আলোচনা- 'বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা' by বেলাল চৌধুরী

আর্হেন্তেনীয় আইনজীবী একই সঙ্গে সাংবাদিক এবং প্রকাশক রোডোলফো এইচ তেররাগনো, আজকের লাতিন আমেরিকায় লেখালেখির ব্যাপারটা যে কতটা বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ

কাজ তার একজন প্রধান সাক্ষী। ১৯৭৬ সালে সামরিক অভু্যত্থানের পর থেকে তার জীবনের ওপর হুমকি আসার ফলে রোডোলফো তার সম্পাদিত বিপস্নবী সাময়িকী 'কুয়েশশনারিও'র প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়ে দেশের বাইরে চলে যান। পরে অবশ্য 'ব্রেভিয়ারিয়ো'র প্রতিষ্ঠা করেন। অতি সম্প্রতি তিনি এল ডায়ারিও দা কারকাস-এর সম্পাদক হিসেবে ভেনিজুয়েলাতে সংবাদ প্রতিবেদনে যুগান্তর এনেছেন। লাতিন আমেরিকার বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে রোডোলফো বলেছেন,
'সত্য ব্যাপারটা কখনওই চিৎকার নয়'; বুদ্ধিজীবীরা যে সব সময় যুক্তিযুক্ততার সপক্ষে তাও নয়। সুতরাং তারা সর্বদা শক্তিমত্তার বিরুদ্ধে- এই ভাবনাটাই আসলে একটা ভুল ধারণা বরং তাদের দেখা যেতে পারে এবং দেখা যায়ও তারাই দেশে দেশে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে সামরিক জেনারেলদের কানে ফিস ফিস করছেন।একনায়কদের বক্তৃতা তৈরি করছেন কিংবা স্বৈরাচারী নিপীড়নের ন্যায্যতাকে সমর্থন করার জন্য কেউ কেউ আইন ও ব্যবহার শাস্ত্রের পাতা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। মানুষের বুদ্ধিমত্তা সাধারণত দ্ব্যর্থক হয়। আর একথা তো সর্বজনবিদিত যে, 'বুদ্ধিজীবীরা হচ্ছেন সেই ভয়ঙ্কর প্রাণী যারা অতি সহজেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন।'
বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা আলোচনা করতে গেলে, বিশেষ করে যে সব দেশ রাজনৈতিক নিপীড়নের অধীন, এটা অপরিহার্যভাবে উলেস্নখ করতে হবে যে, আমরা সেই সব বুদ্ধিজীবীদের কথাই বলছি যারা তাদের পারিপাশ্বর্িক হাল-অবস্থার বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেছেন। এ ধরনের বিদ্রোহের প্রকৃত অর্থ কি এবং সম্ভাব্য বিপদের ঝুঁকিই বা কতটুকু। বোধশক্তির মূল লক্ষ্য হচ্ছে কার্যকারণ খুঁজে বের করে প্রথমে বোঝা এবং তারপরেই কেবল অনুপুঙ্খ বিচারপূর্বক সিদ্ধান্তে আসা। এটা একটা ধ্বংসাত্মক কাজ। আক্ষরিক অর্থে এর মধ্যেই বিদ্যমান থাকে সত্যের সরকারী ভাষ্যের সর্বনাশ ও ধ্বংসীকরণ। সরকারী বাগাড়ম্বরের সঙ্গে মিলে একাকার হয়ে যাওয়া কি করে এবং কি পরিস্থিতিতে একনায়কত্ব সম্ভব সেটাকে উন্মোচন করা, সেই সঙ্গে যারা স্বৈরশক্তিকে নিয়ন্ত্রিত করে তাদের অবলম্বিত উদ্দেশ্য নিয়েই এইসবের সূচনা।
সামরিক বাহিনীর উৎপত্তির ব্যাপারটা পুঙ্খানুরূপে পরীক্ষা করা, কৃত্রিম গণতন্ত্রের বুলি আর দেশের তথাকথিত ত্রাণকর্তা হিসেবে বন্দুক উঁচিয়ে বলপূর্বক ক্ষমতা দখলকার এই দুইয়ের মধ্যে একটা স্থায়ী দোদুল্যমান পরিস্থিতির কার্যকারণ খুঁজে বের করার ভেতর দিয়েই বুদ্ধিজীবীদের বিদ্রোহের নিজস্ব চরিত্রকে ব্যক্ত করা উচিত। সেই সঙ্গে পুতুলনাচের আয়োজকদের স্বরূপও উন্মোচন করে দেখাতে হবে যে, তারা কিভাবে মঞ্চের ওপর আমাদের দেখা অদ্ভুত বিয়োগান্ত চরিত্রের পুতুলগুলিকে নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য বিপুলভাবে কাজে লাগাচ্ছে।
