তেলের ডিপো থেকে অবরোধকারীদের হটিয়ে দিয়েছে পুলিশ

ফ্রান্সে বেশ কয়েকটি জ্বালানি তেলের ডিপো থেকে অবরোধকারীদের গতকাল বুধবার হটিয়ে দিয়েছে পুলিশ। প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির সংস্কার কর্মসূচির প্রতিবাদে সে দেশে গত সপ্তাহ থেকে তেল ডিপোগুলোতে ধর্মঘট ডেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছেন সেখানকার শ্রমিক-কর্মচারীরা। দেশটির সরকার সতর্ক করে বলেছে, ধর্মঘট-অবরোধ দীর্ঘায়িত হলে দেশের অর্থনীতি দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু তাতে অব্যাহত এই বিক্ষোভ বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সংস্কারের ব্যাপারে গতকাল পর্যন্ত সরকারেরও অবস্থান বদলানোর কোনো ইঙ্গিত মেলেনি।
প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজির সরকারের নেওয়া পেনশন সংস্কার কার্যক্রমে সরকারি কর্মীদের অবসর নেওয়ার বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত এর বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানাতে ফ্রান্সজুড়ে কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে ধর্মঘট ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন শ্রমিক সংঘ।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তেল ডিপোতে ধর্মঘটের কারণে তেল সরবরাহ-ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়। এতে গত মঙ্গলবার দেশটির এক-তৃতীয়াংশ ফিলিং স্টেশন জ্বালানি তেলশূন্য হয়ে পড়ে। তেল ডিপো থেকে অবরোধকারীদের হটিয়ে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক লাখ আন্দোলনকারী রাজপথে নেমে আসে। গতকাল সকালেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকচালক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা ‘ধীরে চলো’ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এর আগে এক বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীদের অবরোধ ভেঙে তেল ডিপোগুলো মুক্ত করার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট সারকোজি। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ দ্রুত বন্ধ করা না হলে দেশের অর্থনীতির ওপর এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং চাকরিসহ স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রাইস হোর্তেফ্যুঁ বলেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশে তিনটি তেলের ডিপো শান্তিপূর্ণভাবে আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে আরও বেশ কয়েকটি ডিপো অবরোধ করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এসব তেল ডিপো অবরোধমুক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখব আমরা। আমরা দেশকে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে দিতে পারি না।’ ফ্রান্সের বিভিন্ন স্থানে মোট ১২টি জ্বালানি তেলের ডিপো রয়েছে।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রায়ত্ত রেল কোম্পানি এসএনসিএফ জানিয়েছে, শ্রমিক-কর্মচারীদের অব্যাহত ধর্মঘট ও বিক্ষোভে ট্রেন চলাচল মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। এক-তৃতীয়াংশ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। দেশটির বিমান চলাচলও মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। ফ্রান্সের প্রধান বিমানবন্দর শার্ল দ্য গলের শ্রমিকেরা বিমানবন্দরের প্রবেশপথ অবরোধ করে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর ওরলিতে চার ভাগের এক ভাগ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
সারকোজির সরকারের সংস্কার প্রস্তাবে অবসর নেওয়ার পর পূর্ণ অবসর ভাতা পাওয়ার বয়সসীমাও ৬৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৭ বছর করার কথা বলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এই সংস্কার প্রস্তাব ফ্রান্সের সিনেটে তোলার কথা। শ্রমিক সংঘগুলো জানিয়েছে, সরকারের বাণিজ্য-ঘাটতি কাটাতে তারা বিকল্প প্রস্তাব দিলেও সরকার তাদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা আলোচনায় বসতে চাইছে না। গত এক সপ্তাহের বিক্ষোভে পুলিশ এক হাজার ৪২৩ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে।

No comments

Powered by Blogger.