সরকারে স্থান পাওয়ার মূল্য

একসঙ্গে মিলে সরকার গঠনের জন্য লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের প্রতি ‘বড়, উন্মুক্ত ও সমন্বিত’ প্রস্তাব দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডেভিড ক্যামেরন। গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে তাঁর দল সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হওয়ার পর তিনি এই প্রস্তাব দেন। এ ব্যাপারে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের নেতা নিক ক্লেগের সঙ্গে ক্যামেরন বৈঠকও করেছেন। ক্যামেরনের প্রস্তাব নিয়ে এখন আলোচনা শুরু হয়েছে লিব ডেম শিবিরে।
ডেভিড ক্যামেরন যখন প্রস্তাব দিলেন, তাঁরা লিবারেল ডোমোক্র্যাটস দলের নির্বাচনী ইশতেহারের বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়ন করবেন, তখন নিশ্চয়ই লিব ডেম নেতারা খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের সেই খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কারণ, বিভিন্ন বিষয়ে ভালো ভালো কথা বললেও ক্যামেরন নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার করার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেননি।
নির্বাচনী প্রচার চলার সময় তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নির্বাচনে কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে তিনি কী করবেন। জবাবে ক্লেগ বলেছিলেন, সবচেয়ে বেশি আসনে যারা জিতবে এবং সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, তাদেরই সরকার গঠনের সুযোগ পাওয়া উচিত।
শুক্রবারও ক্লেগ বলেছেন, ‘কনজারভেটিভ পার্টি প্রমাণ করেছে, জাতীয় স্বার্থে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব চাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে।’ এই বক্তব্যের অর্থ দাঁড়ায়, কনজারভেটিভ পার্টিকে তিনি আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে সরকার গঠনের জন্য আলোচনায় বসার ব্যাপারে ক্যামেরন তাঁকে প্রস্তাব দেন।
এ ক্ষেত্রে গর্ডন ব্রাউনের অবস্থান কী হবে? নির্বাচনের পরপরই ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করে দিয়েছেন, তাঁর পদত্যাগ করার পরিকল্পনা নেই। শুক্রবার ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনিও জোট সরকার গঠনের জন্য নিক ক্লেগের প্রতি প্রস্তাব দেন। তিনি অর্থনীতি ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও লেবার পার্টির একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কথাও উল্লেখ করেন।
ক্যামেরনের সঙ্গে ক্লেগের সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হলে ফুল হাতে লিবারেল ডেমোক্র্যাটসদের দরজায় কড়া নাড়তে প্রস্তুত ব্রাউন। সঙ্গে থাকছে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার বাস্তবায়নে সরকার গঠনের পরপরই আইন করার প্রতিশ্রুতি। তবে ব্রাউনের এখনো কড়া নাড়ার সুযোগ আসেনি। টোরি আর লিব ডেমদের মধ্যে আলোচনা চলছে।
নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা একটি পর্যালোচনা কমিটি করার প্রস্তাব দিয়েছেন। লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল যা চায়, এই প্রস্তাব তার তুলনায় অপর্যাপ্ত। টোরি দলের নেতারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি, লেবার পার্টির সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ভোটিং পদ্ধতি পরিবর্তন করার জন্য জেনকিংস কমিশন স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ওই কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।
তবে দুই দলের মধ্যে বেশ কিছু বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে। দুই দলই পরিচয়পত্রসংক্রান্ত পরিকল্পনা বাতিল করতে চায়। এ ছাড়া ধনী ও গরিবের বৈষম্য কমাতে ইংল্যান্ডে ‘পিউপিল প্রিমিয়াম’ (শিক্ষার্থী ভাতা) চালু করার কথাও রয়েছে দুই দলের নির্বাচনী ইশতেহারে। তবে করনীতি নিয়ে উভয় দলের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। এ ব্যাপারে আরও আলোচনা করার কথা বলেছেন ক্যামেরন।
সবশেষে বলা যায়, নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। জনগণ তাঁদের রায় জানিয়েছেন। এখন সময় হয়েছে রাজনীতিকদের জবাব দেওয়ার।

No comments

Powered by Blogger.