স্মৃতি ও গল্প- 'কবির অভিষেক' by মহাদেব সাহা

ঢাকায় তখন আমার পরিচিত মানুষ মাত্র তিন-চারজন। তারাই তখন আমার মরূদ্যান। দাঁড়াবার এক ইঞ্চি মাটিও নেই। মলয় ও তাজুলের সঙ্গে আগে থেকেই কিছুটা পরিচয় ও বন্ধুত্ব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো ভেবে এসে উঠেছিলাম মলয়ের রুমে। মলয় তখন জগন্নাথ হলে থাকে। সকালে বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের সঙ্গে দ্যাখা করতে তার ফুলার রোডের বাসায় যাই। হাই স্যার এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ঝামেলার ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়ে আমাকে রাজশাহীতেই এম এ পড়তে বললেন। তাজুল তখন 'এক ঝাঁক পায়রা' করে। থাকে এস এম হলে। তার রুমেও ছিলাম একদিন।
পরে তাজুলও রাজশাহী গিয়ে আমার রুমে ওঠে। স্টেশনে এতো লোকের মাঝে কোনো চেনা মুখ নেই, কোনো পরিচিত মানুষ নেই, এই শহরকে কেমন নির্বান্ধব অপরিচিত মনে হতে লাগলো, এই বর্ষার দিনকেও মনে হলো 'বৃষ্টিবিহীন বৈশাখী দিন', আমার মনের মধ্যে তখন এমনি উথাল-পাতাল বাতাস বইছে। রাস্তাঘাট চিনি না, মানুষজন সব অচেনা, বড়ো অসহায় বোধ হতে লাগলো। সেই কবে ঢাকা থেকে চলে গেছি, প্রায় এক দশক আগে, ঢাকা কলেজের হিন্দু ছাত্রদের হোস্টেল তখন আগামসি লেনে, ল' কলেজের পাশে একটা পুরনো বাড়িতে। হোস্টেলের সুপারেনটেনডেন্ট অধ্যাপক নিজামুদ্দিন। তিনি দোতলায় থাকেন। হিসেব বিভাগের অনিল বাবু হোস্টেল ইনচার্জ। আমরা জনাবিশেক ছাত্র থাকি। ঢাকা কলেজে তখন বিখ্যাত সব শিক্ষক। ইংরেজিতে আবু রুশদ, বাংলায় শওকত ওসমান, হিশামুদ্দিন, আশরাফ সিদ্দিকী। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী এম ইউ আহাম্মেদ তখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। ঢাকা কলেজের নতুন চমৎকার ভবনটি নিউ মার্কেটের পাশে। নিউ মার্কেট তখন ঢাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিপনীকেন্দ্র। ঢাকার বাইরে থেকে যারাই আসে নিউ মার্কেট না দেখে যায় না। এক মার্কেটে সব জিনিস পাওয়া যায়। ভেতরে অনেক রাস্তা। কতোবার যে রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছি। ঢুকে আর বেরুতে পারি না, মফস্বল থেকে আসা লোকজনের যা হয়। ক্লাসের ফাঁকে আমরা দল বেঁধে নিউ মার্কেটে ঘুরি, নিউ মার্কেটে সুন্দর সুন্দর সব মেয়েরা কেনাকাটা করে। আমার এক সহপাঠী দ্বিজেন কথায় কথায় ইংরেজি বলে, অবশ্য আমিও বলি, কলেজে এলে বোধহয় প্রথম প্রথম সবাই এরকম ইংরেজি বলতে চায়। আমরা অনেক সময়ই তখন বাংলা কথার উত্তর দি ইংরেজিতেই, মাঝে মাঝে দোকানে গিয়েও ইংরেজি বলি, পাশে মেয়েরা থাকলে আমরা আরো বেশি ইংরেজি বলি। সে একটা সময়ই গেছে।
আমরা যেখানে থাকি সেই হোস্টেলটির অবস্থা খুবই করুণ, বর্ষাবিষ্টিতে বাড়ির উঠান জলকাদায় ভরে যায়। স্যারের একটি মুলতানি গাভী ছিলো, বাঁধা থাকে উঠানে। বাথরুম নেই। উঠানের এক পাশে একটা বড়ো ইঁদারা। আমাদের সবারই যার যার দড়ি ও বালতি আছে, সেই বালতি দিয়ে জল তুলে স্নান করি। শীতের সময় বরফের চেয়েও বেশি ঠাণ্ডা জল, গা কেটে যায়। রান্নাঘরের বারান্দায় একটা লম্বা টেবিল পাতা, সেখানে গামলায় ভাত ঢাকা থাকে, আমরা নিয়ে নিয়ে