জিডিপিতে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় প্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ানো যাচ্ছে না। এসব সমস্যার সমাধান করা হলে প্রবৃদ্ধির হার সহজেই ৮ থেকে ১০ শতাংশে অর্থাৎ দুই অঙ্কে উন্নীত করা সম্ভব।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ২০৩০: প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশল’ সংক্রান্ত দিনব্যাপী এক সম্মেলনের ‘প্রবৃদ্ধির নতুন নিয়ামকের খোঁজে’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন, বিমান, তথ্যপ্রযুক্তি, আসবাবপত্র ও কারিগরি শিক্ষা প্রভৃতি খাতের উন্নয়নের তাগিদ দেন।
রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এই সেমিনারে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সার্ক চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক। এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেনেভাভিত্তিক আইটিসির বাজার উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক উইলেম ভ্যান ডের জিস্ট। আলোচনায় অংশ নেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি লতিফুর রহমান এবং এমসিসিআইয়ের সহসভাপতি ও অ্যাপেক্স এডেলকি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হোসেন খালেদ।
উইলেম ভ্যান ডের জিস্ট বলেন, বাংলাদেশে দরিদ্রতা কমাতে হলে রপ্তানি আয় বাড়াতে হবে। আর রপ্তানি আয় বাড়াতে হলে পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। এ জন্য বিদ্যুৎ, অবকাঠামো ও শিক্ষাব্যবস্থাসহ বেসরকারি খাতের উন্নয়ন সাধন জরুরি। তিনি রপ্তানি আয় বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
ভ্যান ডের জিস্ট আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সফটওয়্যার রপ্তানি হলেও এর পরিমাণ খুব কম। তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করলে বাংলাদেশও এই খাত থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারবে।
লতিফুর রহমান দেশে গ্যাসের পরিবর্তে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রয়োজন রয়েছে। তবে স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে না। স্থানীয় বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ভালো হলেই কেবল বিদেশি উদ্যোক্তারা কোনো দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হন।
লতিফুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের অনেক উদ্যোক্তা এখন বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছেন। এই সুনাম কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু দেশীয় উদ্যোক্তাকে বিদেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
আনিসুল হক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে ভালো অবকাঠামোর পাশাপাশি স্থিতিশীল রাজনীতিও প্রয়োজন। সংঘাতময় রাজনীতি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে, যা দেশের রপ্তানি আয় বাড়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের রপ্তানিও বাড়াতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে তিনি সরকারিভাবে নীতি-সহায়তার তাগিদ দেন।
নাসিম মঞ্জুর বলেন, বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানি খাতে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। কিন্তু দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করতে পারলে এই আয় আরও অনেক বাড়ত। তিনি দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়াতে স্থানীয়ভাবে ইলেকট্রনিক শিল্প স্থাপন, আসবাবপত্রশিল্পের বিকাশ, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন ও অধিক মূল্য সংযোজন হয় এমন ধরনের পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেন।
হোসেন খালেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পর্যটন, অটোমোবাইল, জাহাজ নির্মাণশিল্প, বিমান পরিবহনসহ নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অবস্থানগত কারণে অন্যান্য দেশের বিমানে তেল সরবরাহের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তিনি দেশে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশের বিষয়ে জোর দেন।

No comments

Powered by Blogger.