উদ্বেগে মার্কিন আইন প্রণেতারা by ইব্রাহীম চৌধুরী

অভিবাসী মুসলমানদের মধ্যে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্র পাওয়া গেলে নাগরিকত্ব বাতিলসংক্রান্ত প্রস্তাব তারা কংগ্রেসে উত্থাপন করেছেন। সম্প্রতি বেশ কিছু জঙ্গি তৎপরতাসংশ্লিষ্ট ঘটনা এই আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, অভিবাসনসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া ব্যক্তিরাই জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে মুসলিম দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে গত সপ্তাহে ব্যর্থ গাড়িবোমা হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ফায়সাল শাহজাদ অভিবাসনসূত্রে মার্কিন নাগরিক। এর আগে আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন আফিফা সিদ্দিকী। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই বিজ্ঞানীও অভিবাসনসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। গত বছর টেক্সাসে সেনাঘাঁটিতে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে সেনাসদস্যদের হত্যার নায়ক ছিলেন মেজর নাদেল হাসান। তিনিও অভিবাসনসূত্রে মার্কিন নাগরিক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গিনেতা আনোয়ার আল আওলাকি। ইয়েমেনের ধর্মীয় এই নেতাও অভিবাসনসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
কানেকটিকাট থেকে নির্বাচিত সিনেটর জোসেফ লিবারম্যান ও ম্যাসাচুসেটস থেকে সদ্য নির্বাচিত সিনেটর স্কট ব্রাউন সম্প্রতি যৌথভাবে ‘টেররিস্ট এক্সপার্টিয়েশন অ্যাক্ট’ নামে একটি প্রস্তাব কংগ্রেসে উপস্থাপন করেছেন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আল-কায়েদাসহ আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে অভিবাসনসূত্রে পাওয়া মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে। স্কট ব্রাউন বলেন, ‘যুদ্ধ এখন নতুন মাত্রা পেয়েছে। নাগরিকত্ব গ্রহণ করার পরও যদি কেউ যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়, তাহলে তার নাগরিকত্ব বাতিলে আমাদের সাহায্য করা উচিত।’
পেনসিলভানিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জ্যাসন আলটমায়ার ও রিপাবলিকান চার্লিডেন্ট পৃথক একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং সামরিক আদালতে তাদের বিচার করা যাবে।
এসব প্রস্তাব নিয়ে প্রভাবশালী আইনপ্রণেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন পেনসিলভানিয়া বলেছেন, মার্কিন নাগরিকত্ব একটি ‘প্রাপ্তি’, ‘অধিকার নয়’। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব গ্রহণ করার সময় নেওয়া শপথ ভঙ্গকারীদের ব্যাপারে রাষ্ট্র যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য আইনের বিস্তারিত বিবরণী পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
ওহাইও থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা জন এ বয়েনার বলেছেন, নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে কি না, তা দেখতে হবে। ব্যক্তি গুরুতর দণ্ডে দণ্ডিত না হওয়া পর্যন্ত নাগরিকত্ব বাতিলসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন সংবিধান অনুযায়ী কঠিন হয়ে পড়বে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক পিটার চাক বলেন, মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এ ক্ষেত্রে হয়তো একটি পদক্ষেপ নিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.