খাই। দশটার ক্লাস ধরতে হলে সেই কনকনে ঠাণ্ডায় ইঁদারার জলে সকালবেলা স্নান করা এক দুঃসাহসের কাজ। কিন্তু তাই করতে হয়। কোনোমতে নাকে-মুখে গুঁজে কলেজে ছুটি। দূরত্বও কম নয়। রেললাইন ধরে হেঁটে, কখনোবা সে আমলের হ্যান্ডেল ঘরিয়ে স্টার্ট দেয়া বাসে। এরকম খুব বেশিদিন চালানো গেলো না। অসুস্থ হয়ে পড়লাম। ভীষণ জ্বর। রাতে প্রায় সংজ্ঞা হারানোর অবস্থা। পাশের বাড়িতে থাকে উষাদি, তার নামটিও ভুলে গেছি, এখন উষাদিই বলি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। আমরা হোস্টেলের বারান্দার সিঁড়িতে বসে গল্প করি, উঠানে ব্যাডমিন্টন বা ভলিবল খেলি, উষাদি তাদের বারান্দার রেলিং-এ দাঁড়িয়ে দ্যাখে, কখনো একটু হাসে, একটি-দুটি কথা হয়। আমি কবিতা লিখি সে খবর উষাদি জানে। সেই রাতে পাশের বাড়িতে হোস্টেলে এসে কতো রাত পর্যন্ত যে উষাদি জ্বর মাপা, মাথায় জল ঢালা, কপালে জলপট্টি দেয়া থেকে শুরু করে সেবা-শুশ্রূষা করেছিলো তা বলতে পারবো না। তখন আমি চেতন-অচেতনের মাঝখানে। তার এই অবিরাম শুশ্রূষা আর যত্ন ছাড়া সেদিন হয়তো প্রাণ বাঁচানোই কঠিন ছিলো। আজ যখন ভাবি তাকে আমার দেবীর মতোই মনে হয়, আমার জন্য কী কষ্ট করেছিলো উষাদি, তার এই স্নেহ, ভালোবাস, মমতা সত্যি এক দুর্লভ বস্তু। তার সঙ্গে আমার আর দ্যাখা হয়নি, পরদিনই মির্টফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হই। টাইফয়েডে একেবারে কাহিল হয়ে পড়ি। তখনকার দিনে টাইফয়েড হলে সেরে ওঠা খুব শক্ত ছিলো, ক্লোরোমাইসেটিন ক্যাপসুল (নামটি কি ভুল করছি) খেতে হতো। শরীর একেবারে ভেঙে যেতো, চুল উঠে যেতো, আরো কতো কী? টাইফয়েড সারতে অনেকদিন লেগেছিলো। হাসপাতাল থেকে ফিরেই সোজা বাড়ি। বাড়ি এসেও আবার জ্বরে পড়ি। শামসুদ্দিন আহাম্মদ তখন ঢাকার খুব বিখ্যাত চিকিৎসক, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বোধহয় অধ্যক্ষ তিনি, দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসায় ছিলাম। লেখাপড়া বন্ধ। উষাদির সঙ্গে সেই শেষ দ্যাখা। আরো একজন একবার আমাকে এমনি সেবাযত্ন করেছিলো হাসপাতালে, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী কিংবা সদ্য পাস করে বেরিয়েছে, জ্বরের ঘোরে প্রায় অচেতন, তার কথাও খুব মনে পড়ে।
খুব বেশি দেরি হলো না, তখন এতো গাড়ি, এতো ভিড়, এতো যানজট নেই এতো বড়ো শহর; কিন্তু শান্ত সি্নগ্ধ, মোটামুটি অল্প সময়েই পৌঁছে গেলাম গ্রিন রোড স্টাফ কোয়ার্টারে, কণ্ঠস্বরের আস্তানায়। একটা ছোট ট্রাঙ্কে কিছু বই, লেদার সুটকেসে সামান্য জামা-কাপড় আর শতরঞ্জি-জড়ানো লেপ-কাঁথাবালিশ। এই নিয়ে গিয়ে উঠি সায়ীদ ভাইয়ের বাসায়। ভাবী সদা হাস্যমুখ, হাসিমুখের একটা অসুবিধা এই যে কিছু মনে করলেও বোঝা যায় না। অবশ্য আমি কিছুটা সংকুচিত মানুষ, সায়ীদ ভাই ও ভাবী এর মধ্যেই সেটা বুঝে ফেলেছেন, সেজন্য আমার প্রতি একটু বেশিই সচেতন থাকেন, পাছে আমি কোনো কিছুতে মন খারাপ করি। কিন্তু যার মন এমনি এমনি খারাপ হয়, তার মন খারাপ ঠেকাবে কে? দিনটা ভালোই কাটলো। সায়ীদ ভাই আমার থাকারও একটা ব্যবস্থা করে রেখেছেন, সেটাও খুব কাছেই এলিফ্যান্ট রোড। সেখানে মেস করে থাকেন আবুল কাসেম ফজলুল হক ও শফি চৌধুরী।
