শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি -আঞ্চলিক বৈষম্য বা দলীয়করণ কাম্য নয়

ছয় বছর বন্ধ থাকার পর এক হাজার ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির খবর নিঃসন্দেহে আনন্দদায়ক। এতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার যেমন অবসান হয়েছে, তেমনি শিক্ষার প্রতি বর্তমান সরকারের আগ্রহ-একাগ্রতাও পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও সাধ ও সাধ্যের বিরাট ফারাক ছিল। সাত হাজার ৫৫৩টি আবেদনপত্রের মধ্যে অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক-সপ্তমাংশেরও কম। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা দেখে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে সরকার কোনো কোনো এলাকার প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েছে। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো বিবেচনায় যদি এটি হয়ে থাকে, তবে তা খুবই দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই ব্যাখ্যা বিবেচনায় নিয়ে আমরা যা বলতে চাই তা হচ্ছে, বৈষম্য কমাতে গিয়ে যেন নতুন করে বৈষম্য তৈরি করা না হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীর এলাকায় বেশিসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তিও ভালো দৃষ্টান্ত নয়। কেননা, তাঁরা নির্দিষ্ট এলাকা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেও মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গোটা দেশকেই প্রতিনিধিত্ব করেন। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ করবে, কেবল তাদের আবেদনপত্রই বিবেচনা করা যেতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। প্রয়োজনে ঘোষণা করতে হবে, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে তদবির করা হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায়ই আনা হবে না।
বিএনপির আমলে গোপালগঞ্জ বা হবিগঞ্জকে এমপিওভুক্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়ে থাকলে তা অবশ্যই দুঃখজনক। সেটার প্রতিকার করতে গিয়ে আবার নতুন করে বৈষম্য তৈরি করাও অগ্রহণযোগ্য। শিক্ষাকে দলীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী যদিও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির অর্থ এই নয় যে সেটি সব সময়ের জন্য এমপিওভুক্ত থাকবে। দেশবাসী বাস্তবেও তাঁর বক্তব্যের প্রতিফলন দেখতে চাইবে। এ ছাড়া তিনি চার মাস পরই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এবার যেসব এলাকার কম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে, ভবিষ্যতে সেসব এলাকা বেশি অগ্রাধিকার পাবে বলে আশা করি।
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তির আগ পর্যন্ত লেখাপড়া ভালো হলেও পরে গা ছাড়া ভাব লক্ষ করা যায়। এর পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য নিবিড় তদারকি থাকতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রতিবছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি হলে সরকারের ওপর চাপও কমবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ব্যাপারেও একটি স্থায়ী নীতিমালা থাকা প্রয়োজন, যাতে ক্ষমতার হাতবদলের সঙ্গে সঙ্গে তা বদলে না যায়। সবশেষে নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন রইল, একই সঙ্গে এও প্রত্যাশা থাকবে, লেখাপড়ায় নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করবে, শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে মনোযোগী হবেন এবং শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফল করে দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে অবদান রাখবে।

No comments

Powered by Blogger.