কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'জায়ান্ট হান্টার' by মহিউদ্দিন আকবর

শাটাপ্। আর একটা কথাও বলবেন না। একটা সপ্তাহ যাবৎ কম্বিং অপারেশন চালিয়েও আপনারা বুনো ভাল্লুকটাকে ধরতে অথবা মারতেও পারলেন না।
অথচ জানোয়ারটা আমাদের গ্যাসফিল্ডে একের পর এক হত্যা আর ইউনিটের পর ইউনিট পাইপ লাইনের ট্রান্সফরমার ধ্বংস করে চলেছে। ফরেস্ট রেঞ্জার কমান্ডের এই ব্যর্থতাকে আমি কিছুতেই সহ্য করবো না।
প্রয়োজনে সেনাবাহিনী তলব করবো। তখন আমি আপনাদের কারোরই চাকরি বাঁচাতে পারবো না। সুতরাং বুঝতেই পারছেন। আর মাত্র তিন দিন অর্থাৎ বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে জানোয়ারটাকে জীবন্ত অথবা মৃত যে অবস্থাতেই হোক হাজির করা চাই। রাগ রাগ ভাবটা পুরোপুরি বজায় রেখে স্বদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন বিডি করপোরেশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সাইদ খান টানা তিন মিনিট বক বক করে একটু দম নিলেন। অমনি ফরেস্ট অফিসার আজম রায়হান বেশ জোর দিয়েই বললেন স্যার! জানোয়ারটা স্রেফ বুনো ভাল্লুক নয়। যদি তাই হবে তাহলে এতো দ্রুতগামী এবং বিশাল আকৃতির হতে পারে না। যারা দেখেছে, তাদের ধারণা এটা বিশেষ প্রজাতির কোন দানব আকৃতির প্রাণী। এ পর্যন্ত আমরা ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায় জন্তুটার যতগুলো ছবি ধরতে পেরেছি, তাতে জন্তুটির আকৃতি বড় আকারের কালো ভাল্লুক বলে মনে হলেও তার মুভমেন্টের গতি-প্রকৃতির পার্থক্যটা নজরে পড়ার মতো। তাই আমাদের মনে হচ্ছে…, স্যার! আমাদের কমান্ডার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রাণিবিশারদ ড. নওশাদ করিমসহ সবাইকে নিয়ে আমরা সিসিক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজগুলো বারবার পরীক্ষা করে বুঝতে পারছি এটা একটা জায়ান্ট হতে পারে…।

আজম রহমানের কথা শেষ না হতেই কর্নেল সাইদ খান হিটপ্র“ফ নন-ফ্লাক্সিবল ফাইবার-গ্লাসের ইনটেরিয়র ডেকোরেশনের ওয়াল-ফাটানো অট্টো হাসিতে ফেটে পড়ে বললেন থামুন! থামুন! এ কথা মিনিস্টারের কানে পৌঁছলে আপনাদের চাকরি তো যাবেই, আমাকেও রীতিমতো ওএসডি করে ছাড়বেন। তারচেয়ে এক কাজ করুন, সবার মাথায় ভালো করে ঠাণ্ডা পানি ঢেলে আসুন। আমি সবার জন্য কোল্ডড্রিংকস আনাচ্ছি।

কর্নেল সাইদের বক্তব্যে উপস্থিত কর্মকর্তারা অপমান বোধ করলেও কেউ প্রতিবাদ জানাতে সাহসী হলেন না। তবে ড. নওশাদ করিম ছয়টি স্টিল ক্লোজআপের ব্রোমাইড পেশ করলেন কর্নেলের সামনে। কিন্তু একরোখা দিলেন এসব ছবি, গাঁজাখুরি গালগল্প আর জল্পনা-কল্পনা ছাড়ুন। এ যুগে জায়ান্ট আসবে কোত্থেকে? দুনিয়ার সব পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চল, সাহারা মরুভূমি কিংবা পুরো আফ্রিকার জঙ্গল চষে একটা দানব আকৃতির প্রাণী খুঁজে পাবেন? অ্যাঁ! আমাকে এসেছেন সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগের জায়ান্টের ভয় দেখাতে? আরে, জায়েন্ট কি আজকের যুগের প্রাণী? আপনারা আগে রিপোর্ট করেছেন, প্রাণীটি গভীর রাতে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে অরণ্য পেরিয়ে গ্যাসফিল্ডে চলে আসে। আবার রেঞ্জারদের তাড়া খেয়ে একই পথে ফিরে যায়। তাহলে জানোয়ারটাকে বধ করতে পারছেন না কেন? ওর গতিপথ তো আপনাদের জানা।