একজন সাহিত্যের আর একজন পদার্থ বিজ্ঞানের। কিছুদিন আগে আনোয়ার উলস্নাহ চৌধুরী চলে গেছেন, মেসে একটি সিট খালি। আমি সেই খালি সিটে গিয়ে উঠবো। বাড়িটা একতলা, ওপরে টিনের ছাদ, নিউ এলিফ্যান্ট রোডের আরো গলির ভেতর। বাড়িটি শেহাবউদ্দিন নাফাদের। নাফা তখন বাম রাজনীতির সক্রিয় কমর্ী। পরে ইংরেজি দৈনিকে সাংবাদিকতা করে। বর্ষাবৃষ্টিতে বাড়িটিতে পেঁৗছতে একটা লম্বা সাঁকোর ওপর দিয়ে অনেকটা পথ যেতে হয়। ঐদিন সন্ধ্যায় ফুটপাত থেকে একটা চৌকি কিনে বিছানাপত্র নিয়ে এই বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। শুরু হলো আমার ঢাকা জীবন, কবিতার দিনরাত্রি। আমি যখন ঢাকা এসে পেঁৗছলাম তখন কণ্ঠস্বরে একদল নতুন কবির অভিষেক সম্পন্ন হয়ে গেছে, আমি এসে পেঁৗছালাম শেষ বাসের যাত্রী। পায়ের তলায় একটু মাটি খুঁজছি। তার জন্য দিবারাত্রির যুদ্ধ।
উঠলাম বটে এলিফ্যান্ট রোডে, কিন্তু যতোক্ষণ পারি সময় কাটাই গ্রিন রোডে এসে। কাছেই থাকেন আবদুল মান্নান সৈয়দ। মান্নান সৈয়দের একেকটি নতুন লেখা তখন কণ্ঠস্বরে বের হচ্ছে। মুগ্ধ হয়ে তার এইসব গল্প-কবিতা পড়ি। এই গ্রিন রোডেই কাঁঠাল বাগানের দিকে তাদের বাড়ি। মাঝে-মাঝে সায়ীদ ভাইয়ের সঙ্গে সেখানে চলে যাই। ঢাকায় চেনা জানা মানুষ খুব কম, এখানে গিয়ে আমি কিছুটা আশ্রয় পাই, আনন্দ অনুভব করি। মান্নান সব সময়ই কবিতামগ্ন নির্জন মানুষ, কিন্তু শিল্প সাহিত্য কবিতা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেন, আমি মন দিয়ে শুনি। ঢাকায় প্রথম দিকে আমার সেই বিমর্ষ দিনগুলোতে সায়ীদ ভাই ও মান্নান সৈয়দের সানি্নধ্য ও আন্তরিকতা আমাকে উজ্জীবিত করে। গ্রিন রোডের সবুজ প্রকৃতির মতোই ছায়াময় মনে হতো সেইসব মুহূর্ত। তখন আমার কাছে সামান্য পাওয়াও ছিলো অনেক পাওয়া, একটু প্রশ্রয়, একটু উষ্ণতা, একটু ভালোবাসা পেলে এই রুক্ষ পৃথিবী মধুময় মনে হতো। ঢাকায় তখন আমি কাকেই বা চিনি, কার কাছেই বা যাই, যদিও কখনো যাই সংকোচ কাটে না, জড়সড় হয়ে থাকি, ঘুরে ফিরে এই গ্রিন রোড, কণ্ঠস্বরের আড্ডা, কিন্তু সেখানেও খুব কণ্ঠ মেলাতে পারি না, পশ্চাৎবতর্ী মানুষের মতো থাকি। এভাবেই আমার সময় কাটতে থাকে, ঢাকায় প্রথম দিনগুলোতে এরাই আমার কাছের মানুষ। তবে এতোটা কবিতামত্ত সময় বোধহয় আমি আর কখনো কাটাইনি, আচ্ছন্ন, বিভোর, নিমজ্জিত। চাকরি করি নামমাত্র, সারাক্ষণই কবিতা।
অবজারভার গ্রুপের নতুন বাংলা পত্রিকা পূর্বদেশ। নতুন অফিস, নতুন লোকজন। সবকিছুরই জন্ম মুহূর্তের একটা আলাদা আনন্দ ও উত্তেজনা আছে। পূর্বদেশ বের হওয়ার আগে থেকেই আমরা অফিস করছি। সারাক্ষণই একটা আনন্দের পরিবেশ। নতুন চেয়ার-টেবিল আসছে, বসার ব্যবস্থা হচ্ছে, একটি নতুন পত্রিকার জন্মের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে বেশ উৎফুলস্ন বোধ করছি। অভিজ্ঞতাও একেবারে অন্যরকম। পত্রিকা সাজানো হচ্ছে, সাজিয়ে দেখা হচ্ছে কেমন হলো, প্রতিমুহূর্তের শিহরণ। কয়েকটা দিন খুব আনন্দের মধ্যেই কাটলো। পূর্বদেশের জন্ম মুহূর্ত আমার মনে দাগ কেটে আছে। পূর্বদেশ বের হওয়ার পর সাড়াও পাওয়া গেলো খুব ভালো। তর তর করে বাড়তে লাগলো পত্রিকার প্রচার সংখ্যা। সুন্দর ঝকঝকে ছাপা, পাঠকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠলো পূর্বদেশ। ভাগ্য আমার ভালোই বলতে হবে, পূর্বদেশে সম্পাদকীয় বিভাগে যাঁদের সঙ্গে কাজ করি তাঁরা সব বিখ্যাত ব্যক্তি। 