কিশোর ফিচার- 'চাই চীনাবাদাম' by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া

বাদামজাতীয় খাবারের নাম উঠলে চীনাবাদাম একলাফে চলে আসে এক নম্বরে। অনেক দেশেই ছেলে-বুড়ো সবার অতি প্রিয় খাবার ভাজা চীনাবাদাম।
স্টেডিয়ামে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলা চলছে, উত্তেজনা তুঙ্গে, এমন সময় মজে থাকা দর্শক নিজের অজান্তে যে খাবারটি সাবড়ে ফাঁকা ঠোঙা হাতড়ে বেড়ায়, তা ওই চীনাবাদাম।
গল্পের তুফান চলছে কোনো আসরে, এর মধ্যে যে দানাটি গল্পবাজদের দাঁতের নিচে ভাঙছে, রসনা মেটাচ্ছে, সে ওই চীনাবাদাম। মুখরোচক ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে চীনাবাদামের সমাদরের এমন উদাহরণ টানা যায় ভূরি ভূরি।
নামের ‘চীনা’ শব্দটি যুক্ত হলেও আসলে এটি চীনের বাদাম নয়। অর্থাৎ, এর আদি উৎপত্তি চীনে নয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, চীনাবাদাম প্রথম জন্মে দক্ষিণ আমেরিকায়। পেরুর লিমার কাছে পাওয়া প্রাচীন পাত্রে চীনাবাদাম পাওয়া গেছে। ইনকা সভ্যতার নিদর্শন এমন কিছু পাত্রের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যেগুলোর আকৃতি চীনাবাদামের মতো। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সে যুগের মানুষ চীনাবাদামের সঙ্গে পরিচিত ছিল।
ইউরোপে চীনাবাদাম প্রথম আসে স্পেনের অভিযাত্রীদের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীরা চীনাবাদাম আফ্রিকায় নিয়ে যান। চীনাবাদামের বিনিময়ে আফ্রিকা থেকে তাঁরা হাতির শুঁড় ও মসলা নিয়ে যেতেন। একইভাবে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে চীনাবাদাম এশিয়ায় আসে এবং দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
ক্রীতদাসদের মাধ্যমে চীনাবাদাম আফ্রিকা থেকে উত্তর আমেরিকায় যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধে আগে চীনাবাদাম খাওয়ার প্রচলন থাকলেও তখন এটি মূলত ছিল গরু ও শূকরের খাবার। যুদ্ধের সময় যখন চারদিকে অভাব দেখা দেয়, কিছু সেনা বিকল্প খাবারের দিকে হাত বাড়ান, তখন চীনাবাদামের কদর বেড়ে যায়।
গৃহযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের একটি সার্কাস দলের মালিক পি টি বারনাম সার্কাসের প্রদর্শনী চলাকালে ভাজা চীনাবাদাম বিক্রি শুরু করেন। দর্শকেরা এই বাদাম খেয়ে মজা পেয়ে যায়। দিন দিন বাড়তে থাকে ভাজা বাদামের বিক্রি। পরে তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
সকাল ও বিকেলের নাশতায় অনেকেই পাউরুটি বা অন্য কোনো খাবারের সঙ্গে সুস্বাদু ‘পিনাট বাটার’ লাগিয়ে খায়। এটি চীনাবাদামের মাখন। প্রায় ১০০ বছর আগে এই মাখনের জন্ম। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির সেন্ট লুইয়ে ছিলেন একজন চিকিৎসক। বুড়োদের চিকিৎসাসেবা দিতেন তিনি। বুড়োরা অনেকেই পেটের সমস্যায় ভুগতেন। এই চিকিৎসা করতে গিয়ে একদিন চিকিৎসক ভাবলেন, বাদাম বেটে মাখন বানিয়ে খাওয়ালে কেমন হয়? তা ছাড়া এই মাখনের পুষ্টিও কাজ দেবে বুড়োদের শরীরে। যেই ভাবা, সেই কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে পেটের অসুখে ভোগা বয়স্ক লোকদের একে একে চীনাবাদামের মাখন খাওয়াতে লাগলেন তিনি। সুফল পাওয়া গেল। এর পর থেকে সারা দেশ এবং পরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল ‘পিনাট বাটার’।
যুক্তরাষ্ট্রে চীনাবাদাম কতটা জনপ্রিয়, কিছু তথ্য তুলে ধরলে তা বোঝা যাবে। এক জরিপে দেখা গেছে, সে দেশে প্রতিবছর একজন নাগরিক গড়ে ছয় পাউন্ড করে চীনাবাদাম খেয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের নয়টি অঙ্গরাজ্যের অন্যতম প্রধান ফসল চীনাবাদাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় জর্জিয়ায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক জর্জ ওয়াশিংটন কার্ভার চীনাবাদামের গাছ দিয়ে ৩০০টি জিনিস উদ্ভাবন করেন। এর মধ্যে রয়েছে শ্যাম্পু, পনির, প্লাস্টিক, দাড়ি কামানোর সাবান, কালি ও আইসক্রিম। উচ্চবিদ্যালয় পার হতে হতে একজন মার্কিন নাগরিক গড়ে এক হাজার ৫০০টি চীনাবাদামের মাখন দেওয়া পাউরুটি খেয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ প্রতিবছর গড়ে ৮০ কোটি পাউন্ড পিনাট বাটার খায়।
===============================
আলোচনা- 'ধর্মীয় আবেগের আচ্ছাদনে রাজনীতি' by এবিএম মূসা  অদ্ভুত ফিচার- 'সাপের সঙ্গে বসবাস'  কিশোর আলোচনা- 'দুর্ভাগা হিরোশিমা-নাগাসাকি' by মীর আমজাদ আলী কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'আবিষ্কার কাজী' by মাসুম বিল্লাহ  কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'ছায়াহীন আগন্তুক' by আমিনুল ইসলাম আকন্দ  কল্পিত বিজ্ঞান কাহিনী- 'জায়ান্ট হান্টার' by মহিউদ্দিন আকবর  গল্প- 'হাসে বাঁকা চাঁদ' by আহসান হাবিব বুলবুল  গল্প- 'বড়বাড়ির জঙ্গলে' by শরীফ আবদুল গোফরান গল্প- 'পরিবর্তন' by বিশ্বাস আবুল কালাম গল্প- 'মিতুর জ্যোৎস্না রাত' by আবদুল্লাহ আল হোসাইন  গল্প- 'জিয়ানার আনন্দ-অভিমান' by বেগম রাজিয়া হোসাইন  গল্প- 'এক মুঠো স্বপ্ন' by কাজী রিচি ইসলাম  গল্প- 'মাটির গন্ধ' by জুবায়ের হুসাইন  গল্প- 'বোকাইকে কেউ বুঝি ডাকলো' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ  গল্প- 'নাকিবের একা একা ঝিল দেখা' by হারুন ইবনে শাহাদাত  গল্প- 'উসামার বায়না ও আইলার জন্য ভালোবাসা' by চেমনআরা  গল্প- 'উরুমকিতে আর্তনাদ' by আহমদ মতিউর রহমান  গল্প- 'টবের গোলাপ' by দিলারা মেসবাহ  রম্য গল্প- 'তুচ্ছ ঘটনা' by মোহাম্মদ লিয়াকত আলী  গল্প- 'নদী কত দূর' by অজিত হরি সাহু, অনুবাদ- হোসেন মাহমুদ


প্রথম আলো এর সৌজন্যে
লেখকঃ রেঞ্জার রিক সাময়িকী অবলম্বনে শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া


এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.