আইন কানুন- গাড়ি আটক হলে মালিকের করণীয় by মো. রাশেদ খান

কালাম সাহেবের সাত বছরের ছেলে সাদনান ও পাঁচ বছরের মেয়ে হিয়ার আনন্দে পুরো পরিবারে খুশির বন্যা বইছে। এবার তারা নিজেদের গাড়িতে করে নোয়াখালীর সেনবাগে বেড়াতে যাবে । আর বাসের লাইনে দাঁড়াতে হবে না, ভিড় সইতে হবে না। আনন্দে দাদাবাড়ি যাওয়া যাবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কালাম সাহেব ছেলেমেয়ে ও শিক্ষিকা স্ত্রীকে স্কুলে আনা-নেওয়ার জন্য অফিসের লোন ও সঞ্চিত টাকায় একটি টয়োটা গাড়ি কিনেছেন মাস ছয়েক আগে। গাড়ি কেনার পরপরই এক বন্ধুর ড্রাইভারের সুপারিশে নিয়োগ দিয়েছেন হানিফকে।
৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ সকাল আনুমানিক আটটায় ড্রাইভার হানিফ জানান, নোয়াখালী যাওয়ার আগে গাড়ির কিছু কাজ করাতে হবে। কিছু টাকাও নিয়ে যান গাড়িটি গ্যারেজে দেওয়ার জন্য। সারা দিন আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না হানিফের। মোবাইল ফোনটিও বন্ধ। বাসার সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। বিকেল পাঁচটার দিকে থানা থেকে ফোন আসে কালাম সাহেবের গাড়ি থানায় একটি মামলায় জব্দ করা হয়েছে। সকাল ১০টার দিকে গাড়ির পেছনের ডালায় সাত কেস বিয়ার উত্তরা থেকে মোহাম্মদপুর নেওয়ার সময় জসীমউদ্দীন রোডে পুলিশ চেকপোস্টে ধরা পড়েছেন হানিফ।
কালাম সাহেব তৎক্ষণাৎ উত্তরা থানায় ছুটে যান। থানায় ঢোকার মুখেই রাস্তার ওপর তাঁদের গাড়িটি দেখেন। এরই মধ্যে গাড়ির ওপর প্রায় আধা ইঞ্চি পরিমাণ ধুলো জমে গেছে। গত ছয় মাসে গাড়িটি তাঁদের পরিবারের প্রিয় সদস্য হয়ে গেছে। গাড়িটি অযত্নে পড়ে থাকতে দেখে উভয়ের চোখে পানি চলে আসে। থানার একজন এসআই কালাম সাহেব ও তাঁর স্ত্রীকে হানিফের সেলের সামনে নিয়ে যান। অকপটে হানিফ জানান, গত ছয় মাসে আরও দুবার তিনি এ কাজ করেছে।
কালাম সাহেব জীবনে থানা-পুলিশ করেননি আর জানেন না কীভাবে তাঁর গাড়ি থানা থেকে উদ্ধার করবেন বা তাঁর অজান্তে গাড়ি মাদক পরিবহনে ব্যবহূত হলে তাঁর দায়বদ্ধতা কতটুকু?
যেকোনো গাড়ির মালিকই স্থান ও পাত্র-পাত্রীর নাম বদল করা এ ধরনের বাস্তব ঘটনার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই এ সম্পর্কে জানা সব মালিকেরই প্রয়োজন।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক ওই ঘটনায় কালাম সাহেবের দায়বদ্ধতা কতটুকু?
