কিশোর ফিচার- 'আমার ঘুড়ি আকাশ জুড়ি' by মাসুম কবির

পাখিরা ডানা মেলে উড়াল দেয় আকাশে। আর উড়াল দেয় ঘুড়ি। পাখির মতো ইচ্ছা স্বাধীন দূরে যেতে পারে না ঘুড়িরা। কারণ নাটাই তো থাকে মানুষের হাতে।
তুমি শহর কিংবা গ্রামে যেখানেই থাকো ঘুড়ি ওড়ানোর মজা একবার পেলেই হলো। পাখির মতো হাওয়ায় ডানা মেলবে বলে তোমাকে টেনে নিয়ে যায় ঘরের বাইরে। ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে কখনো কখনো আনমনা হয়ে যাবেই তুমি ইস্!
এমন করে যদি উড়তে পারতাম! আজ তাহলে এসো এই ঘুড়ি সম্বন্ধে কিছু জেনে নেয়া যাক।

যেভাবে ঘুড়ি এলো
সেই প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। গাছের পাতা দিয়ে তৈরি হতো তাদের ঘুড়ি। তবে ঘুড়ির আবিষ্কারকের নাম কিন্তু জানা যায়নি আজ অবধি। কোন্ দেশ প্রথম ঘুড়ি উড়িয়েছিল তা নিয়েই রয়েছে বিস্তর তর্ক-বিতর্ক। চীন, জাপান আর গ্রিস হচ্ছে প্রথম ঘুড়ি ওড়ানোর দাবিদার। এই তালিকায় আছে কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের নামও। ৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে গ্রিসের ট্যারান্টাস শহরে প্রথম ঘুড়ি ওড়ানোর দাবিদার হচ্ছেন বিজ্ঞানী আরকিয়াটাস। আবার গ্রিসের অনেক আগে থেকেই চীনারা ঘুড়ি ওড়াতো বলে দাবি করে। ৩০০০ বছর আগে এর সূচনা নাকি তারাই করেছিল। রেশম গুটি থেকে সুতো কিভাবে তৈরি করতে হয় সেটাও চীনাদের আবিষ্কার বলে কথিত আছে। বাঁশের আগায় রেশমগুটি থেকে তৈরি পেঁজা তুলো বেঁধে বাতাসে উড়ানো থেকেই গাছগাছালির বড় বড় পাতা উড়ানোর দিকে ঘুড়ির ধারণা সম্প্রসারিত হয়ে থাকতে পারে। তারপর এক সময় কাপড় ও কাগজে রূপান্তরিত ঘুড়ি হয়েছে। আবার অনেকে মনে করেন প্রায় সমসাময়িককালে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভারতবর্ষে সুতোয় বৃক্ষের পাতা বেঁধে বাতাসে ঘুড়ির মতো উড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। বালি দ্বীপে এখনো ঐহিত্য অনুসারে এই পাতার ঘুড়ি উড়ানো হয়। এক সময় পলিনেশীয় সামুদ্রিক নাবিকদের দ্বারা এই ঘুড়ির ধারণা অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কাজেই ধরা যেতে পারে যে, ঘুড়ির আদি স্থান হচ্ছে এশিয়া মহাদেশ।

ঘুড়ি ওড়ানোর সময়
শরৎ ঋতুকে গ্রামবাসী তাদের ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য বেছে নেয়। শরতের নির্মল আকাশ আর বাছুর নিয়ন্ত্রিত বেগ ঘুড়ি উড়ানোর পরিবেশ সৃষ্টি করে। তবে কোনো কোনো স্থানে বিশেষ করে ঢাকা শহরে শীতের পর বসন্তে যখন এলোমেলো বাতাস বয়, তখন ঘুড়ি ওড়ানো হয়ে থাকে। তবে বর্ষার রেশ থাকতে থাকতে শরৎ ঋতুই হচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানোর মওসুম।

নানান দেশে নানান ঘুড়ি
