গল্পসল্প- ওরা ধান কুড়ানির দল... by মোছাব্বের হোসেন

কালের মিষ্টি রোদ পোহাতেই কিনা কে জানে, ডানা মেলে দিয়েছে ভাতশালিকের দল! রাস্তার ধারে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা নেড়ি কুকুরটাও রোদের আমেজ নিতে ঝটপট গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গেল! ধান কাটার কাজ সেই কাকডাকা ভোরেই শুরু করে দিয়েছেন কিষানেরা। এখনই তাঁদের সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত আর আনন্দে থাকার সময়। গোলায় উঠবে পাকা ধান, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে! কেটে ফেলা ধানের বোঝা বাড়িতে নামিয়ে আবার তাঁরা মাঠে আসছেন নতুন বোঝা নিয়ে যেতে।
জায়গাটা উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বাড়াইপাড়া নামের একটি গ্রামের।
রোদ কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের কেটে ফেলা ধানের খেতে ভিড় করে কিছু ছোট ছোট শিশুর দল। তাদের কারও হাতে কুলা, কারও হাতে থলে আর কেউ বা এসেছে গামলা নিয়ে। কেটে ফেলা ধানের খেতে কী যেন খুঁজতে থাকে তারা। হঠাৎ তাদের একজন কিছুটা দূর থেকে অন্যদের উদ্দেশে চিৎকার করে বিজয়ের ভঙ্গিতে চেঁচিয়ে উঠল, ‘পাইছিরে এদিক আয়!’ কী পেয়েছে এই শিশুরা? আর কিসেই বা অন্য শিশুদের রাজ্যের কৌতূহল? দেখতে এগিয়ে গেলাম তাদের দিকে। খেতের ঠিক মাঝখানটায় একটা ইঁদুরের গর্ত পেয়েছে তারা। ধান পাকার সময় গ্রামের ধানখেতগুলোতে হানা দেয় ধেড়ে ইঁদুর। সেখানেই গর্ত করে বাসা বাঁধে। দিনে-রাতে সমান তালে ধানের শিষ চুরি করে নিয়ে যায় সেই গর্তের ভেতর। আর ধান কাটা হওয়ার পর সেই গর্ত খুঁজে পেতে তেমন বেগ পোহাতে হয় না। সেখানেই হানা দেয় ছোট ছোট শিশু-কিশোরের দল। কোদাল দিয়ে খুঁড়ে খুঁড়ে ইঁদুরের গর্ত থেকে বের করে আনে চুরি যাওয়া সেই ধানের শিষগুলো। এ সময় অনেক হতভাগ্য ইঁদুরও বেঘোরে মারা পড়ে তাদের হাতে। প্রতিটি মাঠেই অন্তত একটি-দুটি করে ইঁদুরের গর্ত মেলে। ইঁদুরের গর্ত পেলেই তো তাদের মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়। এ ছাড়া মাঠে ধান কাটা যাওয়ার পর অনেক ধানের শিষ এমনিতেই পড়ে থাকে। সেগুলোও কুড়িয়ে নেয় ধান কুড়ানির দলেরা। এই ধান একবারেই আলাদা করে লুকিয়ে রাখে তারা। সময় হলেই বের করতে হবে যে!
আপন মনে ধান কুড়াতে ব্যস্ত থাকা এই শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে একটু খাতির জমানোর চেষ্টা করা হলো। রুপালি ও আছিয়া দূর থেকেই সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে আর ধানের শিষ তুলছে। মমিনাই এদের মধ্যে একটু বড়। ছোট ভাই মনজুও এসেছে সঙ্গে সঙ্গে। সবার সারা গায়ে লেগে আছে ছোপ ছোপ মাটির দাগ। জানতে চাই—এই ধান দিয়ে কী হবে? ‘হামরা এই ধান জড়ো করে চুড়ি-ফিতা কেনমো।’ জানায় মমিনা। আছিয়ার ইচ্ছা এই ধানের বিনিময়ে আইসক্রিম খাবে। এখন যেহেতু স্কুলগুলোও বন্ধ, তাই এ কাজের স্বাধীনতাটাও পুরোপুরি! ধান পাকার এই মৌসুমটাতে এই এলাকাগুলোতে নানা লেস ফিতার দোকানদার, আইসক্রিম বিক্রেতাসহ নানা ফেরিওয়ালা ঘুরে বেড়ায়। রাস্তা থেকে তাদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকে এসব এলাকা। তাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো বিভিন্ন বয়সের শিশুরা। আর ফেরিওয়ালাদের বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়ের মাধ্যম হলো ধান! শিশুরা গোপন আস্তানায় থাকা ধান বের করে নিয়ে আসে তখন। নিজেদের শখের জিনিসটা পাওয়ার জন্যই তো এত আয়োজন!
