মুম্বাই হামলার তথ্যবিনিময়ের চুক্তি করে ভারত ও পাকিস্তান

মুম্বাইয়ে ২০০৮ সালের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা-সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গোপন চুক্তি হয়। যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তির মধ্যস্থতা করে। বিভিন্ন দেশের নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকসে প্রকাশিত নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
২০০৯ সালে পাকিস্তানে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যান প্যাটারসনের এক তারবার্তায় এ তথ্য রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হামলার এক মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ওই গোপন চুক্তি হয়। ওই তারবার্তায় সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা মুম্বাইয়ে হামলা চালিয়েছে। সংগঠনটি আবারও হামলা চালাতে পারে।
অ্যান প্যাটারসন গত বছরের তিন জানুয়ারি এই তারবার্তা ওয়াশিংটনে পাঠান। তারবার্তায় বলা হয়, ওই হামলায় ব্যবহূত বন্দুক ও গ্রেনেডের বিষয়ে ইসলামাবাদের করা তদন্তের তথ্য ভারতের সঙ্গে বিনিময় করতে রাজি হয় পাকিস্তান। প্যাটারসন লেখেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ সুজা পাশা তাঁদের তদন্তের তথ্য ভারতের সঙ্গে বিনিময় করবে। তবে এসব তথ্য শুধু গোয়েন্দাদের মধ্যেই থাকবে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) এমন আশ্বাস পাওয়ার পরই তিনি এতে রাজি হন।
এই তারবার্তা পাঠানোর দুই দিন পর মুম্বাই হামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু কাগজপত্র নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন হাইকমিশনারের কাছে হস্তান্তর করে ভারত। পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের কাছে হামলা-সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করা হয়েছে।
২০০৯ সালের ২ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেন প্যাটারসন। ওই বৈঠকের পর ৫ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় তিনি বলেন, ‘লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ সুজা প্রেসিডেন্ট জারদারিকে এ ব্যাপারে অবহিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট জারদারি ভারতের সঙ্গে তথ্যবিনিময়ের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন।’
প্যাটারসন তারবার্তায় আরও বলেন, মুম্বাই হামলার জন্য দায়ী জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সক্রিয় রয়েছে। সংগঠনটির পরবর্তী সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে তথ্যবিনিময় ও সহযোগিতার জন্য আমাদের একটি মাধ্যম দরকার। শুধু মুম্বাই হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা আমাদের লক্ষ্য নয়, আলোচনা শুরুর মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে চাই আমরা।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের হোটেল তাজমহল প্যালেস, হোটেল ওবেরয়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এতে ১৭৫ জন নিহত ও ৩০৮ জন আহত হন।

No comments

Powered by Blogger.