আজকের দিনে দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই ঘুড়ি ওড়ানো হয়। হাজার রকমের ঘুড়ি আছে দুনিয়াজুড়ে। আর ঘুড়ি নিয়ে রয়েছে নানান গল্প। চীন, জাপান ও তাইওয়ানে ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে রীতিমতো উৎসব হয়ে থাকে। সেদিন সরকারি ছুটিও থাকে।
ঘুড়িকে পবিত্রতার প্রতীক মনে করে মালয়েশিয়ার মানুষ। তাদের বিশ্বাস ঘুড়ি হচ্ছে ভূত-প্রেতের ওঝা। যেসব বাড়িতে ঘুড়ি ওড়ানো হয় সেসব বাড়ির ধারেকাছেও নাকি ভূত বা দুষ্ট জিন ঘেঁষে না। নিউজিল্যান্ডের অধিবাসীরা দুষ্ট জিন তাড়ানোর জন্য মাওরি নামের এক ধরনের ঘুড়ি ওড়ায়। এই ঘুড়ির মধ্যে রয়েছে নানা রকম ছিদ্র। ওসব ছিদ্রে ধাতব পাত বসানো থাকে। ওড়ার সময় বাতাস এসে ওই ছিদ্রে ঢোকে আর অদ্ভুত শব্দ হয়। ওই শব্দেই নাকি ভূতেরা অর্থাৎ দুষ্ট জিনেরা পালায়।
এক চীনেই আছে ৩০০ রকম ঘুড়ি। অথচ এই চীনেই একসময় ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ ছিল। কেউ ঘুড়ি ওড়ালেই তাকে-ধরে বেঁধে ঢুকিয়ে দেয়া হতো জেলে, একেবারে তিন বছরের জন্য। জাপানেও ১৭৬০ সালে ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ ছিল। কারণ একটাই জাপানিরা নাকি কাজ-কর্ম সব ফেলে রেখে ঘুড়ি ওড়ানোর নেশায় মত্ত থাকতো।
মালয়েশিয়ায় প্রাচীনকাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ির নাম হচ্ছে Wau (ওয়াউ)। একে আবার Layang-layang নামেও অনেকে চেনেন। মালয়েশীয়দের ধারণা বাতাসে যখন এই বিশেষ ধরনের ঘুড়িটি উড়ে তখন ‘ওয়াউ-ওয়াউ’ একটা শব্দ ওঠে। সেই শব্দ থেকেই এই ঘুড়ির নামকরণ। তবে মূলত এই ‘ওয়াউ’ শব্দটি মালয়েশীয় নয়, এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাইল্যান্ড থেকে, ওই দেশে এই শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘ঘুড়ি’।
বাংলাদেশের ঘুড়িগুলোকে স্থানীয় নামে চিহিœত করা হয়। যেমন সাপা, পতেঙ্গা, ঢোল ঘুড়ি, চং, ফেইচকা, গোয়া ঘুড়ি ইত্যাদি। ঘুড়ি উৎসবে তো দেখা মেলে কয়েক শ’ ধরনের ঘুড়ি। মাছ, পাখি, প্রজাপতি, ড্রাগন, পরী, মানুষ, বিমান, পতঙ্গ ইত্যাদির আকৃতি দেয়া হয় তখন ঘুড়িগুলোকে। এছাড়া যে রঙিন কাগজ দিয়ে ঘুড়ি বানানো হয় সেই কাগজের রঙের নামানুসারেই ঘুড়িগুলোকে নামকরণ করা হয়। যেমন লাল ঘুড়ি, সাদা ঘুড়ি, বেগুনি ঘুড়ি, হলুদ ঘুড়ি, সবুজ ঘুড়ি, মাথার কাছে অন্য রঙের কাগজ জোড়া দিয়ে মুখপোড়া ঘুড়ি, লেজের কাছে জোড়া দিয়ে লেজপোড়া (পাছাপোড়া) ঘুড়ি, দুই কোনা বা এককোনায় জোড়া দিয়ে কেনিপোড়া ঘুড়ি, বুকে কাগজ জোড়া দিয়ে বুকপোড়া ঘুড়ি, দুই রঙের কাগজ দিয়ে বানানো দো-রঙা ঘুড়ি, তিন রঙের কাগজ দিয়ে তে-রঙা ঘুড়ি, চার রঙের কাগজ দিয়ে চাপরাশি ঘুড়ি প্রভৃতি ঘুড়ি। বড় আকারের একটি ঘুড়ি লম্বায় ৬ ফুট ও ব্যাসে ৪ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
