আলোচনা- রবীন্দ্রনাথের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ভাবনা by ড. আতিউর রহমান

নীর সন্তান বলে অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন_রবীন্দ্রনাথ কী করে গরিবের দুঃখ বুঝবেন? তবে রবিঠাকুর মনে করতেন, 'আমি ধনীর সন্তান, দরিদ্রের অভাব জানি নে, বুঝি নে, পল্লী উন্নয়নের কোনো সন্ধানই জানি নে, এমন কথা আমি মেনে নিতে রাজি নই।' (সম্ভাষণ, রবীন্দ্র-রচনাবলী, চতুর্দশ খণ্ড, পৃ. ৪০৪)। এ কথা সত্যি যে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথের মধ্যে দারিদ্র্য প্রসঙ্গটি স্থান করে নিল কিভাবে!
জমিদারপুত্র রবিঠাকুর কী করে গ্রামবাংলার গরিব-দুঃখী মানুষের দুঃখ-বেদনার খোঁজ পেলেন। পারিবারিক জমিদারি তদারক করতে গিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-বেদনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। গভীর ভালোবাসা ও দরদ দিয়ে তিনি শুধু যে তাদের জীবনের শিল্পিত উপস্থাপনা করেছেন তা-ই নয়, কী করে তাদের দুঃখ-বঞ্চনার অবসান ঘটানো যায়, সে লক্ষ্যে নানা উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন। শান্তিনিকেতনের পাশেই শ্রীনিকেতনের কারুপল্লী তৈরির কাজে তিনি ধন-প্রাণ সমর্পণ করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রজাদরদি জমিদার। চেয়েছিলেন পল্লী উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষকে মানবসম্পদে রূপায়ণ। সমবায় প্রতিষ্ঠা করে গ্রামীণ অর্থনীতির পুনর্জাগরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, গ্রামের উন্নতির মধ্যেই নিহিত আছে সারা দেশের উন্নয়ন। তাই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের পেশা কৃষির উন্নতি ঘটাতে পারলেই দেশের উন্নতি হবে। কৃষি বলতে শুধু ফলন বৃদ্ধি নয়, প্রয়োজন কৃষকের হাতে ন্যায্যমূল্য বা নগদ অর্থ পেঁৗছানো, যাতে কৃষক সমৃদ্ধির পথে এগোতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন মধ্যস্বত্বভোগীদের বিলোপসাধন গড়ে তোলা, দরকার কৃষিসংশ্লিষ্ট শিল্প। মূলত রবীন্দ্রনাথের পল্লী উন্নয়ন ভাবনা ছিল এ দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির অন্যতম সোপান। তিনি পল্লী সংগঠন ও সমবায়ের মাধ্যমে যথার্থভাবে অর্থনৈতিক মুক্তির বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। অল্প বয়সেই রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন, ভারতবর্ষের মূল সমস্যা হলো পল্লীর পুনর্গঠন। ছোটবেলায় পশ্চিম বাংলার দু-একটা গ্রাম ঘুরে দেখেছিলেন। এরপর ১৫ বছর বয়সে শিলাইদহে নিবিড়ভাবে গ্রামবাংলার সঙ্গে সম্পৃক্ততা। কবির ১২ বছর বয়সে লেখা 'অভিলাষ' কবিতায় তাঁর দরিদ্র কৃষকের দুঃখকষ্টের ছবি ফুটে উঠেছে। এই কবিতায় কবি বলেছেন, 'রৌদ্রের প্রখর তাপে দরিদ্র কৃষক', আবার বলেন, 'ঘর্মসিক্ত কলেবরে করিছে কর্ষণ।' বস্তুত রবীন্দ্রনাথই ছিলেন সমবায়ভিত্তিক পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির পুরোধা। তিনি মনে করতেন, মানুষ সংগঠিত হলে উন্নয়ন সহজ হয়। শিলাইদহের পুরো এলাকা কয়েকটি মণ্ডলে ভাগ করে কবি সমবায়ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করেন, যদিও তা পরবর্তী সময়ে নানা কারণে বেশি দূর যায়নি। পল্লী উন্নয়নে মণ্ডলী প্রথার পাশাপাশি সমবায় নীতি বাস্তবায়নে 'কৃষি ব্যাংক' প্রতিষ্ঠা করেন। শিলাইদহের পর ১৯০৫ সালে পতিসরেও অনুরূপ কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে নোবেল পুরস্কারের ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা তিনি এ ব্যাংকে জমা দেন। কবি অনুভব করেছিলেন, ঋণমুক্ত না হলে কৃষক কোনোভাবেই উন্নতি করতে সক্ষম হবে না। রবীন্দ্রনাথ কৃষকের আত্মশক্তির বিকাশ ঘটাতে চেয়েছেন।
