সমালোচনায় মুখর চীনেরই মানবাধিকারকর্মীরা

শান্তিতে নোবেল পাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী রাতারাতি পরিচিতি পেয়ে গেছেন চীনের কারাবন্দী ভিন্নমতাবলম্বী নেতা লিউ সিয়াওবো। কিন্তু তাঁকে নোবেল দেওয়ার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন চীনেরই অনেক মানবাধিকারকর্মী। তাঁরা বলছেন, লিউ এই পুরস্কারের উপযুক্ত নন।
৫৪ বছর বয়সী লিউকে গত বছর ডিসেম্বরে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেন চীনা আদালত। ২০০৮ সালে চার্টার ২০০৮ শিরোনামে একটি মেনিফেস্টো প্রকাশ করার দায়ে তাঁকে এই শাস্তি দেওয়া হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে চীনের অনেক বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও লেখক ওই মেনিফেস্টোতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এ ছাড়া ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে চার দফায় কারাভোগ করেন লিউ।
চীনে আধুনিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জনক বলে ধরা হয় ওয়েই জিংশেংকে। প্রায় দুই দশক তিনি কারাবন্দী জীবন কাটিয়েছেন। ওয়েই বলেন, নোবেল কমিটির কাছে লিউয়ের গ্রহণযোগ্যতাই বেশি এবং বেইজিং কর্তৃপক্ষের কাছেও। কেননা তিনি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আন্দোলন করেছেন। তবে লিউ সত্যিকার অর্থে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি।
ওয়াশিংটনে বসবাসকারী ওয়েই বলেন, লিউ ছাড়াও চীনের হাজার হাজার মানুষ নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। তাঁদের মধ্যে আছেন নিখোঁজ মানবাধিকার আইনজীবী গাও ঝিশেং এবং চীনের এক সন্তান নীতির প্রবঞ্চনার বিষয়টি তুলে ধরা চেন গুয়াংচেং।
প্রবাসী চীনাদের একটি অংশও লিউকে শান্তি পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে নোবেল কমিটিকে চিঠি দিয়েছে। প্রবাসীদের এই অংশটির অন্যতম সংগঠক দিয়ানে লিউ। তিনি জানান, চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম বড় দৃষ্টান্ত ফালুনগং আন্দোলনকারীদের ওপর নির্মম নির্যাতন। অথচ এ বিষয়টিকে লিউ কখনো গুরুত্ব দেননি।
দিয়ানে লিউ বলেন, যাঁরা মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেন, নোবেল পুরস্কার তাঁদের জন্য। লিউ সেই ব্যক্তি নন। পশ্চিমারা চীনা ভাষা পড়তে পারে না, এ জন্য তিনি তাঁদের ধোঁকা দিতে পেরেছেন। পশ্চিমারা জানে না, কত কৌশলে কমিউনিস্টরা এ দেশ শাসন করছে।’
ওয়াশিংটনভিত্তিক চীনের আরেক মানবাধিকারকর্মী হ্যারি উই। প্রায় দুই দশক তিনি আটক ছিলেন চীনের লেবার ক্যাম্পে। উই বলেন, ‘লিউ কোনো দলকে সংগঠিত করেননি। কোনো পদক্ষেপও তিনি নেননি। তিনি শুধু তাঁর আদর্শের কথা জানিয়েছেন। আর তাতেই তাঁকে ১১ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, দেশের অবস্থা কী এবং আমরা কী করতে পারি।’
ভ্যানকুভারে ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ টিমোথি চেক জানান, চীনের অসংখ্য মানবাধিকারকর্মীর মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিয়ে বিদ্বেষের মুখে পড়েছে নোবেল কমিটি। তবে কারাগারে বন্দী থাকায় লিউ একটি বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন, যেটা ওয়েই জিংশেং বা হ্যারি উই পাননি।
চেক বলেন, লিউ সিয়াওবো চীনের একজন অন্যতম বুদ্ধিজীবী। কেননা তিনি একই সঙ্গে দুটি কাজ করেছেন। সরকারের সমালোচনা করেছেন আবার একই সঙ্গে চীনেও থেকেছেন।
স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ: হংকংভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, লিউ সিয়াওবোর স্ত্রী লিউ সিয়া গতকাল রোববার তাঁর স্বামীর সঙ্গে দেখা করেছেন। গত শুক্রবার পুরস্কার ঘোষণার পরপরই সিয়া জানিয়েছিলেন, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরটি স্বামীকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশ তাঁকে কারাগারে নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু এরপর থেকেই তাঁর ফোন বন্ধ ছিল এবং তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

No comments

Powered by Blogger.