কেমন করে ঘুড়ি ওড়ে
ঘুড়ি ওড়ার সময় তিনটা শক্তি কাজ করে। একটা শক্তি ঘুড়িকে তার নিজস্ব ওজনের জন্য টানতে থাকে মাটির দিকে। একটা শক্তি হচ্ছে বাতাস। এই বাতাস শক্তি দুটো কাজ করেÑ ঘুড়িকে ওপরে তোলা ও সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এই দুই শক্তির চেষ্টায় কোনাকুনি ওপরে উঠতে থাকে ঘুড়ি। ঘুড়ির তিন নম্বর শক্তিটা হচ্ছে সুতোর লাগাম। লাগাম ঘুড়ির টান ধরে রাখে। এই তিন শক্তির সাহায্যে আকাশে উড়াল দেয় ঘুড়ি। অনেকে ঘুড়িতে লেজ ঝুলিয়ে দেয়। ঘুড়িটা যাতে সুস্থির হয়ে ওড়ে সে জন্যই এই লেজ।

ঘুড়ি উৎসব দেশে দেশে
পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই ঘুড়ির উৎসব না থাকলেও ঘুড়ি উড়ানোর ঋতু আছে বৈকি। আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব মালয়েশিয়ায় খুবই ঘটা করে পালন করা হয়। The Pasir Gudang International Kites Festival শুধু মালয়েশিয়ার ঘুড়ি উৎসবের ঐতিহ্যেরই প্রতিনিধিত্ব করছে না, আমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ঘুড়িপ্রিয়দেরকে তাঁদের রঙবেরঙের নানা নকশা-আকৃতির ঘুড়ি উড়ানোর জন্য পাসির গুডাং জহর প্রদেশের আকাশে। মালয়েশিয়া বিচিত্র বর্ণের ঘুড়ি ও প্রজাপতির জন্য বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেছে বহু আগেই। এদেশে রয়েছে বারিবনের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যে কারণে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সমগ্র বিশ্ব থেকেই পর্যটকরা সারা বছরই ভ্রমণ করেন দেশটি। ঘুড়ি উৎসবও জাতীয় পর্যটন ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত একটি জনপ্রিয় বিষয়। এই উৎসবটিকে সার্থক করার জন্য মালয়েশিয়ার জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বতঃস্ফূূর্তভাবে সহযোগিতা করে থাকে। যেমন, Johor Tourism Action Council with the support of Ministry of Tourism Malaysia, Ministry of Culture Art and Heritage Malaysia, Ministry of Education Malaysia, Malaysia Kite Council and Johor Kite Association প্রভৃতি। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে ২০০২ সালে এখানে একটি ঘুড়ির জাদুঘরও স্থাপিত হয়েছে স্থানীয় পৌরসভার উদ্যোগে।
অন্যান্য দেশেও আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব এখন হর-হামেশাই হচ্ছে। কাজেই এক দেশের ঘুড়ি জায়গা করে নিচ্ছে আরেক দেশে। অক্টোবরের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয় ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব। আমাদের দেশে অবশ্য ঘটা করে এই উৎসব এখনো পালন শুরু হয়নি। তবে অনেক দেশেই এই উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবের একটা স্লোগানও আছেÑ এক পৃথিবীর এক আকাশ। দুনিয়ার সব মানুষই যে একে অপরের ভাই, অখণ্ড এক গ্রহের সন্তান, একই আকাশের নিচে বাস করেÑ আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব যেন সেটাই মনে করিয়ে দেয়। তবে শুনতে অবাক লাগবে, রাশিয়া আর আইসল্যান্ডের মানুষরা ঘুড়ি ওড়ানোর মজাটা পায় না। এই দু’দেশের মানুষ ঘুড়ি ওড়ায় না বললেই চলে।