পল্লী অঞ্চলে কৃষির পাশাপাশি শিল্পকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এ জন্য শ্রীনিকেতনের কৃষি ভবনের পাশাপাশি শিল্পভবন গড়ে তুলেছিলেন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এ দার্শনিক বুঝতে পেরেছিলেন, এ দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য কৃষির বহুমুখীকরণ ও শিল্পায়ন প্রয়োজন। এ জন্যই শ্রীনিকেতনে কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্পের (এসএমই) প্রসারে বাস্তবভিত্তিক উদ্যোগ নিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে তিনি যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছিলেন, তার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন পূর্ব বাংলায়। জমিদারিব্যবস্থা পরিচালনার সময় তিনি চাষিদের অভাব ও বঞ্চনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো মোচনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি চাষিকে কী করে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করা যায়, কী করে কৃষির উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার করা যায়, কী করে কৃষকসন্তানদের শিক্ষা দেওয়া যায়, কী করে কৃষকদের মহাজনি ঋণের খপ্পর থেকে বের করে আনা যায়_এমন অসংখ্য উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন।
স্বদেশের কৃষকদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে কবি নিজের ছেলে রথীন্দ্রনাথকে অঙ্ফোর্ড বা কেমব্রিজে না পাঠিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (যা তখনকার ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বা বর্তমানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক পশ্চাৎপদ ছিল) ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য। শুধু কবিপুত্র নয়, তিনি তাঁর জামাতা ও এক বন্ধুপুত্রকেও পাঠিয়েছিলেন। কবি বিশ্বাস করতেন, প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষকের এ উপমহাদেশের প্রয়োজন বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি উন্নয়ন। তিনি বলতেন, ভারতীয়দের অঙ্ফোর্ডে 'উন্নত ভদ্রলোক' হওয়ার চেয়ে ইলিনয়তে 'উন্নত কৃষক' হওয়ার শিক্ষাগ্রহণ করা প্রয়োজন। বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিপদ্ধতি প্রবর্তনে কলের লাঙল ব্যবহারের কথা বলেছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য পতিসরে সাতটি বিদেশি কলের লাঙল আনেন কলকাতা থেকে। আমেরিকা থেকে কৃষি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি শেষে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ পতিসরে আসেন; ক্ষেতে ট্রাক্টর চালান; আধুনিক কৃষি খামার প্রতিষ্ঠায় কৃষকদের উৎসাহী করেন। রথির কৃষি খামার দেখে নিউইয়র্ক থেকে আসা এক আইনবিদ মাইরন ফেলপস এতটাই অবাক হয়েছিলেন, তিনি একে মার্কিন কৃষি খামারের মতোই সফল এক উদ্যোগ বলে বর্ণনা করেছিলেন। (দেখুন, কৃষ্ণা কৃপালিণী, 'রবীন্দ্রনাথ ট্যাগর_অ্যা বায়োগ্রাফি' ইউবিএসপিডি, ২০০৮, পৃ. ১৬৩)। কৃষকের প্রচলিত জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে কৃষিবিজ্ঞানীদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার পক্ষে ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলেই গ্রামীণ মানুষের ভাগ্য বদলানো যাবে না। জনসংখ্যার যে চাপ, তাতে পুরো শ্রমশক্তিকে শুধু কৃষিতে নিয়োজিত করা সম্ভব নয়। তাই মূল ফসল ধানের পাশাপাশি ফল ও সবজি চাষের কথা যেমন বলেছেন, তেমনি হস্তশিল্পের ওপর খুব জোর দিয়েছেন।
