প্রকৃতি- চট্টগ্রামে ঐতিহ্যের পাহাড় কেটে বহুতল ভবনঃ সুরক্ষার পরিকল্পনা ধ্বংসের অনুমোদন by ভূঁইয়া নজরুল

ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে অবস্থিত প্রবর্তক সংঘের মালিকানাধীন পাহাড়কে 'সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সেই পাহাড়েই ১২ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ভবন নির্মিত হলে ধ্বংস হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী প্রবর্তকের বিশাল পাহাড়ের একাংশ। সিডিএর তৈরি ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে বলা হয়েছে, সরকার প্রবর্তক পাহাড়ের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। এই পাহাড় ও তদসংলগ্ন মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উন্মুক্ত পরিসর ও প্রাকৃতিক পরিবেশের রক্ষণাবেক্ষণে সহায়তা করবে সিডিএ। বিপণিবিতান বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে না এতে।
এসব উপেক্ষা করে ২০০৮ সালের ২২ জুন সিডিএর ইমারত নির্মাণ কমিটির সভায় একটি বেইজমেন্ট, একটি সেমি বেইজমেন্ট ও ১২ তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় প্রবর্তক সংঘকে। অনুমতিপত্রে ৪৮টি শর্তের ২০ নম্বর শর্তে আবার বলা হয়েছে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী মূল সড়কের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ৫০ মিটারের মধ্যে কোনো
দোকান নির্মাণ করা যাবে না। এই শর্ত মেনে প্রায় ১৫০ কাঠা আয়তনের এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রবর্তক পাহাড়ের পুরোটাই সাবাড় হয়ে যাবে। পাহাড় কাটার এই বেআইনি কাজে সিডিএ ছাড়াও অনুমোদন রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৮ সালের ২ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের অবস্থানগত ছাড়পত্র দেওয়ার পর দুই দফায় তা নবায়ন করেছে। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের পরিচালক তা আগামী ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নবায়ন করে অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছেন। ইতিমধ্যে দরপত্রের মাধ্যমে বেসরকারি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান আরএফ প্রপার্টিজকে ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছে প্রবর্তক সংঘ। প্রায় এক মাস আগে প্রতিষ্ঠানটি কাজও শুরু করে।
ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের প্রণেতা ও ১৯৯৫ সালের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন কমিটির সদস্য জেরিনা হোসেন বলেন, ১৯৯৫ সালের মাস্টার প্ল্যানে প্রবর্তক পাহাড়কে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে তা সংরক্ষণের জন্য বলা হয়। এখানে বাণিজ্যিক ভবন হলে চট্টগ্রামের পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও যানবাহনসহ সামগ্রিক সব বিষয়ে বিপর্যয় দেখা দেবে। এখনই এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করা প্রয়োজন।
প্রবর্তক পাহাড় ধ্বংস করে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়াটা বিধিবহির্ভূত হয়েছে বলে স্বীকার করেন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, এভাবে বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় সিডিএ বহুতল ভবনের অনুমোদন দিয়েছে। এখনই তা বন্ধ করা না হলে চট্টগ্রামের পাহাড় ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। শিগগিরই এ প্রকল্পের অনুমোদন বাতিল করা হবে।
সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইমারত নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, 'এ ভবনটিকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ ছিল।' এই ওপর মহল কারা, কী তাদের পরিচয়_সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব দিতে অস্বীকৃতি জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর ও পুরাকীর্তি বিশেষজ্ঞ শামসুল হোসাইন বলেন, প্রবর্তক পাহাড় একটি প্রাকৃতিক সম্পদ, মানুষ ইচ্ছা করলে হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রবর্তক পাহাড় বানাতে পারবে না। অর্থের বিনিময়ে কোনো সভ্য জাতি ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে পারে না।
তবে বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে দাবি করেন প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিন কড়ি চক্রবর্তী। তিনি বলেন, সিডিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে শপিংমল ও বাণিজ্যিক ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে প্রবর্তক পাহাড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পূর্বপাশে প্রাইম ব্যাংক ভবনের কোনা থেকে পশ্চিম পাশে আফমি প্লাজা ভবনের বিপরীত পাশ পর্যন্ত বিশাল এলাকায় আর এফ প্রপার্টিজের টিনের বেষ্টনী দেওয়া। বেষ্টনী এলাকার ভেতরে গাছ কাটার চিহ্ন পাওয়া যায়। স্থানীয় এক পাতা কুড়ানি নারী জানান, এখানে প্রায় অর্ধশত গাছ ছিল। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যন্ত্র দিয়ে পাহাড়ের ঢাল কাটা হয়েছে।
গাছ কাটা প্রসঙ্গে আর এফ প্রপার্টিজের পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সিডিএ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে গাছ কেটে ভবনের কাজ শুরু করেছি। গাছ না কাটলে ভবন নির্মাণ করব কিভাবে?'
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ জাফর আলম বলেন, 'আমরা বহুতল ভবনের অনুমোদন দিয়েছি। পাহাড় ও গাছ কাটার অনুমোদন দিইনি।'
========================
প্রকৃতি খবর- জলবায়ু সম্মেলন আজ শুরু  রাজনৈতিক আলোচনা- 'পুলিশই কি হরতাল সফল করে দেয়' by আবেদ খান  আইন কানুন- 'বাহাত্তরের সংবিধান ফিরছে না' by আহমেদ দীপু  আইরিন খান বললেন,'নারীর মানবাধিকার রক্ষায় আরও সক্রিয় হতে হবে' সুত্র প্রথম আলো  আইন কানুন- চাই বিরোধের বিকল্প নিষ্পত্তি by রোমেল রহমান  আইন কানুন- ভরণপোষণ একটি আইনি অধিকার by মাসূমা তাসনীম  আইন কানুন- অর্থঋণ আদালত আইনে অনেক গলদ by এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম  আইন কানুন- গাড়ি আটক হলে মালিকের করণীয় by মো. রাশেদ খান  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আমাদের রাজনীতিতে বখাটেপনা' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম  স্মরণ- 'আমরা তো কাঁদছিই' by নেয়ামতউল্যাহ  চিত্রকলা- এক পরিবারের বৃক্ষ ও শেকড় সুত্র প্রথম আলো  গল্পসল্প- 'ঢাকা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে' by উম্মে মুসলিমা  কৃষি আলোচনা- 'বরেন্দ্রভূমির কৃষকের বীজবিদ্রোহ' by পাভেল পার্থ  খবর- ৩০ নভেম্বরের হরতালের আগেই মারমুখী পুলিশ  খবর- চট্টগ্রামে ভাঙ্গা ভাঙ্গির রাজনীতি  ফিচার খবর - নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা’র বিরুদ্ধে রাজপথে আনসার-ভিডিপি!  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রটোকল কার' : গরিবের ঘোড়ারোগ' by দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ডা. মিলন' by সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী  রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রয়োজন সরকার ও বিরোধী দলের সহাবস্থান' by ড. তারেক শামসুর রেহমান


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ ভূঁইয়া নজরুল


এই খবর'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.