'আমাদের মুক্তি সংগ্রামে'র লেখক মোহাম্মদ ওয়ালীউলস্নাহ, একুশে ফেব্রুয়ারির অমর গানের লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, নূইপা ছদ্মনামের কলাম লেখক নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, কন্যাকুমারীর খ্যাত আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী। আমি নাম পরিচয়হীন এক কবিতামত্ত তরুণ। কিন্তু তরুণ কবিকে বোধহয় সবাই একটু বেশি বেশি অস্কারা দেয়। আমাকেও দিচ্ছিলেন। শুধু সম্পাদকীয় বিভাগ নয়, চীফ রিপোর্টার বিখ্যাত ছড়াকার কবি ফয়েজ আহামদ, বার্তা সম্পাদক এহতেশাম হায়দার চৌধুরী, জেনারেল ম্যানেজার এম আর আকতার মুকুল, সাংবাদিক কামাল লোহানী, সাহিত্য সম্পাদক আ ন ম গোলাম মোস্তফা সবার কাছেই এক ধরনের প্রশয় পাই। এমনকী সম্পাদক মাহবুবুল হক ও অবজারভারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কবি আব্দুল গণি হাজারীর কাছেও আস্কারা পেয়ে আমার আরো দিশেহারা হওয়ার অবস্থা। কী লিখি না লিখি সেটা বড়ো কথা নয়, কবিতা নিয়ে মেতে থাকি। পূর্বদেশে কলাম লেখা শুরু করলাম মলিস্ননাথ নামে, মোস্তফা ভাই বললেন আর যা হোক নিয়মিত কবিতা লিখতে হবে সাহিত্যের পাতায়। সাহিত্যের পাতায় একটি ধারাবাহিকে গদ্যলেখাও শুরু করলাম 'উপকথার কথা'। অবজারভার হাউসের তখন রমরমা অবস্থা। বিখ্যাত সাংবাদিক কে জি মোস্তাফা, এবিএম মূসা ও আতাউস সামাদ তখন অবজারভারে। পূর্বদেশে 'বটতলার উপাখ্যান' লেখেন ওবায়দুল হক, 'বারোয়ারি লেখেন মূসাভাই। আবদুল গফ্ফার চৌধুরীর 'তৃতীয় মত' তখন পূর্বদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কলাম।
কতোক্ষণ আর থাকি পত্রিকার অফিসে, যতো তাড়াতাড়ি পারি কেটে পড়ি, ঘুরে বেড়াই, কোথাও ঠিক মন বসতে চায় না, সারাক্ষণই মাথায় কবিতা কিন্তু প্রথম প্রথম এসে কবিতা লেখাও হয় না তেমন, আমার অবস্থা সম্পাদকীয় বিভাগের সবাই বুঝতে পারেন, তাঁরা একটু বেশি বেশিই পাত্তা দেন আমাকে। দুপুরে প্রায় প্রতিদিনই এক সঙ্গে খাই, কখনো 'অতিথি', কখনো 'সাগরিকা', কোনো কোনো দিন হয়তোবা বাদশা হোটেলেও। কাছাকাছি আরামবাগে থাকেন পাটোয়ারী ভাই, বেশিরভাগ সময়ই তাঁর বাড়িতে মাদুর পেতে দুপুরের খাওয়া। সে সব আন্তরিকতার কথা ভোলা যায় না, আজকের দিনে যা একেবারেই দুর্লভ। এতোসব বিখ্যাত মানুষ, আমার কোনো চালচুলো নেই, মেসে থাকি, সময়-টময় ঠিক থাকে না, কখন আসি কখন যাই, সঙ্গে কেউ না কেউ থাকেও, কেউই কিছু মনে করেন না, আমার এক ধরনের অলিখিত স্বাধীনতা। এতোসব গুণী মানুষের মধ্যে থাকার এই বোধ হয় একটা সুবিধা। আমার স্বাধীন কবিজীবনের কোনো বাধাই হয় না। পূর্বদেশের সবাইকে আমার খুব ভালো লাগতে শুরু করে, তাঁরাও আমাকে বেশ আপন করে নেন। ঢাকায় শুভাকাঙ্ক্ষী তখন বেশি নেই, পূরবী ও জ্যোতিদা ঢাকায় আমার সেই সময়েই বান্ধব আপনজন। মন খারাপ হলে জ্যোতিদার কাছে চলে যাই, একই হাউসে কাজ করি। কিন্তু সে সুযোগ বেশিদিন থাকলো না, আমি ঢাকা আসার কিছুদিনের মধ্যেই জ্যোতিদা আমেরিকা চলে গেলেন। আমিও ধীরে ধীরে ঢাকার জীবনের মধ্যে জড়িয়ে পড়তে লাগলাম। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তখনই গল্প লিখে নাম করেছেন, তাঁর গল্পগুলো অসাধারণ চিত্রধমর্ী, কবিতার মতো। 'দুবিণর্ীত কাল' বেরুনোর পরই তাঁকে একেবারে স্বতন্ত্রধারার লেখক রূপে চেনা যায়। এই সময়ে হাসান আজিজুল হকের বিখ্যাত গল্পগুলোও বেরিয়ে গেছে। তাঁর 'আত্মজা ও একটি করবী গাছ' বেরুলেই বোঝা যায় হাসান আজিজুল হক খুব শক্তিমান লেখক। যতোদূর মনে পড়ে তাঁর 'আমৃতু্য আজীবন' গল্পটি 'পূর্বমেঘে' ছাপা হয়, আমি তখন রাজশাহী।
লোকে জানে আমি ঢাকা এসেছি পত্রিকার চাকরি নিয়ে কিন্তু আমি মনে মনে ঠিকই জানি আমি এসেছি কবিতার চাকরি নিয়ে, পত্রিকার চাকরি একটা ছুঁতো, কিন্তু কবিতা লেখা হচ্ছে না, নিজেকে মেলাতে পারছি না কোনো কিছুর সঙ্গে, ভেতরে ভেতরে একটা দারুণ অশান্তি অস্থিরতা। এ রকম সময় মলয়ই বোধহয় একদিন আমাকে নিয়ে গেলো শরীফমিয়ার ক্যান্টিনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক লাইব্রেরীর পাশে টিনের চালাঘর, পুরনো লম্বা লম্বা টেবিল। জায়গাটা চমৎকার, ঘাস, গাছপালা, মু্যরাল, রাস্তার ওপারে বিশাল মাঠ, কলরব, কোলাহল, তর্ক-বিতর্ক, কলহাস্য, কাপের পর কাপ চা। আমি চুপচাপ এককোনায় গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পর বোধহয় তাজুল এলো। সেদিন আর কারা কারা ছিলো, কাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো ঠিক মনে পড়ে না, শুধু কানে ভাসে হো হো হাসির শব্দ আর কলরব। মনে হচ্ছিলো আমি যেন ভিন্ন গ্রহের মানুষ, কিছুই ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। ময়ল, তাজুল, আমি এক পাশে বসে চা খেলাম। প্রথমদিন বেশি জমলো না, কিন্তু ধীরে ধীরে আমিও জমিয়ে ফেললাম। আমারও বন্ধুর সংখ্যা বাড়তে লাগলো। এখানেই সকালের খাওয়া তারপর অফিসে। এটাই একরকম রুটিনে দাঁড়িয়ে গেলো। সকালে উঠেই, সকাল মানে কখনোই দশটার আগে নয়, পাজামা-পাঞ্জাবি চাপিয়ে শরীফ মিয়ার দিকে হাঁটা দেই কিংবা রিকশায় চেপে বসি, এলিফ্যান্ট রোড থেকে সামান্যই দূরত্ব। থাকি আবুল কাসেম ফজলুল হকের সঙ্গে একই মেসে, কোনো কোনো দিন কাসেম ভাইও আসেন শরীফমিয়ায়, তাঁর সঙ্গে চলে আসি। তাতে একটা সুবিধা হয়, কাশেমভাই খুবই সহূদয় মানুষ, অনেকের সঙ্গেই আমাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মলয়, তাজুল তো আছেই। সে সময় ঢাকার সব উঠতি কবি, লেখক, শিল্পী, সংস্কৃতিকমর্ী, ছাত্রনেতা নিয়মিত শরীফমিয়ায় আসেন। আমার প্রায় সবাই সমবয়সী। আড্ডা তর্ক-বিতর্কে এই চায়ের দোকানটি সব সময়ই গমগম করে। যেন অফুরন্ত জলকলেস্নাল। কিছুদিনের মধ্যেই আমি তারুণ্যের এই কলমুখরতা ও ভাষা আয়ত্ত করে ফেলি। 'ওস্থাদ', 'দূরমিয়া', গিরিঙ্গি' এইসব শব্দ ধরে ফেলতে আমারও আর বিশেষ দেরি হয় না। শরীফমিয়ায় প্রথম কার কার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলো মনে নেই। এখানে নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান নিয়মিত আসে। তাদের সঙ্গে আমার আগেই পরিচয় হয়েছিলো, কিন্তু খুব বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়নি। শরীফমিয়ার মধ্য দিয়েই আমাদের ঘনিষ্ঠতা। তবে