কর্নেলের কথাকে এবার বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়তে দিতে চান না ড. করিম। তিনি কর্নেলের সামনে থেকে ছবিগুলো সরিয়ে নিতে নিতে বললেন স্যার! আমরা কিন্তু আপনাকে জানোয়ারটির অস্বাভাবিক গতির কথাও বলেছি। একমাত্র জায়ান্ট বা জায়ান্টের প্রজাতি ছাড়া এতটা দ্রুতগতিসম্পন্ন কোন ভাল্লুক হতে পারে না। তা ছাড়া প্রাণীটি ভাল্লুকের চেয়ে বেশ বড়। গায়ের রঙ ভীষণ কালো। পেছনের পা থেকে সামনের পা দু’টি বড়। বেশ গোট্টাগাট্টা পেটানো শরীর বলেই ফুটেজে দেখা যায়। ওর চলাচল পথে সেনসিটিভ ওয়েট স্কেল ফেলে দেখেছি প্রাণীটির ওজন প্রায় এক টন। ভয়ঙ্কর চাহনি। নখগুলো প্রায় পাঁচ ইঞ্চি লম্বা। দাঁতের মাপও চার ইঞ্চি। এখানেই প্রাণীটির সাথে ভাল্লুকের বেশ পার্থক্য লক্ষণীয়।

ড. নওশাদ করিমের কথায় কর্নেল আবার অট্টহাসিতে পুরোটা কক্ষ সরগরম করে বললেন আরে সাহেব, থামুন! থামুন! আপনি তো আমাকে সেই পঞ্চাশ হাজার বছর পেছনে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন তো মানুষই দুনিয়ায় আসেনি। আর আপনি এসেছেন বর্তমান জামানায় জায়ান্টের গুলগল্প শোনাতে! এটাতো অসম্ভব ব্যাপার। তবে রেঞ্জারদের বলুন না কেন ফাঁদ পেতে জানোয়ারটাকে ধরে ফেলতে। আর না হয় তো গুলি করে মারতে বলুন। আমরা সাধারণ মানুষের জীবন এবং গ্যাসফিল্ডের ওপর আর কোন ধ্বংসলীলা দেখতে চাই না।

কর্নেলের এই ভাষ্যের পর ড. নওশাদ করিম আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপ হয়ে গেলেন। ফরেস্ট অফিসার, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, রেঞ্জার কমান্ডারসহ সবাই বেরিয়ে গেলেন কর্নেল সাইদ খানের কক্ষ থেকে। সবাই গিয়ে বসলেন ফরেস্ট অফিসারের বাংলোতে। অনেকক্ষণ আলোচনা হলো। এক পর্যায়ে ড. নওশাদ প্রস্তাব রাখলেন, আমরা জানোয়ারটাকে ঘায়েল করার জন্য বৈদ্যুতিক নেটের ফাঁদ পাতবো এবং ফাঁদে আটক অবস্থায় জন্তুটাকে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করবো।

যেমনি পরিকল্পনা তেমনি কাজ। কিন্তু মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই বৈদ্যুতিক নেট কেটে ব্যাপক স্পার্কিংকে উপেক্ষা করে জালে আটকে পড়া জানোয়ারটা পালিয়ে বাঁচলো। রেঞ্জারদের শত শত গুলিও জন্তুটাকে এতটুকু কাবু করতে পারলো না।

তবে রেঞ্জাররা অভিযান শেষে একটা আশ্চর্য তথ্য দিয়েছেন। রেঞ্জার কমান্ডার বলেছেন ফাঁদে আটকে ফেলার পর খুব কাছ থেকে যেসব রেঞ্জার জানোয়ারটাকে গুলি চালিয়েছে, তাদের অনেকেই জন্তুটার গায়ে গুলি লাগার পর মেটালিক ইকো শুনতে পেয়েছে, যা একেবারেই অবিশ্বাস্য! এমনকি একজন রেঞ্জার জন্তুটির মাথায় গুলি চালানোর পর আলোর স্ফুরণও হতে দেখেছেন!

