাহবুব হোসেন l বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঠিক আছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাময়িক হওয়া উচিত। এটা কোনো স্থায়ী সিদ্ধান্ত নয়। সরকার চাল সংগ্রহ করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। হঠাৎ কোনো দুর্যোগ হলে খাদ্যের সংকট মোকাবিলা করতে হয়। সরকারি মজুদ সে ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন সময়ে ভিজিডি বা ভিজিএফের মতো কর্মসূচি চালাতে হয়। এ জন্য চালের মজুদ প্রয়োজন। আবার যদি কোনো কারণে হঠাৎ চালের দাম বাড়ে বা কমে, তখন সরকারের বাজারে অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়ে। চালের মজুদ বাড়িয়ে বা মজুদ ছেড়ে সরকার তখন ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে যেহেতু বাজারে ধানের চাহিদা রয়েছে এবং কৃষক যথেষ্ট ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন, তাই এখন সরকারের চাল না কেনার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে হয়। কারণ, সরকার চাল কেনা শুরু করলে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।
প্রথম আলো l কিন্তু আপনি যে খাদ্যনিরাপত্তার কথা বললেন, তার জন্য তো চাল মজুদ করা দরকার।
মাহবুব হোসেন l সরকার চাল সংগ্রহ করে দুভাবে—অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে যে সংগ্রহ সরকার করে, তা মূলত মিলমালিকদের কাছ থেকে। কারণ, সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কেনার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা সরকারের নেই। আমাদের দেশে কৃষির উন্নতি হলেও কৃষকের উন্নতি হয়নি। সাধারণত উৎপাদন বেশি হলে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হয়, কৃষক যাতে যথাযথ দাম পান। এ বছর দেখা যাচ্ছে ধানের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফলে ধানের মণ এখন কৃষক পর্যায়ে ৭০০ থেকে শুরু করে ৯০০ টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। কৃষক যথেষ্ট ভালো দাম পাচ্ছেন। বোঝা যাচ্ছে, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এখন সরকার যদি অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ শুরু করে, তবে এই সীমিত জোগানে চাপ পড়বে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করাই সরকারের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
প্রথম আলো l চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য মানে এ বছর উৎপাদন কম হয়েছে?
মাহবুব হোসেন l কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য ও যথাযথ পরিসংখ্যানের ঘাটতি রয়েছে। ফলে উৎপাদনের যে পরিসংখ্যানই দেওয়া হোক না কেন, জোগানের তুলনায় যেহেতু চাহিদা বেশি, তাই এটা ধরেই নিতে হচ্ছে যে উৎপাদন কম হয়েছে।
প্রথম আলো l সরকারের কাছে খাদ্য মজুদ থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা আপনি বললেন। আমাদের দেশে খাদ্যের যে চাহিদা, সে বিবেচনায় চালের মজুদ কী পরিমাণ থাকা উচিত?
মাহবুব হোসেন l বছরে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন খাদ্য সরকারের হাতে থাকা উচিত বলে মনে করি। আমাদের পুরো চাহিদা প্রায় তিন কোটি টন। এর মধ্যে দেড় কোটি টন কেনাবেচা হয়। সরকারের হাতে যদি ওই পরিমাণ চাল মজুদ না থাকে, তবে বাজারে প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হবে না। বর্তমানে সরকারের খাদ্য মজুদের ক্ষমতা ১২ থেকে ১৫ লাখ টন। মজুদের ক্ষমতা আরও বাড়ানো উচিত। তবে যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে বেল ইন ও বেল আউটের মাধ্যমে এই মজুদ ক্ষমতার মধ্য দিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব। যখন প্রয়োজন পড়বে, তখন মজুদ ছেড়ে দিতে হবে, আবার সময় বুঝে মজুদ গড়তে হবে।
প্রথম আলো l আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দামের এখন কী অবস্থা? সরকারের পক্ষে সেখান থেকে চাল সংগ্রহ কতটুক যৌক্তিক?
মাহবুব হোসেন l আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের তুলনায় এখনো কিছুটা বেশি। প্রতি টন ৪০০ থেকে ৫০০ ডলারের মতো। আনা-নেওয়ার খরচ ধরলে দেশে প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে প্রায় ৩৫ টাকা। সরকার এই দামে চাল কিনলে ভর্তুকি দিয়ে ওএমএসের মাধ্যমে গরিব মানুষের কাছে বিক্রি করতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকলে বেসরকারি আমদানিকারকেরাই চাল আমদানি করতেন। ফলে সরকারকেই এখন আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করতে হবে। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল কেনা বা দেশের বাজার থেকে সরকারের চাল সংগ্রহ না করা—এসব বিষয় কখনোই স্থায়ী নীতি হতে পারে না। নীতি হতে হবে পরিবর্তনশীল। এ জন্য প্রয়োজন অব্যাহত পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা। পরিস্থিতি বুঝে যথাযথ পরিসংখ্যান বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তন করতে হবে। সামনে বোরো মৌসুমে ভালো উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। তখন সরকারকেই হয়তো অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করতে হবে।
প্রথম আলো l সামনে বোরো উৎপাদন ভালো হতে পারে, তা কিসের ওপর ভিত্তি করে বলছেন?