এসব রহস্যোদঘাটন আবার শুধুমাত্র প্রকৃত সত্যকে অনাবৃত করার জন্য সুচিন্তিতভাবে রচিত নিবন্ধে দেখা গেলেই চলবে না। সময় সময় টুকরো টুকরোভাবে উপন্যাসের চরিত্রের মুখ থেকেও নিঃসৃত হতে হবে, কৌশলে পরোক্ষভাবে চিত্রকলায়ও দেখা যেতে হবে কিংবা জনপ্রিয় কোনও গানের কথাতেও ঢুকিয়ে দিতে হবে। আসলে উপলব্ধির ব্যাপারটা একটা বিরাট ধাঁধার মতো। যাবতীয় সূত্রগুলো একত্রিত করার জন্য কোনও একজনের হাতে সবগুলো সূত্র থাকে না। যার ফলে বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব ঢের বেড়ে যায়। তাদের মেনে নিতে হয় যে, পুরো ধাঁধাটা সমাধান করতে হলে সম্ভাব্য সমস্ত সূত্রগুলোকে প্রথমে একজোট করে নিতে হবে। একমাত্র তারপরেই সমাধান সম্ভব হলেও হতে পারে। সুতরাং সূত্রগুলোর সমন্বয় সাধনই হবে প্রধান কাজ। অবশ্য এর জন্য তাকে যে ঝুঁকি নিতে হবে সেটা খুবই কঠিন। তবে এটাও ঠিক যে, অন্যান্য ক্ষেত্রের বিদ্রোহীদের তুলনায় এই ঝুঁকি তেমন একটা খুব বেশি কিছু নয়। বুদ্ধিজীবীদের আর একটা সুবিধা তারা ইচ্ছে করলে ছদ্মনামের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকতে পারেন এই সুবিধাটুকুও তাদের একটা বিশেষ অস্ত্রবিশেষ।
বুদ্ধিজীবীদের কাছে নানা প্রত্যাশার ভেতর নম্রতাই একজন সাধারণ মানুষের কাম্য হতে পারে। আর অপরটি হচ্ছে ধৈর্যশীলতা, কারণ সত্যকে কখনও হ্রস্বীকৃত করা যায় না। ধৈর্য কখনওই তাৎক্ষণিক হয় না আর কেবলমাত্র একবারের জন্যেও অর্জন করা যায় না। সুতরাং এসব দাবী বুদ্ধিজীবীদের ওপর এমন একটা বিশেষ স্বীকৃতির বিরাট বোঝা চাপিয়ে দেয়। যার জন্য হয়তো অনেকেই প্রস্তুত থাকে না। আত্মশস্নাঘাকে দমন করা খুব সহজ কাজ নয়। কারণ এই আত্মশস্নাঘাই সমস্ত প্রতিকূলতার সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করে সত্যের প্রথম খেতাবটি দিতে চায়। প্রতিফলন দিয়ে চিৎকারকে প্রতিস্থাপন করা খুবই কঠিন কাজ। বুদ্ধিজীবীরা প্রায়শই শ্রেণীগত বিচু্যতিতে অধঃপতিত হয়ে প্রচার এজেন্টে পরিণত হন।
তখন তারা নির্বাসনে থেকে প্রকৃত লড়াইয়ের ময়দানের বহুদূরে থেকে শুধুমাত্র অভিযুক্ত করার কাজে তাদের সমস্ত শক্তিকে নিয়োজিত করেন। একনায়করা যেসব অপরাধমূলক কাজ-কর্ম করে সেগুলোকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে প্রয়াসী হন। কাজটা নিঃসন্দেহে তুচ্ছ নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই একটা জায়গাতে তারা কখনওই সরকারি বা সরকার সমর্থক প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। মৃতের প্রতি কবিতা লিখে, নির্যাতনকারীদের কঠোর ভয়ভীতি দেখিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সোচ্চার দাবি জানিয়ে তিনি হয়তো তার বুকের পাষাণ ভারকে কিছুটা লাঘব করলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটা করতে গিয়ে তিনি যে তার মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেলেন সেটাই টের পেলেন না। কেবল কান্না আর উলস্নাসে তিনি তার পরিসরকে সীমাবদ্ধ করে আনলেন, যার মতে এগুলো হচ্ছে এক বিপজ্জনক খেলা আর এই খেলার ভেতর থেকে বুদ্ধিজীবীরা একটা কাজই করতে পারেন সে কাজ হল বোঝা, অর্থাৎ বিদ্রোহী বুদ্ধিজীবীদের সামনে একটা কাজই থাকে, নিজেকে বোঝা আর অন্যদের সঠিক পরিস্থিতিকে বুঝতে সাহায্য করা। আর এই কাজ করতে গিয়ে নিজেকে বা অন্যদের আহত করার সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে তাকে। ব্যাখা-বিশেস্নষণ বিপথগামী মতামতকে উন্মোচিত করে ঠিকই; কিন্তু সহজেই পীড়িতও করতে পারে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যেতে পারে, আর্হেন্তিনা কেন অতল খাদে পড়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছে, কেন প্যারাগুয়ে স্ট্রোয়েসলারের হাত থেকে মুক্ত হতে পারছে না আর এল সালভাদর কেনইবা অনবরত রক্তক্ষরণে মৃতু্য পথযাত্রী, সেসব প্রশ্নের উত্তর অতি অবশ্যই খুঁজে দেখতে হবে। সকল মহলই যাতে একমত হতে পারে এমন আত্মপ্রসাদপূর্ণ ব্যাখা সযত্নে পরিহার করে চলাই বাঞ্ছনীয়।
কয়েক দশক আগে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ঠিক পরে এক মার্কিন সাংবাদিক যুদ্ধে মানুষের অপরাধিত্ব নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। তার মতে হিটলারের কৃত অপরাধের দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করে কোনও অবস্থাতেই জার্মানরা নিজেদের নিরপরাধী বলে দাবি করতে পারে না। যেমন পারে না হিরোশিমার ধ্বংসযজ্ঞ বিষয়ে উত্তরাঞ্চলীয় মার্কিনীরা। অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের ক্ষেত্রেও যৌথ দায়-দায়িত্ব প্রয়োগ হতে পারে। যুযুধান যে কোনও জনগোষ্ঠী নিজেরাও যে রকম শিকার বা বলি হয় একথা যেমন সত্য, তেমনই তাদের নিজেদের স্বীয় অপরাধবোধের দায়-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া যায় না। সুতরাং লাতিন আমেরিকার নাটকগুলো সংগঠিত বিশ্বের শুধু একটা সরল ন্যায় তদুপরি সুদূরপ্রসারী ফলাফল তা নয়, শক্তিশালী সংখ্যালঘু স্বার্থপরতা এবং যেসব সুবিধাভোগী ভাবে যে, তাদের প্রকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা ঘোর বিপদের সম্মুখীন তাদের সকলেরই মিলিত শঙ্কার একটি তীব্র বিষাক্ত ফল। যদিও এই প্রকৃত ব্যাপারটাকে, যেটাকে সচরাচর কথার ফুলঝুরি দিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, সেটাই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সামাজিক দ্ব্যর্থক এবং সামাজিকভাবে আলস্যের পরিণতিস্বরূপ। বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় কখনওই কোনও দেশে একনায়কের আগমনকে আগে থেকে ধারণ করা তো দূরের কথা কল্পনাও করতে পারেনি। এসব দেখে-শুনে এসব কথায় বলা যায়, বিশ্বব্যাপী এই বুদ্ধিজীবীরা তাদের বুদ্ধিমত্তার অপচয় তো করেছেনই সেই সঙ্গে নিজেরাও জড়ধী ব্যায়ামে নিযুক্ত হয়েছেন।