শরীফ মিয়ায় প্রথম বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল হুমায়ুন কবির ও মাহবুব সাদিকের সঙ্গে। ওরা দুজনে তখন খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সম্ভবত 'হে নক্ষত্রবীথি' নামে একটি সংকলনও বের করে। হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব জমে ওঠে, সেই সূত্রে সুলতানা রেবুর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা হয়। রেবুই বোধহয় তখন আমাদের প্রথম মেয়েবন্ধু, হুমায়ুনের সহপাঠী, পরে ওরা সংসার বাঁধে, কবিদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক, বেশিরভাগ সময়ই ওরা দুজন একত্র থাকে, একই সঙ্গে আমরাও আড্ডা দেই। হুমায়ুন আগেই 'পাশর্্ববতর্ী সহপাঠিনী' লিখে ফেলেছে।
শরীফমিয়া-কেন্দ্রিক এই কাব্যজীবনে মিশে আমি গ্রিনরোড থেকে কিছুটা ছিটকে পড়ি। দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময়ই এখানে থাকি, মাঝখানে কিছু সময় অফিসে। এই সময় হুমায়ুন কবির ও মাহবুব সদিকের সঙ্গে আমার বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়, ওরা দুজনেই আমাকে কাছে টানে, ঢাকার সেই সময়ের নিঃসঙ্গতার মধ্যে খানিকটা সঙ্গ দেয়, আমার মন খারাপ দেখলে ওরা দুজনেই আমাকে চাঙা করার চেষ্টা করে। মাহবুব সাদিককে আমার বেশ কোমল স্বভাবের মানুষ বলে মনে হয়, ওদের দুজনের সঙ্গেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বিদ্রূপ, কটাক্ষ নিষ্ঠুর রসিকতার মাঝে ওদের সহূদয়তা ও বন্ধুত্ব আমাকে তৃপ্তি দেয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই জড়িয়ে যাই আবুল হাসানের সঙ্গে, আমরা দুজনেই আমাদের দুজনের গোপন দুঃখের জায়গাটা আবিষ্কার করি, আমাদের স্বভাবের অন্তর্নিহিত উদাসীনতা ও অস্থায়ত্ব আমাদের কাছে টানে, অল্পদিনের মধ্যেই হাসানের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গভীর হয়, দুজনেই আমাদের স্বভাবের কারণেই ঘুরে বেড়াতে শুরু করি ঢাকার সব নির্জন জায়গাগুলোতে, কমলাপুর রেল স্টেশন, সদরঘাট লঞ্চঘাট, রমনাপার্ক, বেলী রোডের সবুজ নিসর্গলোকের মধ্যে আমাদের কাতরতা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করি, নদী, উদ্ভিদ, নির্জন দুপুরের ফুটপাত, মস্নান গোধূলির আলোছায়া আমাদের আচ্ছন্ন করে, এ সময় কতো জায়গায়, কতো নিরিবিলি রাস্তায় যে আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি, চষে বেড়িয়েছি কতো অঞ্চল তার সাক্ষী কেবল মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা, মধ্যরাতের চাঁদ আর আমাদের অন্তরাত্মা; তোপখানা রোডের চামেলী হাউস, রমনা রেস্তোরাঁ কিংবা লেকের ধারে কতো বিভোর সময় যে কটেছে তা ভেবে এখন কেমন স্মৃতিতাড়িতই হয়ে পড়ি। ঢাকায় এমন কোনো পার্ক, লেক বা নির্জন জায়গা নেই যেখানে আমরা সময় কাটাইনি। নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে, স্বভাবে আমার চেয়ে সে কিছুটা স্বতন্ত্র, আমার মতো সে কাতর হয় না, যে-কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে, আমাদের চেয়ে আড্ডায় সে বেশি স্বচ্ছন্দ, উচ্ছল, হাসাতে পারে অনেক বেশি। তার স্বভাবসুলভ হাস্যরসিকতা সবাইকে আকৃষ্টও করে। আমরা