কবি সারাক্ষণ মনের দৈন্যের কথা বেশি করে বলতেন। আর সে কারণেই তাঁর গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচির দুটো দিক ছিল : এক. স্ব-উন্নয়ন; দুই. সচেতনায়ন। দ্বিতীয় দিকটি তাঁর কাছে বেশি গুরুত্ব বহন করত। মানুষের যদি সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতার কারণে মনের শক্তি হারিয়ে যায়, তাহলে তার পক্ষে কোনো উদ্যোগেই অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রাথমিক বোধও যদি তাঁদের অন্তরে জায়গা করে নিতে না পারে, তাহলে ইহজাগতিক জীবন চলার পথ তাঁরা কী করে খুঁজে পাবেন! তিনি মনে করতেন, অজ্ঞানতার চেয়ে বড় কোনো দুর্ভাগ্য থাকতে পারে না। আর সেই অজ্ঞানতাকেই যদি মেনে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন, মানুষ হিসেবে সেটিও তাঁর জন্য বড় পাপ। আর এ পাপ থেকে মুক্তির জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। সে জন্যই তাঁর উপলব্ধি হয়েছে, 'ঐক্যবোধের দ্বারাই সকল প্রকার ঐশ্বর্যের সৃষ্টি হয়।' (রবীন্দ্র রচনাবলী, চতুর্দশ খণ্ড, পৃ. ৩১২)। সমবায় নীতি প্রবন্ধে তিনি কালান্তরের কথা বলেছেন। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের শক্তিকে সাধারণের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। মানুষের কর্মশক্তি আরো ব্যাপক করার জন্য যন্ত্রকে গ্রহণ করতে বলেছেন। শক্তিকে খর্ব না করে সংহত করে সাধারণের কল্যাণে প্রয়োগ করতে বলেছেন। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বলেছেন। 'একদিন পায়ে হাঁটা মানুষ যখন গোরুর গাড়ি সৃষ্টি করল তখন সেই গাড়িতে তার ঐশ্বর্য প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সেই গোরুর গাড়ির মধ্যেই আজকের দিনের মোটরগাড়ির তপস্যা প্রচ্ছন্ন ছিল। যে মানুষ সেদিন গোরুর গাড়িতে চড়েছিল সে যদি আজ মোটরগাড়িতে না চড়ে তবে তাতে তার দৈন্যই প্রকাশ পায়। যা এককালের সম্পদ তা-ই আর এককালের দারিদ্র্য। সেই দারিদ্র্যে ফিরে যাওয়ার দ্বারা দারিদ্র্যের নিবৃত্তি শক্তিহীন কাপুরুষের কথা।' (সমবায় নীতি, রবীন্দ্র রচনাবলী, চতুর্দশ খণ্ড, পৃ. ৩২৯)। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস করতেন, পল্লীবাসী উপেক্ষিত। গ্রামবাংলার এ দৈন্য গ্রামীণ মানুষ সৃষ্টি করেনি। শহরের এলিটরাই গ্রাম থেকে সম্পদ শুষে এনে বৈষম্যের পাহাড় গড়েছেন। এ অবস্থা অবসানের জন্যই তিনি সারা পৃথিবীর আলো পল্লীতে ফেলতে বলেছেন। পল্লীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তাঁর সুগভীর। সমবায় সম্পর্কিত প্রবন্ধগুলোর ভূমিকায় তিনি আমাদের মাতৃভূমির যথার্থ স্বরূপের কথা বলেছেন। গ্রামের মধ্যেই যেন আমাদের আসল প্রাণশক্তি নিহিত রয়েছে, সে কথা নানাভাবে বলার চেষ্টা করেছেন। 'মাতৃভূমির যথার্থ স্বরূপ গ্রামের মধ্যেই; এইখানেই প্রাণের নিকেতন; লক্ষ্মী এইখানেই তাহার আসন সন্ধান করেন।' (পরিশিষ্ট, রবীন্দ্র রচনাবলী, চতুর্দশ খণ্ড, পৃ. ৩৩২)।