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিভিন্ন মামলার রায়ে বলা হয়েছে যে মালিকের অগোচরে তাঁর গাড়ি মাদক পরিবহনে/অবৈধ কাজে ব্যবহূত হলে মালিকের ওপর কোনো দায় আসবে না। এর মানে এই নয় যে মালিক তাঁর গাড়ি ব্যবহার সম্পর্কে উদাসীন থাকবেন। তাঁকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে ও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যেন তাঁর গাড়িটি ড্রাইভার, আত্মীয় বা বন্ধু অবৈধ কাজে ব্যবহার করতে না পারেন।
থানা থেকে গাড়ি উদ্ধার করতে কালাম সাহেবকে একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। থানা থেকে মামলার এজাহারের ফটোকপি ও তাঁর গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের ফটোকপি আইনজীবীর কাছে নিয়ে যেতে হবে। গাড়ি উদ্ধারে তাঁর হয়ে কাজ করার জন্য ওকালতনামাও প্রদান করতে হবে আইনজীবীকে।
যেহেতু গাড়িটি থানায় আটক করা হয়েছে, বিজ্ঞ আইনজীবী ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের নির্দিষ্ট জিআর সেকশনে গিয়ে মামলার নথি পর্যবেক্ষণ করবেন। তিনি কালাম সাহেবের পক্ষ হয়ে আদালতের কাছে আবেদন করবেন গাড়িটি কালাম সাহেবের জিম্মায় দেওয়ার জন্য। প্রথম দিনে আবেদন শুনানির পর সাধারণত বিজ্ঞ আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে (আইও) বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করে ও মাদক পরিবহনে গাড়ির মালিকের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদেশ দেবেন।
আদালতের আদেশ সাধারণত পরবর্তী কার্যদিবসে সংশ্লিষ্ট থানায় পৌঁছে যায়। ফলে ওই দিন কালাম সাহেবকে থানায় যোগাযোগ করতে হবে, যেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই প্রতিবেদন দুটি অতিসত্বর থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করেন। প্রতিবেদন থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ আইনজীবী আদালতের জিআর সেকশনে নথি পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন যে তা নথির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে কি না। এরপর বিজ্ঞ আইনজীবী একটি দরখাস্তের মাধ্যমে আদালতকে অবহিত করবেন যে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিকানা নিরূপণ করা হয়েছে এবং মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন পেশ করেছে যে অবৈধ মাদক পরিবহনের সঙ্গে কালাম সাহেব কোনোভাবেই যুক্ত নন। শুনানির সময় কালাম সাহেবকে আদালতের সামনে উপস্থিত থাকতে হবে। বিজ্ঞ আদালত দরখাস্তে দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কালাম সাহেবকে প্রশ্ন করতে পারেন।
বিজ্ঞ আদালত বিআরটিএ প্রতিবেদন, তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও আইনজীবীর শুনানিতে সন্তুষ্ট হলে উত্তরা থানা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেবেন আটক গাড়িটি কালাম সাহেবের জিম্মায় দেওয়ার জন্য। ওই আদেশ পরবর্তী দিন দুপুরে উত্তরা থানায় পৌঁছে যাবে। পরবর্তী দিন কালাম সাহেব তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে গাড়ি নিজের জিম্মায় নিতে পারবেন এই শর্তে যে পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন হলে তিনি তা থানায় হাজির করবেন। উপরিউক্ত পদ্ধতি সম্পন্ন করে গাড়িটি কালাম সাহেবের জিম্মায় নিতে কমপক্ষে ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে।
অবিশ্বাস ও নৈতিক অবক্ষয়ের এই সময়ে যেকোনো অবাঞ্ছিত বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহূত গাড়িতে ড্রাইভার নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া ও তাঁর অতীত অপরাধের ইতিহাস আছে কি না, তা জেনে নেওয়া এবং নিয়োগের পর ড্রাইভারের চালচলন নিবিড়ভাবে লক্ষ করা গাড়ির মালিকের জন্য আবশ্যক।
========================
যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'আমাদের রাজনীতিতে বখাটেপনা' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম  স্মরণ- 'আমরা তো কাঁদছিই' by নেয়ামতউল্যাহ  চিত্রকলা- এক পরিবারের বৃক্ষ ও শেকড় সুত্র প্রথম আলো  গল্পসল্প- 'ঢাকা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনোখানে' by উম্মে মুসলিমা  কৃষি আলোচনা- 'বরেন্দ্রভূমির কৃষকের বীজবিদ্রোহ' by পাভেল পার্থ  খবর- ৩০ নভেম্বরের হরতালের আগেই মারমুখী পুলিশ  খবর- চট্টগ্রামে ভাঙ্গা ভাঙ্গির রাজনীতি  ফিচার খবর - নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা’র বিরুদ্ধে রাজপথে আনসার-ভিডিপি!  যুক্তি তর্ক গল্পালোচনা- 'প্রটোকল কার' : গরিবের ঘোড়ারোগ' by দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ডা. মিলন' by সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী  রাজনৈতিক আলোচনা- 'প্রয়োজন সরকার ও বিরোধী দলের সহাবস্থান' by ড. তারেক শামসুর রেহমান  আলোচনা- 'উপকূলের মাটির মানুষের কান্না' by জয়নুল আবেদীন  আগামী দিনের লক্ষ্য নির্ধারণে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলন  দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী গড়ার স্বপ্নের নতুন পথ  প্রকৃতি- বাংলাদেশের ঝুঁকি বাড়ছে কমেনি কার্বন নিঃসরণ by ইফতেখার মাহমুদ  প্রথম আলোর সাথে সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস 'সামাজিক ব্যবসা অনেক ক্ষেত্রেই বেশিকার্যকর'  আলোচনা- 'তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে করণীয়' by by মোহাম্মদ জমির  রাজনৈতিক আলোচনা- 'গণতন্ত্রের স্বার্থে পারস্পারিক সম্মানবোধ' by ড. আবু এন. এম. ওয়াহিদ  শিল্প-অর্থনীতি 'চরম দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে' by জাহাঙ্গীর শাহ  বিশেষ রচনা- মেডির মিরাকল by মাসুদ রহমান


দৈনিক প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ মো. রাশেদ খান
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.