বেশিক্ষণ কথা খুঁজে পাই না। কিন্তু নির্মলের কথা প্রস্তুত, কথা বলে সে হাসাতেও পারে, আড্ডায় তাকে পছন্দও করে সবাই, আমরা প্রায় উল্টো, বেশিরভাগ সময়ই অন্যমনষ্ক থাকি, হাসি-তামাসার ভেতর দিয়েই নির্মল হয়তো তার দুঃখ লুকিয়ে রাখে, আমাদের চেয়ে তার আবেগ প্রকাশও অন্যরকম, শরীফমিয়াতেও সে সারাক্ষণ রসিকতা নিয়েই থাকে, সারাক্ষণই জমিয়ে রাখে; নির্মলের সঙ্গে পরে সবচেয়ে বেশি জড়িয়ে যাবো বলেই হয়তো তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগে, আমরা পরস্পর সর্বক্ষণ সঙ্গী হয়ে উঠবো, রাত্রির পর রাত্রি নিঘর্ুম কাটাবো শুধুই কথা বলে, তর্ক করে, ঝগড়া করে, নিঃশব্দে বসে থেকে, পরস্পর সুখ দুঃখের সাথী হয়ে উঠবো, কবিতা ও রাজনীতি আমাদের প্রায় অভিন্ন পথে নিয়ে যাবে বলেই হয়তো প্রথম দিকে এমনি ছিলো আমাদের বন্ধুত্বের সূচনা, পরিচয়পর্ব। সে সব বড়ো সুখের সময়, বড়ো দুঃখের সময়। একেকটি দিন যেন চৈত্রের পাগলা হাওয়া, যেন বর্ষার উতল মেঘ, যেন নতুন জলের কলধ্বনি। সে এক অসম্ভব স্বপ্নময় দিনরাত্রি, আমাদের দিন যাপনের প্রতিটি ক্ষণ যেন নতুন কবিতার জন্মলগ্ন, প্রতিটি মুহূর্ত যেন কবিতার মধ্যে বেঁচে থাকা। সেই উদ্দাম উন্মাতাল যৌবনে কবিতাই ছিলো আমাদের প্রেমিকা, আমাদের নির্জন পবিত্র আনন্দ।
যতোই দিন যায় আড্ডা ততোই বাড়তে থাকে। আড্ডার জায়গাও বিস্তৃত হতে থাকে আরো। শরীফ মিয়া, রমনা, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট; সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত আড্ডা। আড্ডায় নতুন নতুন মুখ, নতুন নতুন জায়গা। তরুণ কবি, নাট্যকমর্ী, ছাত্রনেতা আমরা সবাই একসঙ্গে মিশে যাই। ঢাকা তখন এতো বড়ো হয়নি। পায়ে হেঁটেই আমরা প্রায় সারা শহর ঘুরে বেড়াই। ঢাকার রাস্তাঘাট, পার্ক, লেক আমাদের নখদর্পণে। সকালে শরীফ মিয়ায় সকালের খাওয়া সেরে, যদিও তা প্রায়শই ভর দুপুরে, বিরতিহীন আড্ডা চলতো আমাদের, নির্মল, হাসান, হুমায়ুন কবির, সায্যাদ, মামুনুর রশীদ, আহমদ দফা, হুদা, সিরাজী, পীযূষ শশাংক, ম-হামিদ, মুজিব বিন, শিহাব, আবিদ, ফারুক, মহাবুব হাসান। কোনো কোনোদিন হুমায়ূন আজাদ। আমাদের কোলাহল কলরবে ভরে থাকতো শরীফ মিয়া। ছোটো খাটো একেবারেই হালকা-পাতলা শরীফ মিয়া, আমাদের অত্যাচারে মাঝে মাঝে ওই ক্ষীণগলায়ই অসহায়ভাবে চিৎকার করে উঠতো, কিন্তু আমাদের প্রাণঘাতী হাসির শব্দে তা বুদবুদের মতোই মিলিয়ে যেতো। আমাদের অবিরাম উদ্দাম হাসি আর কোলাহলের মাঝে তার কণ্ঠস্বর পাখির শব্দের মতোই যেন মনে হতো। দুপুর পর্যন্ত শরীফ মিয়াকে জ্বালিয়ে দল বেঁধে এসে ঢুকতাম দৈনিক বাংলা অর্থাৎ সে সময়ের দৈনিক পাকিস্তানে। প্রথমেই সাহিত্য বিভাগে হাবীব ভাইয়ের কাছে। এই সংখ্যায় কার কবিতা ছাপা হচ্ছে সেটা জানাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। সেখান থেকে এসে ঢুকতাম পূর্বদেশে, পাশেই পূর্বদেশ অফিস। কখনোই প্রায় একা নয়, দুতিনজন মিলে আসতাম অফিসে। কেউ কিছু মনে করতেন না। সবাই জানেন এভাবেই অফিস করি আমি। আমার এই অনিয়ম সেখানে সকলেই মেনে নিয়েছিলেন। সে দিনগুলো ছিলো এমনি আনন্দের। বুকভরা এই স্বপ্ন, আনন্দ আর দুঃখ নিয়ে কবিতার সঙ্গে দিন কাটাই। কবিতার মধ্যেই যেন জীবনের সব। তার কোনো ইতিহাস নেই, ধারাবাহিক বিবরণ নেই, এই আকাশ, বাতাস, নৈঃশব্দের মধ্যে মিশে আছে আমাদের সেই হারানো জীবন, সেই কবিতার কলধ্বনি।