ঘুড়ি বানানো এবং উড়ানো গ্রাম বাংলার একটি আবহমান সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিতে যেমন আছে বৈচিত্র্যময় ঘুড়ির সমাহার তেমনি ঘুড়ি নির্মাণের বিশেষজ্ঞ শ্রেণীর লোক, যারা বংশ পরম্পরায় ঘুড়ি বানানোর কৌশল রপ্ত করে।
পৌষ মাসের শেষ দিন নতুন ধানের চালের পিঠাপুলি খেয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে আনন্দ উৎসব করার রেওয়াজ বহু পুরনো। ঢাকায় এই উৎসব হচ্ছে প্রায় ৪০০ বছর ধরে। নগরীতে ঘুড়ি ওড়ানো বিনোদন শুরু হয়েছিল মুঘল আমলে। কারো কারো মতে সতেরো শতাব্দীর চল্লিশের দশকে নায়েব-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি ওড়ানো ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছিল। নবাব বাড়িতে ঘুড়ি ওড়ানো হতো। পুরো শহরে না হলেও পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর, ইসলামপুরসহ কয়েকটি এলাকায় এখনও পৌষসংক্রান্তির দিনে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব হয় প্রতি বছর।
দেশী ঘুড়ি নিয়ে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ঢাকাবাসী আয়োজন করে একটি ঘুড়ি উৎসব। ২০০৫ সাল থেকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থিত ছবির হাটের উদ্যোগে ঘুড়ি উৎসব শুরু হয়। তারা উৎসবটা করে সাগরপারে। এই উৎসবে সপ্তাহজুড়ে থাকে ঘুড়ি তৈরির কর্মশালা। প্যারাসুট কাপড়ের বিশাল বিশাল ঘুড়ি তৈরি করেন শিল্পীরা। ঘুড়িয়ালরা ঘুড়ি বানান। আর উড়িয়ালরা ঘুড়ি ওড়ান। উৎসবের দিন সকাল থেকেই সাগরপারের আকাশ ছেয়ে যায় সাপ, কাছিম, হাঙর, মৎস্যকন্যা, ডলফিনসহ নানা আকৃতির ঘুড়িতে। এখানে কোনো ঘুড়ি কাটাকাটি নেই। কেবল আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দ।
কাটাকাটি খেলা
কেবল ঘুড়ি উড়িয়েই কি সবটুকু মজা পাওয়া যায়! ঘুড়ি ওড়ানোর আসল মজা তো কাটাকাটির খেলার মধ্যে। তবে কাটাকাটি খেলার পেছনে রয়েছে এক বর্ণাঢ্য আয়োজন। যে সুতো দিয়ে এই ঘুড়ি ওড়ানো হয় সে সুতোকে খুব ধারালো করতে হয়। সাগু পানিতে গুলে জ্বালিয়ে তৈরিকৃত আঠার লেই-এর মধ্যে কাচের গুঁড়ো মিশিয়ে সেই আঠা লাটাইয়ের সুতোতে মাখিয়ে শুকিয়ে নেয়া হয়। এটাকে বলে সুতো মাঞ্জা দেয়া। সুতো যাতে সহজে নষ্ট না হয় সে জন্য আঠার লেইয়ের সাথে অনেক সময় তুতেও মেশানো হয়। মাঞ্জা দেয়া সুতো দিয়ে উড়ানো ঘুড়ির মধ্যে কাটাকাটি প্রতিযোগিতা