দলবল নিয়ে গোল করে দোকানির বিভিন্ন পসরার দিকে আগ্রহ থাকে তাদের। মনমতো রঙিন চুড়ি-ফিতা কিনতে পারাই যেন তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি আনন্দের। সাথিদের সঙ্গে নিয়ে মণ্ডা-মিঠাই বা গজাও কেনা চলে এই মাঠে কুড়ানো ধান দিয়ে। মাঠের ইঁদুরের গর্ত আর পড়ে থাকা ধান কুড়াতে কেউই কাউকে বাধা দেয় না। এর অংশীদার যেন কেবল শিশুরাই। তাদের একজনের সঙ্গে অন্যজনের তুমুল প্রতিযোগিতা চলে, কে কার থেকে বেশি ধান কুড়াবে। সে কথাই জানালেন স্থানীয় কৃষক আফজাল মিয়া। ‘এগুলা ধান হামরা তুলি না, বাচ্চারাই কুড়ি নিয়া যায়। আর সেগুলা শুকিয়া মনমতো এটা ওটা কেনে।’ জানান আফজাল মিয়া। একসময় আফজাল মিয়াও এই শিশুদের মতো ধান কুড়িয়ে অনেক আনন্দ পেতেন। আজ শিশুদের ধান কুড়ানো দেখে আনন্দ পান। তবে আগের দিনের মতো এত উৎসাহ নিয়ে ধান কুড়ানোর দলদের এখন আর তেমন দেখা মেলে না বলে জানান একই গ্রামের রমিচ উদ্দিন নামের আরেক কৃষক। ‘আগে ধান কুড়িবার আসিয়া কত মজা করচিন, ফুরতি করচিনো, এলা সেগুলা কমি গেইচে আর আগের তেমন চোখত পড়ে না।’ বললেন রমিচ উদ্দিন। খানিকক্ষণ বাদেই দূর থেকে ধান কুড়ানোর দলে থাকা শিশু-কিশোরদের মধ্যে আবারও একটা উল্লাসের শব্দ পাওয়া গেল। আবারও নিশ্চয় ইঁদুরের কোনো নতুন গর্তের সন্ধান মিলেছে। আবার খোঁড়াখুঁড়ি আর ইঁদুরের রাজ্যে হানা দেওয়া!
এই অকৃত্রিম আনন্দের ছাপটা লক্ষ করা গেল তাদের চোখেমুখে। এ আনন্দ যেন কোনো রাজ্য জয়ের প্রাপ্তিকেও হার মানায়!
==========================
শিক্ষা- আদিবাসী পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই  জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অর্থের মূল উৎস সৌদি আরব  রাজনৈতিক আলোচনা- এমন বন্ধু থাকলে...  শিল্প-অর্থনীতি শেয়ারবাজারের সুন্দরী প্রতিযোগিতা-তত্ত্ব  সাক্ষাৎকার- খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতা হবে  খবর, প্রথম আলোর-  দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখবেন না  মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন তারবার্তাঃ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলে ১০-১৫ বছর লাগবে  অধ্যাপক ইউনূসের অর্থ স্থানান্তর : গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা  শিল্প-অর্থনীতি 'সময় এসেছে মাথা তুলে দাঁড়াবার'  প্রকৃতি- 'কিয়োটো প্রটোকল ভেস্তে যাচ্ছে, কানকুনে কী হবে?  আলোচনা- 'মেয়েদের লাঞ্ছনা বন্ধ করতে কঠোর হতে হবে'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আগ্নেয়গিরির ওপরে পিকনিক'  আলোচনা- 'হিমালয়ের কোলে এক টুকরো দক্ষিণ এশিয়া'  স্মরণ- 'মানুষের জন্য যিনি জেগে থাকতেন'  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আবার আসিব ফিরে!'  আলোচনা- 'রাজকীয় সম্মেলন'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'অসারের তর্জন-গর্জন'  আলোচনা- 'একজন নোবেল বিজয়ী, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও ক্ষুদ্রঋণের ফাঁদ'  স্মৃতি ও গল্প- সেই আমি এই আমি  গল্প- 'ঘুঁটি'  আন্তর্জাতিক- অং সান সু চির মুক্তি : মিয়ানমারে কি কি গণতন্ত্র আসছে?  শিল্পি- শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদের সৃষ্টিসমগ্র  সাহিত্যালোচনা- তান তুয়ান এঙের উপন্যাস দ্য গিফট গিফট অব রেইন  খবর- বন্ধ তাবানীতে লোক নিয়োগ  ইতিহাস- আমাদের ভাববিশ্ব ও বৌদ্ধবিহার  স্মৃতি ও ইতিহাস- ঢাকায় আমার প্রথম তিন দিনের স্মৃতিরোমন্থন  আলোচনা- একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি কি হারিয়ে যাবে  আলোচনা- বাংলাদেশের সমাজ : মধ্যবিত্ত সমাচার  গল্প- দূর গাঁয়ের গল্প  সাহিত্যালোচনা- কবিতার হয়ে ওঠা  সাহিত্যালোচনা- কবিতার হয়ে ওঠাই কবির তপস্যা  পাঁচ গাড়িসহ দুই ছেলের মালপত্র বুঝে নেওয়া হলো আজ বাকিগুলো  গল্প- 'কোনো এক গাঁয়ের বিয়ে'  গল্প- মৌরস ভৌরস


দৈনিক প্রথম আলোর সৌজন্যর
লেখকঃ মোছাব্বের হোসেন


এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

1 comment:

  1. The schedule for P90 X is very demanding, about your
    back and your biceps. He was also able to copy how to p90x worksheets on its own webpage,
    P90 X Workout Plan is a bestseller. You'll find three stages called linked it to sleeplessness, while others refute this. Let's
    look are how to p90x worksheets supplied while using plan.
    Keep in mind that with P90 X and Muscle Confusion your very much distinct and simpler if
    you see the initial improvements.

    my web site have a peek here

    ReplyDelete

Powered by Blogger.