ফেসবুকে সিপিআই(এম) নেতারা

দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নষ্ট হবে—এই অজুহাত তুলে একসময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের তীব্র বিরোধিতা করেছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট)। কিন্তু দিন বদলেছে, বদলে গেছে পারিপার্শ্বিক অবস্থা। পরিবর্তিত সেই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনীর বৈতরণী পার হতে সেই সিপিআই-এম এখন বাধ্য হচ্ছে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের সাইট ব্যবহার করতে।
আগামী বছরের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৭৭ সালের পর এবারই বামপন্থীদের চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। কাজেই লড়াইয়ে জিততে দলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া তরুণসমাজের সঙ্গে যতটা সম্ভব যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বামপন্থীরা।
সিপিআই-এমের ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার (এসএফআই) পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায় জানান, বন্ধু-বান্ধব ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে তিনি ফেসবুক ব্যবহার করেন এবং নির্বাচনী প্রচারণার জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গের সিপিআই-এমের নেতা সুজন চক্রবর্তী, মইনুল হাসান, সমিক লাহিড়ি, মানব মুখার্জী ও শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহার করেন। শুধু নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নয়, দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের জবাব দিতেও তাঁরা ফেসবুক ব্যবহার করছেন।
মানব মুখার্জির ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সিপিআই-এমের কর্মীদের বিরুদ্ধে মাওবাদী-তৃণমূল কংগ্রেসের সহিংসতার বিষয়ে একাধিক নিবন্ধ পোস্ট করা আছে। আছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাওবাদী-সমর্থিত পিপল কমিটি অ্যাগেইনস্ট পুলিশ অ্যাট্রোসিটিসের আহ্বায়ক ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে কথা বলছেন মমতা।
এসব কিছু থেকে বোঝাই যাচ্ছে, সিপিআই-এমের অবস্থান ও চিন্তা-চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ১৯৮০ ও ‘৯০-এর দশকে কম্পিউটারের ঘোরতর বিরোধী ছিল দলটি। তখন তারা বলেছে, কম্পিউটার হলো, গরিবদের কর্মসংস্থান ছিনিয়ে নেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু এ নিয়ে এখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ ভিন্ন। পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের উদ্যোগে তথ্যপ্রযুক্তির খাতকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন বামপন্থীরা। বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনী পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দলের ভিত্তি মজবুত করতে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে বামপন্থীরা।
পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনমন্ত্রী মানব মুখার্জী বলেন, ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়টি তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, দলীয় নয়। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেই তিনি ফেসবুক ব্যবহার করেন।
দলের রাজ্য কমিটির অপর সদস্য সমিক লাহিড়ি জানিয়েছেন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাতেই তিনি ফেসবুক ব্যবহার করেন। তবে মাঝেমধ্যে লোকজন সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন।
তবে দলীয় প্রচারণার ক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এসএফআই-নেতা কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, তাঁর দল কখনোই কম্পিউটারের বিরোধিতা করেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সিপিআই-এমের নেতাদের ফেসবুক ব্যবহারের ঘটনা অবশ্যই একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে খুব দেরি হয়ে গেছে। তার পরও এটা ভালো যে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, কম্পিউটার শত্রু নয়।

No comments

Powered by Blogger.