রেঞ্জার কমান্ডারের ভাষ্য শুনে সবাই মাথা চুলকাতে চুলকাতে ভাবলেন তাহলে জন্তুটি কি কোন ভিন গ্রহের আগন্তুক? যদি এই ধারণা সঠিক হয়, তাহলে আর এক সেকেন্ডের জন্যও মুখে তালা এঁটে বসে থাকার সুযোগ নেই। অভিযানের তাবৎ ফুটেজসহ সেনাবাহিনীকে সার্বিক পরিস্থিতি জানানো দরকার। আর তা কর্নেল সাইদ খানের মাধ্যমে জানানোই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
তাই হলো। সেনাবাহিনীর পরামর্শে হঠাৎ পাল্টে গেলো রেঞ্জারদের ডিউটি। তারা জন্তুটিকে অবাধ বিচরণের সুযোগ দিয়ে তাদের নিয়মিত ডিউটি রেঞ্জ থেকে দলে দলে ভাগ হয়ে অরণ্যের বিভিন্ন বিটে চলে গেলেন।

এদিকে অদ্ভুত সেই নাম না জানা জানোয়ারটা ফাঁকা মাঠ পেয়ে রাতেই উড়িয়ে দিলো স্বদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশনের সাত নাম্বার সাবগ্রিড। তাতে পুরো জৈয়ন্তাপুর এবং জকিগঞ্জ জোনের গ্যাস সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেলো। গ্যাসের অভাবে ঘরে ঘরে এবং কল-কারখানায় হাহাকার পড়ে গেলো।

সেদিন রাতেই ঘটে গেলো এক প্রলয়ঙ্করী ঘটনা। রাত প্রায় ৩টার দিকে হঠাৎই ভারী আগ্নেয়াস্ত্র এবং ডিনামাইটের ভয়াবহ গর্জনে পুরো এলাকা কেঁপে উঠলো। ভয়ে সন্ত্রস্ত মানুষ যার যার বাড়িতে বিছানা ছেড়ে মাটিতে শুয়ে পড়লেন। আর মৃত্যুর প্রহর গুনে দুই কানে আঙুল চেপে কোন মতে আল্লাহকে স্মরণ করতে করতে রাত কাটিয়ে দিলেন। সবার ভাবনা ছিলো একটাই নিশ্চয়ই ভিনদেশী কোন হানাদার গোষ্ঠী বাংলাদেশের ওপর হামলে পড়েছে। আর বাংলাদেশের চির উন্নত শির সেনাবাহিনীর বীর জওয়ানরা তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে কঠোর প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন…।

কিন্তু পরদিন দিনের আলোয় সরকারের নীরবতা এবং রাতের ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণটা সবারই পরিষ্কার জানা হয়ে গেলো। হাজার হাজার মানুষ গ্যাসফিল্ডের নয় নাম্বার সাবগ্রিড সংলগ্ন অরণ্যে ছুটে গিয়ে দেখতে পেলেন প্রায় লণ্ডভণ্ড অবস্থায় পড়ে আছে তাদের এতদিনকার আতঙ্ক দানবাকৃতির সেই ভাল্লুকটি।

ভারী মেশিনগানের গুলি, ডিনামাইট আর মাইনের আঘাতে দানবটির নকল পশমি আবরণ ঝলসে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্টেনলেস স্টিলবডির অংশবিশেষ হাঁ করে আছে। লণ্ডভণ্ড দানবটিকে ঘিরে রেখেছেন সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ডিভিশনের কমান্ডোরা। তখন আকাশে টহল দিয়ে এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে বিমান বাহিনীর চারটি হেলিকপ্টার-গানশিপ।

সেনা কমান্ডোদের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহমান হ্যান্ড মাইকে উপস্থিত জনসাধারণকে জানালেন গত দিনের গ্যাস সঙ্কটে আপনারা সরকারের নীরবতা দেখে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন। সরকারের কোন সহযোগিতাও পাননি, সে জন্য সরকার দুঃখিত। তবে জনগণের নিরাপত্তা, কঠোর সতর্কতা এবং গোপনীয়তার স্বার্থেই এটা করা হয়েছে। এই সুযোগে আমরা অর্থাৎ সেনা কমান্ডোরা এই অরণ্যে সন্ধ্যা ঘনাবার সাথে সাথে স্থল-মাইন এবং ডিনামাইটের ফাঁদ পাতার কাজে নেমে পড়েছিলাম। তার ফলাফল আপনারা নিশ্চয়ই গভীর রাত থেকেই অনুমান করতে পেরেছিলেন। ফাঁদে ঢুকে পড়ার সাথে সাথেই আপনাদের গত প্রায় দেড় সপ্তাহের আতঙ্ক এই অদ্ভুত জানোয়ারকে ধ্বংস করতে আমরাও জীবন বাজি রেখে মাইন ও ডিনামাইট চার্জ করতে শুরু করি। ফলে কী হয়েছে এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন।