গান্ধীজীর মতো, যিনি প্রকাশ্যেই বলতেন, তিনি ইংরেজ, ভারতীয় এবং নিজের এই তিন বৈরীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চলেছেন; তার এই কথা থেকে যে শিক্ষা নেয়া খুবই প্রয়োজনীয় সেটা হলোঃ শত্রুকে কেবল পরিখার অপর পারেই দেখা যায় না। এই মুহূর্তে সামনের শত্রু যারা আছে তাদের অবশ্যই পরাজিত করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের শ্রেণীচরিত্র ও স্বরূপ উদঘাটন করে প্রকৃতপক্ষে তারা কারা এই ব্যাখ্যাটা খুবই প্রয়োজনীয়। নিজে যেটা কল্পনা করে তার বিপরীতে হলেও ব্যাখ্যা বিশেস্নষণ করাটাই বুদ্ধিজীবীদের প্রধান করণীয় কাজ।
চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে তাদের আর কোনও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার অবকাশ নেই। পরে অবশ্য পুনর্গঠনের কাজে প্রাঞ্জলতাকে আরোপ করার জন্য তাদের আরো অসংখ্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে। নাৎসীদের বিদায়ের পর আলব্যেয়র কামু লিখেছিলেনঃ ঘাতকরা এখন চলে গেছ, ফরাসীরা পড়ে রয়েছে নিজেদের ঘৃণা এবং অংশত নিয়তিবিহীন অবস্থায় পরস্পরকে তারা এখনও ক্রোধের অবশিষ্ট হিসেবেই বিবেচনা করে এই বিষাক্ত হূদয়কে আমাদের অবশ্যই আরোগ্য করতে হবে। একই অবমাননা আর একই ধৈর্য দিয়ে সে বিষকে বের করা হয়তো আগামীকালের কাজ কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হল পরস্পরকে বোঝা।
====================
আলোচনা- 'শিল্প সৃষ্টি ও নান্দনিকতা' by আহমদ রফিক  আলোচনা- ''স্বর্ণকণা শোভে শত শত' মদির গন্ধভরা কণ্টকফল by মুহম্মদ সবুর  বিশেষ রচনা :ওমর খৈয়াম by ড. শামসুল আলম সাঈদ  নাটক- 'বিম্বিত স্বপ্নের বুদ্বুদ' by মোজাম্মেল হক নিয়োগী  গল্প- 'জয়া তোমাকে একটি কথা বলবো' by জাহিদুল হক  গল্প- 'নতুন বন্ধু' by আশরাফুল আলম পিনটু  গল্প- 'টপকে গেল টাপ্পু' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ  গল্প- 'নাচে বানু নাচায়রে' by আতা সরকার  গল্প- 'রূপকথার মতো' by নাসির আহমেদ  গল্প- 'বিয়ে' by আর্নল্ড বেনেট  গল্প- 'মাদকাসক্ত' by আলী ইদ্রিস  গল্প- 'বেঁটে খাটো ভালোবাসা' by রেজানুর রহমান  কবর by জসীম উদ্দীন (পল্লীকবি)  গল্প- 'নদীর নাম চিলমারী' by নীলু দাস  গল্প- 'লাউয়ের ডগা' by নূর কামরুন নাহার  গল্প- 'অপূর্ব সৃষ্টি' by পারভীন সুলতানা গল্প- 'ঊনচলিস্নশ বছর আগে' by জামাল উদ্দীন  গল্প- 'সুচ' by জাফর তালুকদার   গল্প- 'বাসস্ট্যান্ডে যে দাঁড়িয়েছিল' by ঝর্না রহমান  গল্প- 'গন্না' by তিলোত্তমা মজুমদার  গল্প- 'ঘুড়িয়াল' by শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়  গল্প- 'প্রক্ষেপণ' by মোহিত কামাল  গল্প- 'গন্তব্য বদল' by রফিকুর রশীদ  গল্প- 'ঝড়ের রাতে' by প্রচেত গুপ্ত  গল্প- 'শুধু একটি রাত' by সাইপ্রিয়েন এক্ওয়েন্সি। অনুবাদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া  গল্প- 'পিতা ও কুকুর ছানা' by হরিপদ দত্ত  স্মরণ- 'শওকত ভাই : কিছু স্মৃতি' by কবীর চৌধুরী 


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ  বেলাল চৌধুরী


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.