আমাদের সেই উথাল পাতাল যৌবনের এলোমেলো দিনগুলোতে আমাদের সমস্ত দুঃখ ও নিঃসঙ্গতা ভরে রেখেছিলো কবিতা। সে সময় কবিতাই ছিলো আমাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। কবিতার মধ্যেই যেন জীবন যাপন করেছি আমরা। বাইরের সব অস্থিরতা ও উত্তাপকে আমরা রূপ দিয়েছি কবিতায়, আমাদের তখন সেই অনিশ্চিত অস্থির জীবনে কবিতাকেই ভেবেছি জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী, আমাদের সব দুঃখ ও বেদনার আশ্রয়, স্বপ্নেরও নীরব ভাষ্য। জীবনের এই এলোমেলো উতল বাতাস যখন আমাদের দিগন্তচারী পাখির মতো উড়িয়ে নিয়ে চলেছে, যখন এক অজানা স্বপ্নশোকের সন্ধানে আমাদের দিনরাত্রিগুলো উৎসর্গ করেছি কবিতার কাছে, যখন এই শব্দ আর ধ্বনিগুচ্ছ অবিরল বৃষ্টিপাতের মতো ভরে রেখেছে আমাদের জীবন, আমাদের সত্তা, তখন ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এই জীবন, আমাদের রাজনীতির সেই অস্থিরতা ও দ্রোহকে আমরা কবিতায় ধারণ করে চলেছি। গণআন্দোলন ও মিছিলের উষ্ণ সাহচর্যে আমাদের কবিতা ও জীবন তখন নতুন স্বপ্ন ও জাগরণের মুখোমুখি।
====================
ইতিহাস- 'ভাওয়ালগড়ের ষড়যন্ত্র' by তারিক হাসান  আলোচনা- 'বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা' by বেলাল চৌধুরী  আলোচনা- 'শিল্প সৃষ্টি ও নান্দনিকতা' by আহমদ রফিক  আলোচনা- ''স্বর্ণকণা শোভে শত শত' মদির গন্ধভরা কণ্টকফল by মুহম্মদ সবুর  বিশেষ রচনা :ওমর খৈয়াম by ড. শামসুল আলম সাঈদ  নাটক- 'বিম্বিত স্বপ্নের বুদ্বুদ' by মোজাম্মেল হক নিয়োগী  গল্প- 'জয়া তোমাকে একটি কথা বলবো' by জাহিদুল হক  গল্প- 'নতুন বন্ধু' by আশরাফুল আলম পিনটু  গল্প- 'টপকে গেল টাপ্পু' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ  গল্প- 'নাচে বানু নাচায়রে' by আতা সরকার  গল্প- 'রূপকথার মতো' by নাসির আহমেদ  গল্প- 'বিয়ে' by আর্নল্ড বেনেট  গল্প- 'মাদকাসক্ত' by আলী ইদ্রিস  গল্প- 'বেঁটে খাটো ভালোবাসা' by রেজানুর রহমান  কবর by জসীম উদ্দীন (পল্লীকবি)  গল্প- 'নদীর নাম চিলমারী' by নীলু দাস  গল্প- 'লাউয়ের ডগা' by নূর কামরুন নাহার  গল্প- 'অপূর্ব সৃষ্টি' by পারভীন সুলতানা গল্প- 'ঊনচলিস্নশ বছর আগে' by জামাল উদ্দীন  গল্প- 'সুচ' by জাফর তালুকদার   গল্প- 'বাসস্ট্যান্ডে যে দাঁড়িয়েছিল' by ঝর্না রহমান  গল্প- 'গন্না' by তিলোত্তমা মজুমদার  গল্প- 'ঘুড়িয়াল' by শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়  গল্প- 'প্রক্ষেপণ' by মোহিত কামাল  গল্প- 'গন্তব্য বদল' by রফিকুর রশীদ  গল্প- 'ঝড়ের রাতে' by প্রচেত গুপ্ত  গল্প- 'শুধু একটি রাত' by সাইপ্রিয়েন এক্ওয়েন্সি। অনুবাদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া  গল্প- 'পিতা ও কুকুর ছানা' by হরিপদ দত্ত  স্মরণ- 'শওকত ভাই : কিছু স্মৃতি' by কবীর চৌধুরী 



দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ  মহাদেব সাহা


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.