আমরা ভিনদেশী শত্রুদের পাঠানো এই জানোয়ারটাকে খতম করেছি। জন্তুটি আদতে কোন বড় জাতের দানবাকৃতির ভাল্লুক নয়। এটা আসলে একটা বায়োনিক আদলের রোবট মাত্র? শত্র“রা আমাদের দেশের গ্যাস ট্রান্সমিশন ফিল্ডকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্যই গত সপ্তাহের শুরু থেকে রিমোট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতি রাতে এটাকে এখানে পাঠাতো। অন্ধকারে মানুষ যাতে এটাকে সত্যিকারের দানব জাতীয় প্রাণী মনে করে, সে জন্য তারা প্রাচীন প্রাণী জায়ান্টের আদলে এই রোবট জন্তুটাকে বানিয়েছে। এই রোবটটির চালিকাশক্তি ছিলো খুবই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রিচার্জেবল রেডিওমেটিক ব্যাটারি। আপনারা সুশৃঙ্খলভাবে লাইন ধরে সাবধানে কাছে আসুন এবং দেখুন শত্রুরা আমাদের সাথে যে রিমোট নিয়ে খেলেছে আমরা সেই রিমোট নিয়ন্ত্রকদের কেমন বোকা বানিয়ে দিয়েছি। শত্র“দেরকে আমরাও দেখিয়ে দিয়েছি যে, তোমরা যত বড় ষড়যন্ত্র করেই যন্ত্রদানব জায়ান্ট পাঠাও না কেন, আমরাও কিন্তু দুর্ধর্ষ জায়ান্ট হান্টার।
====================
গল্প- 'হাসে বাঁকা চাঁদ' by আহসান হাবিব বুলবুল  গল্প- 'বড়বাড়ির জঙ্গলে' by শরীফ আবদুল গোফরান  গল্প- 'পরিবর্তন' by বিশ্বাস আবুল কালাম গল্প- 'মিতুর জ্যোৎস্না রাত' by আবদুল্লাহ আল হোসাইন  গল্প- 'জিয়ানার আনন্দ-অভিমান' by বেগম রাজিয়া হোসাইন  গল্প- 'এক মুঠো স্বপ্ন' by কাজী রিচি ইসলাম  গল্প- 'মাটির গন্ধ' by জুবায়ের হুসাইন  গল্প- 'বোকাইকে কেউ বুঝি ডাকলো' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ  গল্প- 'নাকিবের একা একা ঝিল দেখা' by হারুন ইবনে শাহাদাত  গল্প- 'উসামার বায়না ও আইলার জন্য ভালোবাসা' by চেমনআরা  গল্প- 'উরুমকিতে আর্তনাদ' by আহমদ মতিউর রহমান  গল্প- 'টবের গোলাপ' by দিলারা মেসবাহ  রম্য গল্প- 'তুচ্ছ ঘটনা' by মোহাম্মদ লিয়াকত আলী  গল্প- 'নদী কত দূর' by অজিত হরি সাহু, অনুবাদ- হোসেন মাহমুদ  গল্প- 'নতুন জীবনের গল্প' by মুহিব্বুর রহমান রাফে  গল্প- 'বুবুর জন্য' by জুবায়ের হুসাইন গল্প- 'দ্বীপ রহস্য-০০১' by হারুন ইবনে শাহাদাত  গল্প- 'নীয়নের মোবাইল পকেট' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ  গল্প- 'শুভরা জানতে চায়' by জুবাইদা গুলশান আরা  গল্প- 'জোড়া ঘোড়া' by মাখরাজ খান  গল্প- 'গর্ব' by আবদুল ওহাব আজাদ গল্প- 'তিতিরের ঘুড়ি' by ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ  গল্প- 'একটি বাঘের কথা' by মুহম্মদ জাফর ইকবাল
 


কিশোরকন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ মহিউদ্দিন আকবর


এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.