প্রাচীন ভারতবর্ষের গ্রামীণ জীবনের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা নিয়েও রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন, পরিবর্তিতকাল গ্রামীণ অর্থনীতির ভিত ধ্বংস করে দিয়েছে এবং তার আদি রূপে গ্রাম আর বেঁচে থাকতে পারবে না। গ্রামীণ অর্থনীতির সহজ-সরল ধরন ইউরোপের শিল্পবিপ্লব অকেজো করে দিয়েছে। যন্ত্রের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার উৎপাদন বাড়িয়ে বৃহত্তর বাজারের চাহিদা তৈরি করেছে। নতুন যুগের দাবির কালে ভারতীয় পল্লী সেদিকে ফিরে তাকায়নি এবং তার ফল হয়েছে এই যে, সে স্থানু ও মৃতকল্প হয়েছে। খাদ্য অপ্রতুল ও ঘরবাড়ি হতদরিদ্র হয়েছে এবং পথঘাট, পানীয় জল ও অন্য সামাজিক সেবামূলক কর্মাদি প্রায় অজ্ঞাত রয়ে গেছে। অনটন, জীর্ণদশা, দারিদ্র্য, অজ্ঞানতা ও ব্যাধি রাজ্যপাট গেড়েছে এবং যারই সামর্থ্য আজ সে-ই গ্রাম ছেড়ে শহর অভিমুখে ছুটছে। এই নগরমুখিনতা অবশ্য আধুনিক ভারতেরই বৈশিষ্ট্য, এমন নয়; কেননা শতাব্দীর পর শতাব্দীজুড়ে সর্বত্রই যোগ্য ও উদ্যোগী মানুষরা পল্লী অঞ্চল ছেড়ে নগরের পানে ঝুঁকেছে। কিন্তু নগরে অনেক বেশি ধনের সমাবেশ ঘটায় একসময় গ্রিক সভ্যতা ভেঙে পড়েছিল। তাই শহর ও গ্রামের অর্থনীতির মাঝে ভারসাম্য রাখার পক্ষে ছিলেন তিনি। কিঞ্চিতধিক ষাট বছর আগে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, এই দুষ্টচক্র কেবল তখনই ভাঙতে পারে যখন পল্লী গ্রামের উন্নতি সাধন করে নগর ও গ্রামের মধ্যকার ব্যবধান কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। নাগরিক জীবনে লভ্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আত্মপ্রকাশের সুযোগ-সুবিধা গ্রামীণ জীবনে পাওয়া গেলে যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষজন গ্রামেই থেকে যাবে। উপরন্তু বাইরে থেকে দাক্ষিণ্য রূপে এসব পরিবর্তন এনে চাপিয়ে দিলে কোনো ফল ফলবে না, অবশ্যই তা ঘটাতে হবে পল্লীবাসীর নিজস্ব উদ্যোগ ও তাদের অভ্যন্তরীণ সামর্থ্যকে প্রণোদিত করার দ্বারা। বড় আকারে সমবায়ব্যবস্থা ও আধুনিক উপকরণ-পদ্ধতি প্রচলনেই শুধু তা সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথ পল্লী উন্নয়নের সঙ্গে মনুষ্যত্বের বিকাশের কথা বলেছেন। সে জন্য তিনি শ্রীনিকেতনে শিক্ষা সম্প্রসারণের পাশাপাশি কৃষি, কুটির ও কারুশিল্প, বয়ন, চামড়াশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ, চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্যসহ সমবায়ভিত্তিক নানা আর্থসামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। রবিঠাকুর বিশ্বাস করতেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে এসব কর্মের সমন্বয় সাধন আত্মশক্তির উদ্ভব ঘটাবে। শ্রীনিকেতন হয়ে উঠবে আত্মশক্তির এক অপূর্ব সাধনার প্রতীক। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ছাত্ররা গড়ে তুলবে উন্নয়নভিত্তিক গ্রাম। রবীন্দ্রনাথ পল্লী উন্নয়নে গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গ্রামের মানুষের মধ্যে আত্মশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। করুণার পাত্র নয়, আত্মমর্যাদাশীল মানুষে পরিণত করতে চেয়েছেন। যারা গ্রামকে অবহেলা করে, তারা নিজেদেরই বঞ্চিত করে। আমরা নগর তৈরি করছি গ্রামকে লুণ্ঠন করে। গ্রামীণ লোকজনের ভেতরে সমবায় ও আত্মশক্তির বিকাশের মাধ্যমে গ্রামের যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক পুনর্গঠনের রূপরেখা তিনি দিয়েছিলেন, তা সমকালীন ভারতে জাতীয় জীবন পুনর্গঠনের রূপরেখার ছক প্রতিষ্ঠা করেছে এবং পৃথিবীর উন্নয়নকামী দেশগুলোয় মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের পল্লী সমাজ চিন্তা পরবর্তীকালে স্বদেশি সমাজ ভাবনায় রূপান্তরিত হয়েছে। কবির ভাষায়, 'এইবার সময় আসিয়াছে যখন আমাদের সমাজ একটি সুবৃহৎ স্বদেশী সমাজ হইয়া উঠিবে। সময় আসিয়াছে যখন প্রত্যেকে জানিবে আমি একক নহি, আমি ক্ষুদ্র হইলেও আমাকে কেউ ত্যাগ করিতে পারিবে না এবং ক্ষুদ্রতা সত্ত্বেও আমি ত্যাগ করিতে পারিব না।' (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বদেশী সমাজ, বিশ্বভারতী, কলকাতা, পুনর্মুদ্রণ ১৩৯৩, পৃ. ২২)।
