ম্যাচ হতে দেবে তো বৃষ্টি

কুসংস্কারবাদী হলে বলা যেত, এটা একটা অলক্ষুনে সিরিজ! এই সিরিজে কিছুই ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে না। হোয়াইটওয়াশের আশা নিয়ে খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই হার। ফ্লাডলাইটের সমস্যায় দিবারাত্রির ম্যাচ চলে আসে দিনে। এখন চট্টগ্রামও খাচ্ছে নিম্নচাপের লেজের বাড়ি!
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের নিম্নচাপটি কেটে গেলেও সেটির প্রভাবজনিত বৃষ্টি বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কিউরেটর জাহিদ রেজাকে। কাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় গ্রাউন্ডসম্যানদের নিয়ে ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে মাঠের পানি সরানোর কাজ করছিলেন তিনি। মাঠ থেকে জানালেন সর্বশেষ পরিস্থিতি, ‘রাতে যদি আর বৃষ্টি না হয় তাহলে আশা করি, কাল (আজ) দেরিতে হলেও খেলা শুরু হবে। তবে বৃষ্টি হলে ম্যাচ আয়োজন কঠিন হয়ে পড়বে।’ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে আজকের চতুর্থ ওয়ানডেটি তাই অনিশ্চিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আকাশ আর মাঠের দিকে।
চট্টগ্রামের আকাশ কাল সকাল থেকেই মুখ গোমড়া করে ছিল। সকালে জিম্বাবুয়ের অনুশীলনের সময় তো ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও হয়ে গেল একপশলা। তবে বৃষ্টিটা ঝমঝমিয়ে নামল দুপুরে বাংলাদেশ দল অনুশীলনে নামামাত্র। ফুটবল নিয়ে মাঠে নামলেও গা-গরম তাই আর হলো না। বৃষ্টির মধ্যে ঘণ্টা তিনেক অনুশীলন হয়েছে ইনডোরে। বৃষ্টি শুধু অনুশীলনেই বিঘ্ন ঘটায়নি, আজ খেলা হলে দলেও আনতে পারে পরিবর্তন। শুরুতে আগের ম্যাচের দলটাকেই এ ম্যাচে খেলানোর কথা থাকলেও বৃষ্টির উৎপাতে একটা বিকল্প সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা হয়েছে। খেলা দেরিতে শুরু হয়ে যদি এটি কর্তিত ওভারের ম্যাচ হয়, সে ক্ষেত্রে দলে একজন ব্যাটসম্যান অদল-বদল হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের খবর। সম্ভাব্য বাদ পড়া ব্যাটসম্যানটি জুনায়েদ সিদ্দিক হওয়ার সম্ভাবনা শোনা যাচ্ছে। তাঁর জায়গায় দলে ফেরার দরজা খোলা মোহাম্মদ আশরাফুল ও মাহমুদউল্লাহ—দুজনের সামনেই।
বাংলাদেশ দল অবশ্য মনে করছে, বৃষ্টি চট্টগ্রামে দুই ম্যাচের কোনোটিই হতে দেবে না। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও এই ধারণাকে সমর্থন করছে। কাল দুপুর আর সন্ধ্যার বৃষ্টিতেই চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৩ মিলিলিটার। পূর্বাভাস বলছে, হালকা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হবে আজ-কাল দুই দিনই। এই আবহাওয়াবার্তা যদি ভুলও প্রমাণিত হয়, চতুর্থ ম্যাচ নিয়ে শঙ্কা জাগাতে কালকের বৃষ্টিটাই যথেষ্ট। চট্টগ্রামের মন্থর আউটফিল্ড এমনিতেই বড় বড় ঘাসে ঢাকা। তার ওপর মাঠের একটা জায়গায় নাকি বৃষ্টির আগেই কাদার মতো থকথকে হয়ে ছিল! বৃষ্টির পর সেটির কী অবস্থা হবে, তা তো অনুমান করাই যায়।
তার পরও বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দুই দল এবং আয়োজকদের কালকের সব প্রস্তুতি ছিল আজকের ম্যাচটি হবে ধরে নিয়েই। বাংলাদেশ দলের হয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজা যেমন বলে গেলেন এ ম্যাচের উইকেটের স্পিন-প্রিয়তার কথা, ‘এখানকার উইকেটে সব সময়ই ঢাকার চেয়ে বেশি স্পিন ধরে। তিন দিনের প্র্যাকটিসে এসে তো দেখেছি অন্যবারের চেয়ে ডাবল স্পিন হচ্ছে! ম্যাচেও স্পিন ধরবে বলেই ধারণা করছি আমরা।’ তবে স্পিন শক্তিতে যেহেতু জিম্বাবুয়েও সমান বলীয়ান, একটা সতর্কবার্তা শুনিয়ে দিলেন তিনি দলের ব্যাটসম্যানদের, ‘ওদেরও (জিম্বাবুয়ে) ভালো স্পিনার আছে। আমাদের ব্যাটিং তাই আরও ভালো করা দরকার। গত ম্যাচে কিন্তু সাকিব-মুশফিকুরের জুটি না হলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম। এই উইকেটে কেউ রান পেলে তাকে অবশ্যই বড় ইনিংস খেলতে হবে।’
জিম্বাবুয়ে দল অবশ্য উইকেট-আবহাওয়া কোনো কিছু নিয়েই ভাবছে বলে মনে হলো না। তাদের ভাবনায় একটা চ্যালেঞ্জই ঘুরপাক খাচ্ছে—সিরিজে ফিরতে হবে। আর সেই চ্যালেঞ্জের দিনে দলটার জন্য বড় সুখবর, কুঁচকির ইনজুরি কাটিয়ে আজ সম্ভবত দলে ফিরছেন অধিনায়ক এলটন চিগুম্বুরা।
সবার আগে একটাই শর্ত—বৃষ্টির বাধা কাটিয়ে আজকের ম্যাচটা হতে হবে। তবে খেলা হলে যেহেতু অপ্রস্তুত আউটফিল্ড আর রহস্যময় উইকেটের আচরণ নিয়েও একটা শঙ্কা থাকে, এ ম্যাচ না হলেও বোধ হয় খুশি হওয়ার লোক পাওয়া যাবে।

No comments

Powered by Blogger.