ঘুড়ি খেলায় নিয়ে আসে প্রাণচাঞ্চল্য। তবে কেবল সুতো মাঞ্জা নয়, নানান রকম ঘুড়িও অনেকে বানিয়ে নেয়। তারপর নেমে পড়ে কাটাকাটি খেলায়। নির্মেঘ আকাশে বিকেলবেলা আকাশজুড়ে উড়তে থাকে নানা রকম ঘুড়ি। চলে কাটাকাটি খেলা। কোনো ঘুড়ি কাটা পড়লেই সেটার পেছনে ছুটতে থাকে অনেকে। কেটে যাওয়া ঘুড়ির পেছনে দৌড়াতে থাকা কিংবা গাছের ডালে আটকে থাকা ঘুড়ি ধরাও তখন হয়ে দাঁড়ায় এক বিশেষ প্রতিযোগিতা। অনেকের হাতে আবার কাটাপড়া ঘুড়ি ধরার যন্ত্রপাতিও থাকে এই সময়।
যত আবিষ্কার ঘুড়ি উড়িয়ে
ঘুড়ি ওড়ানো কেবল মজারই নয়, ঘুড়ি উড়িয়ে কত্ত কিছু যে উদ্ভাবন হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ঘুড়ি ওড়ানোর কৌশল থেকেই নাকি বিমান আবিষ্কারের বুদ্ধি এসেছিল রাইট ভাইদের। তার মানে ঘুড়িই তাদের আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। বিদ্যুতের আবিষ্কারও যে ঘুড়ি উড়িয়ে হয়েছে এটা অনেকেই জানো। ১৭৫২ সালের কথা। সেদিন ছিল মেঘলা আকাশ। কী নিয়ে যেন প্রিয়তমা স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হলো মার্কিন বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের। মনটা ভালো করার জন্য ঘুড়ি নিয়ে উঠলেন বাড়ির ছাদে। সিল্কের কাপড়ের তৈরি ঘুড়ির সঙ্গে কী মনে করে বেঁধে দিলেন ঘরের চাবি। ব্যস, আকাশের বিদ্যুৎ ফ্রাঙ্কলিনের চাবির মধ্য দিয়ে ভিজে সুতোর সাহায্যে নেমে এল মাটিতে। আবিষ্কার হলো বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ না থাকলে কী হতো একবার ভাবতে পারো? অথচ এই বিদ্যুৎ আবিষ্কার হলো কি না মামুলি ঘুড়ির সাহায্যে।
আরো অনেক আবিষ্কারের নেপথ্যে আছে ঘুড়ির অবদান। ১৭৪৯ সালে স্কটল্যান্ডের দুই বিজ্ঞান পড়–য়া আলেকজান্ডার উইলসন ও টমাস মেলভিন ঘুড়ির সঙ্গে থার্মোমিটার বেঁধে আকাশে উড়িয়ে দিলেন। আকাশের কত উচ্চতায় কত তাপমাত্রা থাকে তারা বের করেন। এর প্রায় দেড়’শ বছর পরের কথা। ঘুড়ির সঙ্গে অ্যানিমিটার বেঁধে আকাশে ওড়ালেন ইংল্যান্ডের ডগলাস আর্চিবল্ড। বিভিন্ন উচ্চতায় বাতাসের গতিবেগ মাপলেন তিনি। অনেকদিন পর্যন্ত এভাবেই বাতাসের গতিবেগ মাপা হতো।
যুদ্ধের কাজেও ঘুড়ির ব্যবহার হতো। একসময় বাক্স-ঘুড়িতে চেপে শত্রুপক্ষের গোপন শিবিরের ওপর নজরদারি চালাত ব্রিটিশ সেনাবাহিনী। জার্মানরাও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবমেরিন থেকে রেডিও অ্যান্টেনাসহ বাক্স-ঘুড়ি ওড়াত। তারপর বেতার সঙ্কেত পাঠাত তাদের সেনাশিবিরে। শত্রুপক্ষের গোপন দুর্গের ছবি তোলার কাজও করা হতো ঘুড়ি উড়িয়ে। ১৮৯৮ সালে আমেরিকা আর স্পেনের যুদ্ধে ক্যামেরা ঘুড়ির প্রচলন ছিল। তিব্বতে একসময় দুর্গম এলাকায় সেবা পৌঁছানোর জন্য খাঁচার মতো ঘুড়ি ব্যবহার করা হতো।
ঘুড়ির সাতকাহন
* ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব। উৎসবে হ্যারি অসবর্ন এবং অ্যাডমন্ড কমিউনিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা মিলে টানা ১৮০ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ঘুড়ি উড়িয়ে বিশ্ব রেকর্ড করে।
* ঘুড়ি উড়িয়ে আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে চীনারা। কারণ একটাইÑ তাদের বিশ্বাস উড়ন্ত ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে থাকলে দৃষ্টিশক্তি ভালো হয়।
* ১৮৮৮ সালে ফ্রান্সে ঘুড়িতে উঠে প্রথম ছবি তুলেছিলেন আর্থার বাটুট।
* ১৯৯০ সালের ১৮ নভেম্বর বিশ্বের দীর্ঘতম ঘুড়ি ওড়ানোর রেকর্ড গড়েন মাইকেল ট্রুইলেট ও তাঁর সঙ্গীরা। এদিন তাঁরা যে ঘুড়িটা ওড়ান তার দৈর্ঘ্য ছিল ১ হাজার ৩৪ মিটার বা ৩ হাজার ৩৯৪ ফুট।
* একসময় পূর্ব জার্মানিতে বড় আকারের ঘুড়ি ওড়ানো নিষিদ্ধ ছিল। কারণ কেউ যদি ঘুড়িতে চড়ে বার্লিন দেয়াল টপকে পশ্চিম জার্মানিতে চলে যায়!
* ঘুড়ি-কাটাকাটি খেলায় ৭৮টা নিয়ম আছে থাইল্যান্ডে।
* দুনিয়ার সবচেয়ে ছোট ঘুড়িটা লম্বায় মাত্র ৫ মিলিমিটার।
================================
কিশোর ফিচার- 'চাই চীনাবাদাম' by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া  আলোচনা- 'ধর্মীয় আবেগের আচ্ছাদনে রাজনীতি' by এবিএম মূসা অদ্ভুত ফিচার- 'সাপের সঙ্গে বসবাস'  কিশোর আলোচনা- 'দুর্ভাগা হিরোশিমা-নাগাসাকি' by মীর আমজাদ আলী কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'আবিষ্কার কাজী' by মাসুম বিল্লাহ  কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'ছায়াহীন আগন্তুক' by আমিনুল ইসলাম আকন্দ  কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'জায়ান্ট হান্টার' by মহিউদ্দিন আকবর  গল্প- 'হাসে বাঁকা চাঁদ' by আহসান হাবিব বুলবুল  গল্প- 'বড়বাড়ির জঙ্গলে' by শরীফ আবদুল গোফরান গল্প- 'পরিবর্তন' by বিশ্বাস আবুল কালাম গল্প- 'মিতুর জ্যোৎস্না রাত' by আবদুল্লাহ আল হোসাইন  গল্প- 'জিয়ানার আনন্দ-অভিমান' by বেগম রাজিয়া হোসাইন  গল্প- 'এক মুঠো স্বপ্ন' by কাজী রিচি ইসলাম  গল্প- 'মাটির গন্ধ' by জুবায়ের হুসাইন  গল্প- 'বোকাইকে কেউ বুঝি ডাকলো' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ  গল্প- 'নাকিবের একা একা ঝিল দেখা' by হারুন ইবনে শাহাদাত  গল্প- 'উসামার বায়না ও আইলার জন্য ভালোবাসা' by চেমনআরা  গল্প- 'উরুমকিতে আর্তনাদ' by আহমদ মতিউর রহমান  গল্প- 'টবের গোলাপ' by দিলারা মেসবাহ  রম্য গল্প- 'তুচ্ছ ঘটনা' by মোহাম্মদ লিয়াকত আলী  গল্প- 'নদী কত দূর' by অজিত হরি সাহু, অনুবাদ- হোসেন মাহমুদ


কিশোরকন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ মাসুম কবির


এই ফিচার'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.