সবশেষে রবীন্দ্রনাথ আত্মশাসনের পক্ষে জোরালো কথা বলেছেন। এখন সর্বসাধারণকে নিজের মধ্যেই নিজের শক্তি উদ্ভাবন করতে হবে, তাতেই তার স্থায়ী মঙ্গল। এমনই এক বাস্তবতায় আমাদের নতুন করে উন্নয়ন ভাবনা ভাবতে হবে। আমাদের আর্থসামাজিক চিন্তা ও চেতনায় তথা নয়া বুদ্ধিবৃত্তিক জমিনের মূল ভিত্তিতে রবীন্দ্রনাথকে দাঁড় করাতে পারলে আমাদের আগামী দিনের চলার পথ অনেকটাই সহজ হবে বলে আমার বিশ্বাস।
================================
আলোচনা- 'ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ঠাঁয় নেই দরিদ্রর উচ্চ শিক্ষা  বিশেষ আলোচনা- ফিরে দেখা গঙ্গা চুক্তি  আলোচনা- 'সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক'  আলোচনা- 'উইকিলিকসে বাংলাদেশ, তারপর?  আলোচনা- 'ওয়াংগালাঃ গারোদের জাতীয় উৎসব'  স্মরণ- 'বাঘা যতীনঃ অগ্নিযুগের মহানায়ক'  খবর, কালের কণ্ঠের- আগেই ধ্বংস মহাস্থানগঃ হাইকোর্টের নির্দেশে কাজ বন্ধ  কেয়ার্নের সঙ্গে স্বার্থবিরোধী চুক্তির পেছনেও জ্বালানি উপদেষ্টা  উইকিলিকস জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আত্মসমর্পণ  সবুজ মাঠ পেরিয়ে  আলোচনা- 'আরো অনুদানের টাকা সরিয়েছিলেন ইউনূস'  আলোচনা- 'একটি 'উজ্জ্বল ভাবমূর্তির' এভারেস্ট থেকে পতন  গল্পালোচনা- 'আসি আসি করে আশিতে আসবে!'  রাষ্ট্র ও রাজনীতিঃ সবুজ মাঠ পেরিয়ে  স্মরণ- 'রবীন্দ্রনাথ—সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে'  স্মরণ- 'জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী'  আলোচনা- 'প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন পর্যায়'  আলোচনা- 'কর্মপরিবেশঃ স্বর্গে তৈরি'  গল্পালোচনা- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...’  আন্তর্জাতিক- উইকিলিকসঃ হাটে হাঁড়ি ভাঙা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  গল্পসল্প- ওরা ধান কুড়ানির দল  শিক্ষা- আদিবাসী পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই  জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের অর্থের মূল উৎস সৌদি আরব  রাজনৈতিক আলোচনা- এমন বন্ধু থাকলে...  শিল্প-অর্থনীতি শেয়ারবাজারের সুন্দরী প্রতিযোগিতা-তত্ত্ব  সাক্ষাৎকার- খাদ্যনিরাপত্তার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজতা হবে  খবর, প্রথম আলোর-  দলীয় স্বার্থ বড় করে দেখবেন না  মার্কিন কূটনীতিকদের গোপন তারবার্তাঃ পাকিস্তানে জঙ্গি নির্মূলে ১০-১৫ বছর লাগবে  অধ্যাপক ইউনূসের অর্থ স্থানান্তর : গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাখ্যা  শিল্প-অর্থনীতি 'সময় এসেছে মাথা তুলে দাঁড়াবার'  প্রকৃতি- 'কিয়োটো প্রটোকল ভেস্তে যাচ্ছে, কানকুনে কী হবে?  আলোচনা- 'মেয়েদের লাঞ্ছনা বন্ধ করতে কঠোর হতে হবে'  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আগ্নেয়গিরির ওপরে পিকনিক'  আলোচনা- 'হিমালয়ের কোলে এক টুকরো দক্ষিণ এশিয়া'


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যর
লেখকঃ ড. আতিউর রহমান
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর


এই অলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.