মাহবুব হোসেন l বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে যে পরিমাণ বীজ বিক্রি হচ্ছে, তাতে আমি আশাবাদী যে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার বোরো উৎপাদন ভালো হওয়ার কথা।
প্রথম আলো l কিন্তু এ বছর বৃষ্টিপাত কম হয়েছে, তা ছাড়া বিদ্যুতের কারণে সেচও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
মাহবুব হোসেন l আমাদের দেশে সেচ পাম্পগুলোর ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ চলে ডিজেলে। আর যেসব স্থানে সেচকাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, সেখানেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষক বিদ্যুতের ওপর পুরো নির্ভর করেন না। বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে হয়তো খরচ কমত, কিন্তু কৃষক ঝুঁকি না নিয়ে ডিজেল দিয়ে সেচের বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখেন। বিদ্যুৎ এ ক্ষেত্রে খুব সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না। তবে এ বছর কম বৃষ্টি হওয়ার যে প্রসঙ্গটি আপনি উল্লেখ করলেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টি কম হওয়ায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে এখনই বিএডিসির দায়িত্ব নেওয়া উচিত দেশের কোন অঞ্চলে পানির স্তর এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে। তবে এখন কৃষকেরা আগাম আমন তুলে বোরো চাষের আগে আলু বা শাকসবজি চাষ করেন। বোরো ধান লাগানোর সময়টি তাই কিছুটা পিছিয়ে গেছে। কৃষক যদি ফেব্রুয়ারির দিকে বোরো চাষ শুরু করেন, তবে এপ্রিলের দিকে কিছু বৃষ্টিবাদল হলে মাঝে পাঁচ-ছয়টি সেচ দিলেই হবে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কিছুটা কমতে পারে।
প্রথম আলো l দেখা যায়, ভালো উৎপাদন করে কৃষক দাম পান না, আবার কৃষক যখন দাম বেশি পান তখন এর চাপ পড়ে ভোক্তাদের ওপর। এর মধ্যে ভারসাম্য আনার উপায় কী?
মাহবুব হোসেন l আসলে ধান বা চালের প্রকৃত দাম কী হবে, এটা সত্যিই এক বড় বিষয়। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। বিশেষ করে, কৃষিসংক্রান্ত যথাযথ তথ্য ও পরিসংখ্যান। এ ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি রয়ে গেছে। এসব জানা থাকলে প্রকৃত চাহিদা কত, কী পরিমাণ ধান উৎপাদন করা উচিত, সেটা নির্ধারণ করা সম্ভব। আমরা এমনকি আমাদের দেশের জনসংখ্যা কত, তা নিয়েও বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছি। সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশের জনসংখ্যার যে হিসাব দিয়েছে, তার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছে সরকার। জনসংখ্যা কত, তা না জানলে চাহিদা জানা সম্ভব নয়। কত উৎপাদন করছি, তারও কোনো পরিসংখ্যান নেই। দেশে কত হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়, তা নিয়ে দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর নিয়মিত পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, ৫৫ লাখ হেক্টরে আমন চাষ হচ্ছে, অন্যদিকে একই ব্যুরো কৃষি শুমারির তথ্য অনুযায়ী আমন চাষ হচ্ছে ৪৫ লাখ হেক্টর জমিতে। কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করা বা ভোক্তাদের যথাযথ মূল্যে কৃষিপণ্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করাসহ কার্যকর খাদ্য পরিকল্পনার জন্য যথাযথ পরিসংখ্যানের বিষয়টি খুবই জরুরি।
প্রথম আলো l জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে না, বরং কমছে। এই অবস্থায় খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিও নিশ্চয়ই বাড়ছে?
মাহবুব হোসেন l প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। দীর্ঘ মেয়াদে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটুকু সম্ভব, সে প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে চাহিদা বাড়ার অর্থ দাঁড়াচ্ছে জোগান বাড়ানো। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমলেও প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে প্রায় ২০ লাখ। এ জন্য প্রতিবছর আমাদের প্রধান খাবার ধানের উৎপাদন বাড়ানো দরকার প্রায় পাঁচ লাখ টন। এখন আমাদের প্রধান ফসল হচ্ছে বোরো। গত ২০ বছরে সেচ, সার, বীজ—এসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হওয়ায় উৎপাদন বাড়ানো গেছে। বোরো ধানের ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ খুবই কম। শস্য-ব্যবস্থাপনা করে হয়তো সামান্য কিছু বাড়ানো যেতে পারে। বোরো চাষের জমি বাড়ানোর সুযোগও নেই। বন্যা বা খরার কারণে বৃষ্টিনির্ভর ধান আমনের উৎপাদন কমে যায়। আমন ধানের ওপর নির্ভর করাও কঠিন। ফলে খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিশ্চিতভাবেই রয়েছে। আমাদের বিকল্প পথের সন্ধান করতেই হবে।
প্রথম আলো l এই ঝুঁকি মোকাবিলার পথগুলো কী?
