সেই অ্যাডিলেডেই ইংল্যান্ডের উৎসব

ভরসার একটি শেষ কাল খেলা শুরুর অনেক আগেই। অ্যাডিলেডের ঝকঝকে আকাশ পন্টিংদের জানান দিচ্ছিল, বৃষ্টির আশা বাদ দেওয়াই ভালো। ভরসার আরেক জায়গা শেষ খেলা শুরুর মিনিট বিশেকের মধ্যে। দিনের ষষ্ঠ ওভারে স্টিভেন ফিনকে পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুললেন মাইক হাসি, মিড উইকেটে জেমস অ্যান্ডারসন যেন বল নয়, ধরলেন ইংল্যান্ডের জয়কে।
লোয়ার অর্ডার? ওয়ার্ন-লি-গিলেস্পিদের শূন্যতা অস্ট্রেলিয়াকে বোলিংয়ে অবশ্যই ভোগায়, ব্যাটিংয়েও কি নয়? ওয়ার্নদের সময় লেজ থেকে বড় রানের জোগান আসত অস্ট্রেলিয়ার, এই অস্ট্রেলিয়ার লেজ টিকটিকির লেজের মতো!
অ্যাডিলেডের আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামল দুপুর দুইটা পাঁচে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া শেষ এর অনেক আগেই। স্বাগতিকদের টেস্ট বাঁচানোর আশা আসলে ফিরে গেছে হাসির সঙ্গী হয়েই। দ্বিতীয় নতুন বলে তৃতীয় ওভারেই মূল বাধাকে সরানোর পর জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে ইংল্যান্ডের সময় লেগেছে ঘণ্টা দেড়েক। ১১৮ বছর পর অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়াকে ইনিংস পরাজয়ের লজ্জায় ডুবিয়ে চার বছর বয়ে বেড়ানো ভূতটাকে মাটিচাপা দিয়েছে ইংল্যান্ড। ২০০৬-এর ডিসেম্বরে অ্যাডিলেডে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫১ রানে ইনিংস ঘোষণা করেও ইংল্যান্ড যাচ্ছেতাইভাবে হেরেছিল দ্বিতীয় ইনিংসে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায়।
অ্যাশেজ ধরে রাখায় এক পা এগিয়ে যাওয়ার চেয়েও ইংল্যান্ড শিবিরে বেশি আনন্দ চার বছর আগের ভূত তাড়ানোয়। ওই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১৫৮ করেও পরাজিত দলে থাকা পিটারসেনের প্রতিক্রিয়া, ‘সেরা অনুভূতিটা হয়েছে এবার ম্যাচ জিতে ড্রেসিংরুমে ঢোকার পর। চার বছর আগের ড্রেসিংরুম ছিল ভয়াবহ—নীরব ও নেতিবাচক একটা ড্রেসিংরুম, এখনকার মতো ঐক্যও ছিল না তখন।’ স্ট্রাউসের কণ্ঠেও ছিল একই সুর, ‘চার বছর আগের ভূতটাকে চাপা দেওয়াই সবচেয়ে বড় স্বস্তি। গত কিছুদিন আমরা অসাধারণ খেলেছি। আপনি আত্মবিশ্বাসী থাকলে অনেক কিছুই পক্ষে ঘটতে থাকবে, সেটির জন্য জীবনপাত করতে হবে না।’
শুধু ভূত তাড়ানোই নয়, স্ট্রাউসের দলের অর্জনের খাতাটা সমৃদ্ধ হয়েছে নানাভাবে। এই জয়েই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের সেঞ্চুরি হলো ইংলিশদের। সেটিও দুই যুগ পর অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ইনিংসে হারানোর মাধ্যমে। সর্বশেষ কীর্তিটি ছিল ১৯৮৬ সালের বক্সিং ডে টেস্টে মাইক গ্যাটিংয়ের দলের। সব মিলিয়ে ১৯৯৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পার্থ টেস্টের পর এই প্রথম অস্ট্রেলিয়া দেশের মাটিতে ইনিংসে হারল। কাল শেষ ৩ উইকেট নিয়ে ২৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে দশমবারের মতো ইনিংসে ৫ উইকেট হয়ে গেছে সোয়ানের। ১৯৭৫ সালে ডেরেক আন্ডারউডের (৭/১১৩) পর অ্যাডিলেডে প্রথম ৫ উইকেট পেলেন কোনো ইংলিশ স্পিনার।
বরাবরই রান-প্রসবা অ্যাডিলেডের উইকেটে ৩ উইকেটে ২ আর প্রথম ইনিংসে ২৪৫, অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের ধারণা ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে গেছে ওখানেই, ‘এমন জঘন্য শুরুর পর ফিরে আসা কঠিন। আমাদের প্রয়োজন ছিল বড় একটা রান, ২৪৫ মোটেও যথেষ্ট ছিল না। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং—সব দিক দিয়েই ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল আমাদের চেয়ে। ওরা আমাদের খুব চাপে রেখেছিল, আমাদের এ থেকে পথ খুুঁজে বের করতে হতো।’
অস্ট্রেলিয়া পথ খুঁজে পায় কি না, উত্তর মিলবে সপ্তাহ দেড়েকের মধ্যেই, ১৬ ডিসেম্বর শুরু পার্থ টেস্ট।

No comments

Powered by Blogger.