মাহবুব হোসেন l মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টিনির্ভর সময়ে আউশ ও আমন ধানের চাষ করা গেলে অর্থাৎ, দুটো ফসল করা গেলে হেক্টরপ্রতি নয় টন ধান উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এতে বাড়তি জনগোষ্ঠীর খাবারের চাহিদা আরও ১০ বছর বাড়ানো সম্ভব। তবে এ জন্য অল্প দিনে ওঠে, এমন জাতের বীজ উদ্ভাবন করা জরুরি। ১০০ দিনের মধ্যে ওঠে, এমন ধানের জাত উদ্ভাবনের দিকে গবেষকদের দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। আর যা করা উচিত তা হলো, জনসংখ্যা কমানোর দিকে নজর দেওয়া। জনসংখ্যার বৃদ্ধি কমানো গেলে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি কমবে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মাধ্যমেও খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি কমানো যায়। দেখা গেছে, দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ধান ও গমের মতো মূল খাদ্যগুলোর চাহিদা কমে। পঞ্চাশের দশকে যেখানে জাপানে মাথাপিছু চালের চাহিদা ছিল ১৪০ কেজি, বর্তমানে তা ৬০ কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে চালের চাহিদা মাথাপিছু ১৭০ কেজি। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বর্তমান হার বজায় রাখতে পারলে বাংলাদেশেও এই চাহিদা কমতে থাকবে। চালের পরিবর্তে মাছ, মুরগি, ডিম বা এ ধরনের খাবারের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পূরণের প্রবণতা বাড়বে। ধান উৎপাদনের চেয়ে এসব উৎপাদনে জায়গা অনেক কম লাগে।
প্রথম আলো l অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হলে তো খাদ্য আমদানি করেও চলা সম্ভব।
মাহবুব হোসেন l আমাদের রপ্তানি আয় বাড়ছে, প্রবাসীদের মাধ্যমেও বিদেশি মুদ্রা দেশে আসছে। দেশে-বিদেশি মুদ্রার মজুদ বেড়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনার ক্ষমতাও বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ববাজারে সব সময় কেনার মতো খাদ্যপণ্য পাওয়া যাবে কি না। ২০০৭-০৮ সালে এ সমস্যা হয়েছিল। তখন আমাদের হাতে কেনার মতো অর্থ থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে কেনার মতো চাল না থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে জোগানের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখার বিষয়টি তাই নিশ্চিত করা জরুরি।
প্রথম আলো l নিজের দেশে উৎপাদন করা ছাড়া জোগানের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার কোনো সুযোগ আছে কি?
মাহবুব হোসেন l বিশ্বে অনেক অনাবাদি জমি পড়ে রয়েছে। নিজেদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য অনেক দেশ এখন আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জমি লিজ নিচ্ছে। চীন, ভারত ও সিঙ্গাপুর এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমাদেরও এগিয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশের পক্ষেও বড় বড় জমি লিজ নেওয়া সম্ভব। কৃষিক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা যদি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জমি লিজ নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাই, সে দেশের শ্রমিক ব্যবহার করে তত্ত্বাবধানের কাজ করি, তবে প্রচুর শস্য উৎপাদন সম্ভব। এতে যে দেশগুলোর জমি লিজ নেওয়া হবে, সেখানে কৃষিক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যাবে, যা দেশটির জন্যও লাভজনক হবে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার কারণে আফ্রিকার অনেক দেশে বাংলাদেশের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের সঙ্গে সরকারের সমঝোতার মাধ্যমেই জমি লিজ নেওয়া সম্ভব। ব্র্যাক আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কাজ করে, সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সরকার উদ্যোগ নিলে ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারকে সহায়তা করতে পারে। সেখানে উৎপাদিত উদ্বৃত্ত কৃষিপণ্য আমরা সহজেই আমাদের দেশে আমদানি করতে পারব। খাদ্যের জোগানের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে।
প্রথম আলো l এখন উদ্যোগ নিলে কত বছরের মধ্যে এর সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন?
মাহবুব হোসেন l জমি লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া এখন শুরু করলে এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে কিছু সময় লাগবে। এরপর পরিকল্পনা প্রণয়ন, আমাদের কৃষিপ্রযুক্তি স্থানান্তর, সেখানকার স্থানীয় লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া ইত্যাদি শেষ করে উৎপাদনে যেতে ও সুফল পেতে ৮ থেকে ১০ বছর লাগবে। কিন্তু সে জন্য কাজটি শুরু করতে হবে এখনই।
প্রথম আলো l আপনাকে ধন্যবাদ।
মাহবুব হোসেন l আপনাকেও ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.